শীতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা বাড়তে থাকে। অনেকের হাত, পা, কোমর ও ঘাড় ব্যথায় আক্রান্ত হয়। মূলত, যাঁদের বয়স বেশি, তাঁরাই এ ব্যথায় ভোগেন। তবে যেকোনো বয়সের মানুষই এ ধরনের ব্যথায় ভুগতে পারে। বিশেষ করে যারা হাড়ক্ষয় এবং আগে থেকেই আঘাতপ্রাপ্ত, তাদের শীতের শুরুতেই অনেক বেশি সচেতন হয়ে যাওয়া উচিত।
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান তামান্না চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিকস, হ্যান্ড অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান তামান্না চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিকস, হ্যান্ড অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ
এ ধরনের রোগের উপসর্গ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ইজোরাল মাপস স্বাস্থ্য আলাপন’। অনুষ্ঠানটির ষষ্ঠ পর্বে আলোচনা করা হয় শীতকালে হাত-পায়ে ব্যথা প্রতিরোধে করণীয় ও শীতকালে আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার ব্যবস্থা নিয়ে। এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান তামান্না চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিকস, হ্যান্ড অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ।
অনুষ্ঠানটি ৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রচারিত হয় এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শীতকালে হাত-পায়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ বলেন, শীতে শরীরে জড়তা বেশি থাকে। গরমে আবার শরীর অনেক বেশি রিলাক্স বা ফ্লেক্সিবল থাকে।
ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ বলেন, শীতে বাতাসের চাপ কমে যায়। সঙ্গে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। শীতকালে নিশ্বাসের সঙ্গে অল্প পরিমাণ অক্সিজেন পাওয়া যায়, যাতে শরীর আরও বেশি স্থবির হয়ে পড়ে। এ কারণে শীতে হাত ও পায়ের দিকে রক্তসঞ্চালন কমে যায়। এ কারণে জয়েন্টগুলোয় প্রদাহ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যথা হয়। ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য অনেক সময় জয়েন্ট ও মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
আরও একটি লক্ষণীয় বিষয় ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ উল্লেখ করেন, শীতকালে শরীরে অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন ডির পরিমাণ হ্রাস পায়। কারণ, এ সময় দিন ছোট। আবার সকাল ১০টার পর যে রোদ হয়, তা শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করে না। এর অভাবে যা মুড বা ভাব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা সৃষ্টি করে। আবার যাঁরা অবেসিটিতে ভুগছেন, শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের এ ধরনের ব্যথা বেড়ে যায়। ভিটামিন ডির অভাব শুধু হাড়ের ব্যথা বাড়ায় না, এটি বর্তমানে করোনা প্রতিরোধেও কার্যকর। আমরা দেখেছি, যাদের শরীরে ভিটামিন ডি, সি, ইর অভাব, তাদের করোনা আক্রমণ করলে ক্ষতিটা বেশি হয়।
এরপর ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ আলোচনা করেন ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ে। তিনি বলেন, কিছু কিছু ফল বা সবজি রয়েছে, যেগুলো খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়বেই। তবে একটু সচেতন হয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ইউরিক অ্যাসিড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যেমন বেশি চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে—গরু, খাসি, ভেড়া মহিষ ইত্যাদি প্রাণীর মাংস। সব রকমের ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। কিছু কিছু শাকসবজি খাওয়া যাবে না। যেমন: পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, ঢ্যাঁড়স, পাকা টমেটো। আমাদের দেশে অনেক রোগী আছেন, যাঁরা একবার ডাক্তার দেখানোর পর অনেক দিন পর্যন্ত একই উপসর্গের একই ওষুধ সেবন করেন। এটি উচিত নয়। ওষুধও আপডেট হয়। তাই সব সময় উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া।
শীতে হাত, পা বা গাঁটের ব্যথা থেকে পরিত্রাণের বিষয়ে ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ বলেন, ব্যথার জায়গাগুলোয় দিনে অন্তত দুবার গরম সেঁক দিলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। যথেষ্ট গরম কাপড় পরে শীত থেকে হাড় ও জয়েন্টকে রক্ষা করতে হবে। হালকা ব্যায়াম এই ব্যথা উপশমে বেশ কার্যকর। বাইরে যাওয়া সম্ভব না হলে ঘরেই ব্যায়াম করতে হবে। যাদের আগে থেকেই এ ব্যথা আছে, তাদের শীতকালে কঠোর ব্যায়াম না করাই ভালো। শীতকালে উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে আরথ্রাইটিস বা বাত ব্যথার তীব্রতা কমে আসে। এ জন্য সতেজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত। গাজর, শসা, মুলা ইত্যাদি সবজি ব্যথা সৃষ্টিকারী পদার্থকে শরীর থেকে সহজেই বের করে দেয়। এ সময় রসুন খুব উপকারী। এতে ব্যথা কমানোর উপকরণ রয়েছে। সকালে খালি পেটে রসুন খেলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জোড়ায় রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে বলে ব্যথা অনেকাংশে কম অনুভূত হয়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, এ এবং সি সেবন করতে হবে।
সবশেষে ব্যথা হলেই ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাশ। তবে ব্যথা হলেই সচেতন থাকতে হবে। কারণ, ব্যথা অনেক গুরুতর রোগের উপসর্গ। ব্যথাকে উপেক্ষা করা চলবে না। বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A7%9F