আমাদের দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলমান, না কি আসন্ন, এ নিয়ে নানা দ্বিমত থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন। এ নিয়ে সবাই একমত। করোনার উপসর্গও বদলেছে। তাই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও সচেতনতা।
করোনায় রোগীদের নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা ও এর প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ের সুরক্ষা’। অনুষ্ঠানটির পঞ্চম পর্বে ডা. বিলকিস ফাতেমার সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. তৌফিকুর রহমান ফারুক।
করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তৌফিকুর রহমান বলেন, শুরুতে করোনার যে ধরনের উপসর্গ দেখা যেত, এখন তার ধরন পাল্টেছে। আগে তীব্র জ্বরের সঙ্গে সর্দি, গলাব্যথা, স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যেত। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব উপসর্গই রয়েছে, তবে এর তীব্রতা কম। সে জন্য অনেকেই মনে করেন একটু জ্বর-ঠান্ডা, এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু উপসর্গ কম হলেও হঠাৎ করেই জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে।
ডা. তৌফিকুর রহমান ফারুক, বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মানিকগঞ্জের
আবার ইদানীং আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে যেটা বেশি দেখা যাচ্ছে, তা হলো উদাসীনতা। করোনাকে ভয় না পাওয়ার একধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে, যার জন্যে তৈরি হচ্ছে নানা সংকট। হঠাৎ করে মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করাই এর প্রধান কারণ।
প্রফেসর তৌফিকুর রহমান আলোচনা করেন করোনায় রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা ও প্রতিকার নিয়ে। তিনি বলেন, রক্ত জমাট বাঁধা একটি পুরোনো রোগ। অনেক আগে থেকেই নানা কারণে মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধে। এই অবস্থায়, ধমনির মধ্যে রক্ত জমে কুণ্ড বা দলায় পরিণত হয়। একবার জমাট বাঁধা রক্তের দলাটি সরু অববাহিকা অথবা রক্তজালিকার মধ্যে আটকে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে এবং তার উপসর্গ কেমন হবে, তা নির্ভর করে কোন অঙ্গের অববাহিকা বন্ধ হয়েছে, তার ওপর। রক্ত জমাট বাঁধা রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো পা ফোলা, পায়ে খিঁচ ধরা, প্রচণ্ড ব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে অসুবিধা, দ্রুত শ্বাস ইত্যাদি। রক্ত জমাট বাঁধা রোগের সাধারণ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন বংশগত ভিটামিন কে-এর অভাব, যকৃতের রোগ বা যকৃতের বিকলতা, কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলেও এ রোগ হতে পারে। তবে করোনায় আক্রান্ত হলে এর সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহু গুণ।
ভাইরাসের সংক্রমণে দেহের গভীর শিরাগুলোয় থ্রম্বোসিস তৈরি হয়, যা সাধারণত পায়ের শিরায় দেখা যায়। এভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরার জায়গায় জায়গায় আটকে পড়ে কিংবা সেগুলো যদি টুকরা বা ক্ষুদ্র হয়ে ভেঙে ফুসফুসের দিকে যায়, তখন তা রক্ত চলাচল আটকে দিয়ে জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রক্ত জমাট বাঁধার তেমন কোনো উপসর্গ নেই। আবার যখন বোঝা যায় যে রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধছে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই রক্ত তরল করার ওষুধ প্রয়োগ করতে বলা হয়। তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। রোগী নিজে নিজে এই ওষুধ গ্রহণ করলে অন্য জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আবদুল্লাহ সাফি মজুমদার বলেন, এগুলো খুবই স্বল্পমাত্রার ওষুধ। তাই সাধারণত এর কোনো দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।
করোনাকালীন সতর্কতা নিয়ে তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘এ জন্য কঠোরভাবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সরকারও প্রতিনিয়ত বিষয়টি প্রচার করছে। বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপও হাতে নিয়েছে, যেমন ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কার্যক্রম। অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া কোনো সেবা দেওয়া হবে না। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই, এটি কোনো কারণে এখনো আমরা মানতে নারাজ। আমাদের কাছে এখনো কোনো ভ্যাকসিন নেই। তাই প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না আমরা।’
করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্র ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। করোনা রোগী থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তাই বাড়িতে করোনা রোগী থাকলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব হলো রোগীর সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। এর প্রতিরোধে সচেতন হওয়াই এখন পর্যন্ত কার্যকর উপায়। এ জন্য ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে; অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে; ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে; হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।
Video Link:
https://www.facebook.com/watch/?v=3786506428060339Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%9F-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%9F%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%A8