অন্বেষণে অন্তিম

Author Topic: অন্বেষণে অন্তিম  (Read 4592 times)

Offline Badshah Mamun

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1997
    • View Profile
    • Daffodil International University
অন্বেষণে অন্তিম
« on: January 06, 2021, 04:01:48 PM »
অন্বেষণে অন্তিম


মাও দুন সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী চিউ দাকসিনের প্রকাশিত সর্বশেষ উপন্যাস ‘দ্য স্কাই গেটস ডার্ক, স্লোলি’ (আকাশ অন্ধকার হয়, ধীরে) বৃদ্ধদের নিয়ে এক সংবেদনশীল অন্বেষণ এবং বৃদ্ধদের মধ্যে লুকানো এক সংবেদশীল জটিল জগৎ। তিনি এতে লিখেছেন, অনেক প্রবীণ এমনভাবে কথা বলেন যেন তারা সবকিছু জানেন। আসলেই বৃদ্ধ বয়সে তারা শিশুদের মতোই অজ্ঞ। বৃদ্ধ হয়ে ওঠায় তাদের যা কিছুর মুখোমুখি হতে হয় এবং সামনে যে পথ পাড়ি দিতে হয়, এজন্য তাদের কোনো প্রস্তুতি থাকে না। আপনি যখন ৬০ বছর বয়সে উপনীত হবেন, তখন বয়স্ক হিসেবে আপনার যাত্রা শুরু। সব আলো নিভে যাওয়ার আগে, আকাশ অন্ধকার হয়ে আসার আগে আপনার বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার, আপনি যা কিছুরই মুখোমুখি হোন না কেন, তার জন্য আপনি প্রস্তুত থাকবেন, আপনি আতঙ্কিত হবেন না। যেমন—

১. আপনার আশপাশের চেনাজানা মানুষজন কমতে থাকবে। মা-বাবা ও দাদা-দাদিদের প্রজন্মের বেশির ভাগই চলে গেছেন। আর আপনার সহকর্মীদের অনেকেই নিজেদের নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তরুণ প্রজন্ম সবাই নিজেকে নিয়ে বড় ব্যস্ত। এমনকি আপনার স্ত্রী বা স্বামীও আপনার আগে বা স্বাভাবিক সময়ের আগে চলে যেতে পারেন। পরের দিনগুলো হতে পারে শূন্যতায় ভরা, মরুময়। তাই আপনাকে শিখতে হবে কীভাবে একা থাকতে হয় এবং কীভাবে একাকিত্ব আলিঙ্গন ও উপভোগ করতে হয়।

২. সমাজ আপনাকে খুব কমই যত্ন নেবে। আপনার পেছনের জীবন কতটা উজ্জ্বল ও গৌরবময় ছিল বা আপনি কতটা বিখ্যাত ছিলেন, তা আর বিবেচ্য বিষয় নয়। বয়স বৃদ্ধিই আপনাকে একজন অতিসাধারণ বৃদ্ধ বা বৃদ্ধায় পরিণত করেছে। স্পটলাইটটি আর আপনার ওপর জ্বলজ্বল করে না। এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আপনাকে টিকে থাকার লড়াইটি করা শিখতে হবে। আপনার পরে আসা হাবভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিগুলো প্রশংসা ও সমাদর করা শিখতে হবে। অবশ্যই ঈর্ষা ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে।

৩. সামনের পথ পাথুরে ও বিপদসংকুল হবে। ফ্র্যাকচার, কার্ডিওভাস্কুলার ব্লকেজ, মস্তিষ্কের অ্যাট্রোফি, ক্যান্সার—এসব সম্ভাব্য অতিথি যেকোনো সময় আপনার জীবনে হাজির হতে পারে। আপনি সেসব অতিথিকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন না। আপনাকে রোগশোকের সঙ্গে বাঁচতে হবে। এমনকি তাদেরকে আপনার বন্ধু হিসেবে দেখতে হবে। শারীরিক কষ্ট বা যন্ত্রণাহীন স্থিতিশীল ও শান্ত দিনগুলোর স্বপ্ন দেখবেন না। একটি ইতিবাচক মানসিকতা নিজের মধ্যে বজায় রাখুন। নিজেকে ফিট রাখা এবং পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা আপনার কর্তব্য বলে মনে করুন। নিজের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন।

৪. শয্যাশায়ী জীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। শিশু অবস্থায় ফিরে আসুন। আমাদের মায়েরা এই পৃথিবীতে আমাদেরকে আমাদের বিছানায় নিয়ে আসেন। মোচড় ও মোড় ঘুরে এবং জীবনযুদ্ধ শেষ করে আমরা আবার আমাদের প্রারম্ভিক জায়গা সেই বিছানায় এবং অন্যের দ্বারা দেখাশোনা করার মতো অবস্থায় ফিরে আসি। পার্থক্য পৃথিবীতে আসার সময় দেখাশোনার জন্য মা ছিলেন, চলে যাওয়ার সময় হয়তো আমাদের দেখাশোনার জন্য আত্মীয়স্বজন কেউ না-ও থাকতে পারেন। থাকলেও তাদের যত্ন মায়ের মতো হবে না। হয়তো আপনার যত্ন নিতে পারেন সেবিকা বা পরিচারিকা। যারা আপনার সঙ্গে সম্পর্কহীন। তারা হূদয়ে ক্লান্তি এবং হাসিমাখা মুখে শ্রান্তি বহন করেন। স্থির থাকুন। ক্লেশ বোধ করবেন না। মনে রাখবেন, আপনাকে কৃতজ্ঞ হতে হবে।

৫. সামনে বন্ধুর পথ। পথে অনেক ছিনতাইকারী এবং স্ক্যামার থাকবে। তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন, আপনার কাছে প্রচুর অর্থ আছে। তারা আপনার এ অর্থ নানা রকম প্রতারণার আশ্রয়ে হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। সেসব প্রতারণার মাধ্যম হতে পারে কেলেঙ্কারি, ফোনকল, টেক্সট বার্তা, মেইল, খাবার এবং পণ্যের নমুনা, সমৃদ্ধ-দ্রুত স্কিম। সাবধানে থাকুন। সতর্ক থাকুন। আপনার অর্থ আপনার কাছে রাখুন। বোকার সমুদয় অর্থ অতি দ্রুত হাতছাড়া  হয়ে যায়। তাই আপনার প্রতিটি পয়সা বিজ্ঞের মতো খরচ করুন। 

৬. জীবনকে একান্তভাবেই ভালোবাসতে শিখুন। জীবনের প্রতিটি খারাপ কাজের জবাবদিহিতা একান্তই আপনার। জীবনের সব অসুস্থতার কষ্ট একান্তই আপনার। জীবনের প্রতিটি ভুলের দায় একান্তই আপনার। মরণের সময় আপনজনেরা যতই হা-হুতাশ করুক, যন্ত্রণাটা একান্তই আপনার। সুতরাং নিজেকে ভালোবাসুন। তবেই এই কঠিন বাস্তব বিষয়গুলো আপনার অনুকূলে আনা সম্ভব হবে। জীবনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নিজের সব কর্মকাণ্ড নিজের অনুকূলে রাখার প্রাণান্তকর এক নিরবচ্ছিন্ন কঠোর প্রচেষ্টার নামই নিজেকে ভালোবাসা।

৭. জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই গুরুত্ব দিন এবং মায়ামমতায় জীবন লালন করুন: (ক) হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী না থাকা পর্যন্ত অনুধাবন করা যায় না, সুস্বাস্থ্য কতটা জরুরি। এজন্য দিনে অন্তত আধঘণ্টা সময় ব্যয় করে ব্যায়াম করুন। তাতে শরীরে ‘এন্ডোরফিনস’ নিঃসৃত হয়। ফলে শরীরে হাসিখুশি হালকা ভাব আসে। ভালো একটি বই পড়লে, ভালো মানুষের সঙ্গে কথা বললেও শরীরে এই এন্ডোরফিনস নিঃসৃত হয়। এন্ডোরফিনস প্রতিদিন দরকার। মন খারাপ থাকলে যেমন প্রিয়জন কাছে এলে ভালো হয়, ঠিক তেমনি একটু দৌড়ে বা হেঁটে এলেও মন ভালো হয়। শরীরে নিয়মিত এন্ডোরফিনস নিঃসরণ নিশ্চিত করুন। শরীরকে ঠিক রাখুন। (খ) সৎ মানুষের চেহারায় অন্য রকমের একটি দীপ্তি ছড়িয়ে থাকে। সৎ চিন্তা ও চেতনা নিয়ে কাজ করলে শরীরে ‘ডোপামাইন’ তৈরি হয়। মনস্থির করলেন সময়মতো অফিসে যাবেন, অফিসের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবেন, ঘুষ নেবেন না, ফাইল আটকে রাখবেন না, কাউকে ঠকাবেন না এবং ফাঁকি দেবেন না। প্রতিদিন যখন এই টার্গেট আপনি পূর্ণ করবেন, শরীরে ‘ডোপামাইন’ আসবে। কারো ভালো কাজে অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ দিলেও শরীরে ‘ডোপামাইন’ আসে। তাতে মন বাড়তি আনন্দ ও উৎসাহ পায়। ভালো কিছু অর্জন করুন। ভালো কাজে অন্যকে উৎসাহ দিন। শরীরে ডোপামাইনের কলোনি গড়ে তুলুন। (গ) পরোপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। পথের কাঁটা সরিয়ে দিলেন। বৃদ্ধ, রোগী, নারী—এমন কাউকে বাসের সিট ছেড়ে দিলেন। দেখবেন মনে সুখ পাচ্ছেন। শরীরে এই সুখ এনে দেয় ‘সেরোটোনিন’। একাগ্রচিত্তে ধ্যান করলেও মনে প্রশান্তি আসে। কেউ যদি তার ধর্ম বিশুদ্ধভাবে পালন করেন, তাতেও মনে প্রশান্তি আসে। তা জোগায় সেরোটোনিন। (ঘ) প্রিয়জনের সান্নিধ্যে এলে কিংবা কোনো সুন্দর জায়গা দেখলে অথবা হূদয় স্পর্শ করা সুর বা গান শুনলে শরীরে অক্সিটোসিন তৈরি হয়। তাতে মন খুশিতে ভরে যায়। তাই সুন্দর সুন্দর জায়গা ভ্রমণ করুন। কাছের ও নিজের মানুষের সান্নিধ্যে থাকুন। শিশুদের আদর-সোহাগ করুন। শিশুরা উদ্দীপ্ত হবে। তাতে আপনিও আনন্দ পাবেন। নিজেকে ভালোবাসায় মগ্ন থাকুন। অক্সিটোসিনের সেবা নিন।     

আকাশ অন্ধকার হয়ে আসার আগে জীবনের এই যাত্রায় শেষ প্রসারগুলো হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে ম্লান এবং আরো ম্লান। আপনি যে পথে এগিয়ে চলেছেন, তা আগে থেকে দেখা কঠিন। এগিয়ে যাওয়া আরো কঠিন। ৬০ বছর বয়সে যা আছে জীবন, তা দেখার জন্য। যা আছে তা লালন করা, জীবন উপভোগ করা এবং সামাজিক সমস্যাদি বা সন্তান ও নাতি-নাতনিদের বিষয়াদি নিজের ওপর না নেয়া—এমন সব করা হলে আমাদের সবার পক্ষে মঙ্গল করা হয়। বিনয়ী থাকুন। বয়স্ক হওয়ায় ঊর্ধ্বতন আচরণ করবেন না। অন্যের সঙ্গে চড়া গলায় কথা বলবেন না, এটি আপনাকে ততটাই ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যতটা তা অন্যকে আঘাত করবে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধা কী এবং এর মূল্যই বা কত, তা বুঝতে আমাদের আরো মনোযোগী হওয়া দরকার। আপনার জীবনের এই পরবর্তী দিনগুলোয় আপনাকে বুঝতে হবে এর অর্থ কী; আপনার অ্যাটাচমেন্টগুলো ছেড়ে দেয়া, মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা। প্রকৃতির পথ জীবনের পথ। এর প্রবাহের সঙ্গে থাকুন এবং সমতা নিয়ে বাঁচুন।

উপন্যাসে জীবনের শেষ বেলা তথা প্রবীণ বয়সের এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রবীণ জীবনের স্বরূপ কি এর চেয়ে ভিন্ন হতে পারে না? এমন অবস্থা মোকাবেলার জন্য কি কেবল প্রবীণের একারই প্রস্তুতি দরকার? সমাজ, সংসার, রাষ্ট্র—কারোরই কি কোনো প্রস্তুতির দায় বা দরকার নেই? বাস্তবতা দেখে মনে হয়, আসলেই নেই! ‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন’—এ উপদেশ শুনতে শুনতে আমরা বেড়ে উঠি। কী এমন জীবন আমরা গঠন করি যে মরণে আমরা কাঁদি, ভুবন কাঁদে না, কাঁদায়! প্রবীণকে সমাজ-সংসারে দীন ও হীন হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। মৃত্যুই একসময় এমন অবস্থা থেকে তাকে মুক্তি দেয়। তাকেই কৃতজ্ঞ হতে হয়। তার প্রতি কেউ কৃতজ্ঞ হয় না।

প্রাকৃতিক নিয়মে আমরা জন্মাই। মা আমাদের পৃথিবীতে আনেন। মায়ামমতা আর ভালোবাসায় আমরা মায়ের কোলে-কাঁখে-হাতে শিশু অবস্থা থেকে বেড়ে উঠি। বিকশিত হই। পূর্ণতা পাই। জীবনযুদ্ধ শেষে বার্ধক্যে এসে আবার শিশুর মতো অসহায় হয়ে ফিরে আসি সেই প্রথম অবস্থায়, বিছানায়। তারপর মৃত্যু। জন্ম থেকে মৃত্যু—এই দীর্ঘ পরিক্রমায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা এ জগৎ সংসারকে আমরা কখনো ছাতা হয়ে ছাতার নিচে আশ্রয় দিই, কখনো ছাদ হয়ে ছাদের নিচে আগলে রাখি। আবার কখনো পিলার হয়ে মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। মেধা ও শ্রম দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখি। সভ্যতার উত্থানে আমরা সিঁড়ি বা বাহন হই। অন্তিম সময়ে আমরা যখন শিশুরই মতো অসহায়, তখন সমাজ-সংসার বা রাষ্ট্র কোনো কাজে আসে না। সহায় হয় না।

যশোবন্ত শিং। ভারতের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ—এই তিন মন্ত্রণালয়েরই মন্ত্রী ছিলেন। মারা যান ৮২ বছর বয়সে। মন্ত্রী বা রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, সত্যান্বেষী শক্তিমান লেখক হিসেবে সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি অসুস্থ শয্যাশায়ী নানাকে দেখতে আসেন। নানা ডাক্তার দেখাতে নারাজ। তার দাহ যেন ঠিকঠাক মতো হয়, সেজন্য তিনি যশোবন্ত শিংকে লাকড়ি জোগাড় করে আনতে বলেন। মরুভূমি অঞ্চল থেকে লাকড়ি জোগাড় করা সহজ ছিল না। তবুও প্রচুর লাকড়ি জোগাড় করে আনেন। নাতির এমন কাজে নানা খুব তৃপ্তি বোধ করেন। ফেরার সময় তাকে সহজভাবেই বিদায় দেন। কিছুদিন পর মারা যান। যশোবন্ত শিং অনুধাবন করেন, তার জীবনের একটি বিশাল সিংহদ্বার, অনেকগুলো যোগসূত্র, অনেক পরিচিতি, অনেকগুলো মূল, চৈতন্য ও যোগাযোগ—এই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল।

বীণার তারে সুর তুলে মানুষের হূদয়ে ঝড় তোলেন পণ্ডিত দোরাইস্বামী আয়েঙ্গার। রবিশংকর যেমন সেতারে পণ্ডিত, তেমন বীণায় দোরাইস্বামী। তিনি অখণ্ড ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। ৭৭ বছর বয়সে মারা যান। ভেঙ্কটগিরিয়াপ্পা তখন শয্যাশায়ী, তার দিন ফুরিয়ে এসেছে। তিনি তার প্রিয় ছাত্র দোরাইকে বললেন, ‘ভৈরবী বাজাও।’ দোরাইস্বামী তারপর দিনের পর দিন ভৈরবী বাজিয়েছেন। এমনকি যখন কোনো ধ্বনি তার কানে পৌঁছছে না, তখনো। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শক্তিমান কালজয়ী অভিনেতা। বাংলা ভাষাভাষীদের ভালোবাসার মানুষ। মারা যান ৮৬ বছর বয়সে। তার কণ্ঠে যখন শুনি, ‘হূদয় আমার চায় যে দিতে, কেবল নিতে নয়, বয়ে বয়ে বেড়ায় সে তার যা কিছু সঞ্চয়’, তখন মনে হয়, এ-যেন আমাদেরই চাওয়া।

আমাদের দায়বদ্ধতা ও কৃতজ্ঞতা বোধ যশোবন্ত শিং ও দোরাইস্বামীর মাপের হলে এবং আমরা সভ্য ও বিবেকবান জাতি হলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, মুটে, কুলি, মজুর, কাজের বুয়া—আপামর গায়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে ৫৯ বছর বয়সে সরকার পেনশন দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মতো বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাত। বিলি-বণ্টনের পরিবর্তে সরকারি সম্পদ এদের কল্যাণ ও অধিকার সুরক্ষায় ব্যবহার হতো। আমরা অসভ্য ও বিবেকহীন বলেই করের টাকায় কেবল সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াই। সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ঘুষ-দুর্নীতি, সরকারি সম্পত্তি ভোগ-দখল এবং অর্থ আত্মসাৎ ও তছরুপের সুযোগ সৃষ্টি করি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনদের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরির ব্যবস্থা করি। ফলে জনগণের সেবক নয়, তারা শাসক ও শোষক বনে যায়। আমরা যদি মানবিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতাম, সমাজ মানবিক হতো। এন্ডোরফিনস, ডোপামাইন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন—এসব জীবনযাপনে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেত। জনগণের জীবনরক্ষার অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এই বোধ থেকে সরকার অসহায় বৃদ্ধ ও প্রান্তিক জনগণের সহায় হতো। সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তির পরিবর্তে জনগণের নিয়ন্ত্রণে থাকত। কিন্তু সরকারের মধ্যে সে বোধ অনুপস্থিত। বড় বাজেট আর বড় উন্নয়নে সরকার বিভ্রান্ত। কেবল করই নয়, সরকার ব্যবসায়ীদের মতো মুনাফাও চায়। জীবনের অন্তিম অধ্যায়ে বৃদ্ধদের আকুতি রবীন্দ্রনাথের কবিতায় প্রকাশ পায়, ‘...সারা পথের ক্লান্তি আমার, সারা দিনের তৃষা/ কেমন করে মেটাবো যে খুঁজে না পাই দিশা।...হাতখানি ঐ বাড়িয়ে আনো, দাও গো আমার হাতে/ ধরব তারে, ভরব তারে, রাখব তারে সাথে। একলা পথের চলা আমার করব রমণীয়/ মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও।’ 

পাদটীকা: (১) এন্ডোরফিনস—মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রে নিঃসৃত যেকোনো গ্রুপের হরমোন, যার বেশ কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ থাকে। এগুলো পেপটাইড, যা দেহের অপিপেট রিসেপ্টরগুলোকে সক্রিয় করে এবং একটি ব্যথানাশক প্রভাব তৈরি করে। (২) ডোপামাইন—এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার। এটি শরীরে তৈরি হয় এবং স্নায়ু কোষগুলোর মধ্যে বার্তা প্রেরণের জন্য স্নায়ুুতন্ত্র এটি ব্যবহার করে। এজন্য এটিকে রাসায়নিক ম্যাসেঞ্জারও বলা হয়।  আমরা যে আনন্দ অনুভব করি, তাতে ডোপামিনের ভূমিকা রয়েছে। এটি আমাদের চিন্তা ও পরিকল্পনা করার অনন্য মানবক্ষমতার একটি বড় অংশ। (৩) সেরোটোনিন—রক্তের প্লেটলেট এবং সিরামে বিদ্যমান একটি যৌগ, যা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত রাখে এবং নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে এবং (৪) অক্সিটোসিন—হরমোন, যা শরীরে অঙ্গগুলোর ওপর কাজ করে এবং মস্তিষ্কে রাসায়নিক বার্তাবাহক। প্রজনন সিস্টেমের মূল দিকগুলোসহ মানব আচরণের দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।

ড. এম শামসুল আলম: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ


© Daily Bonik Barta
« Last Edit: January 06, 2021, 04:05:09 PM by Badshah Mamun »
Md. Abdullah-Al-Mamun (Badshah)
Senior Assistant Director
Daffodil International University
01811-458850
cmoffice@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd

www.fb.com/badshahmamun.ju
www.linkedin.com/in/badshahmamun
www.twitter.com/badshahmamun