বলা যায় সারা বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখন চলমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনা যেমন জটিল হয়েছে, ঠিক তেমনি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও অগ্রগতি এসেছে। সচেতনতার পাশাপাশি এখন প্রয়োজন সঠিক তথ্যপ্রবাহ। অর্থাৎ করোনা থেকে বাঁচতে হলে এর সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের পরামর্শ ও নির্দেশনা গুরুত্ব সহকারে মানতে হবে।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা ও এর প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ের সুরক্ষা’। অনুষ্ঠানটির সপ্তম পর্বে ডা. নাদিয়া নিতুলের সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ইউনিটপ্রধান অধ্যাপক ডা. এম জি আজম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক ডা. এম জি আজম আলোচনা করেন রক্ত জমাট বাঁধা কী এবং এর কারণ নিয়ে। আমাদের শরীরে রক্ত সব সময় প্রবহমান অবস্থায় থাকে, যদি কোনো কারণে রক্ত জমাট বাঁধে, তবে এই প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। রক্ত জমাট বাঁধা সমস্যাটি প্লাটিলেট, জমাট বাঁধার কারণ এবং প্রোটিনের সঙ্গে জড়িত; আর তাই রক্ত জমাট বাঁধা রোগের কারণ হলো এর মধ্যে যেকোনো একটি রক্তের উপাদানে অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়া। জমাট বাঁধা রোগের সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি হচ্ছে বংশগত।
এ ছাড়া রয়েছে হিমোফিলিয়া, ভিটামিন কে-র অভাব। রক্ত জমাট বাঁধলে হার্ট, কিডনি ও ব্রেনে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। এসবের কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়। এর চিকিৎসা শুরুর আগে বুঝতে হবে কী কারণে রক্ত জমাট বাঁধছে। করোনাকালে এই সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। কারণ, করোনা প্রথমেই মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করতে পারে। এরপর তা হার্ট, কিডনি এমনকি রক্তনালিগুলোতে সংক্রমণ ঘটায়। এরপরই রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
মহামারির শুরুতে ধারণা করা হতো, ফুসফুসে সংক্রমণের কারণেই মৃত্যু বেশি হচ্ছে। কারণ এক্স-রে কিংবা অন্যান্য পরীক্ষায় দেখা যেত, আক্রান্ত রোগীদের প্রকট আকারে নিউমোনিয়া রয়েছে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বা নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় রোগীদের যখন বাঁচানো সম্ভব হলো না, তখন মিলানে প্রথম ৫০ জন রোগীর ওপর পর্যবেক্ষণ ও ময়নাতদন্ত দেখে বোঝা গেল, করোনা তাঁদের শরীরের বিভিন্ন জায়গা, যেমন পা ও ফুসফুসের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধছে। এ বিষয়ে জানার পর চিকিৎসকেরা রক্ত তরল করার যে ওষুধগুলো প্রচলিত ছিল, সেগুলো প্রয়োগ করেন এবং ভালো ফল পান।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, এই ওষুধগুলো কীভাবে দেওয়া হবে এবং কত দিন সেবন করতে হবে। এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কারণ রোগীর অবস্থা যদি জটিল হয়, তাহলে রক্ত তরল করার ওষুধ ইনজেকশন ফর্মে দেওয়া হয়। যদি কম জটিল হয়, তাহলে মুখে খেতে দেওয়া হয়। আবার করোনা ভালো হয়ে গেলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক থেকে দুই মাস বা আরও বেশি সময় এই ওষুধ সেবন করতে হতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছুই করা যাবে না। আরও একটি বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস; রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, বয়স বেশি (ষাটোর্ধ্ব), তাঁদেরই ঝুঁকি অনেক বেশি।
একটি কথা সবারই খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে, আমাদের শরীরের ফাংশনগুলো খুবই জটিল এবং প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই আলাদা। তাই সবাইকে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে হবে।
এরপর অধ্যাপক ডা. এম জি আজম আলোচনা করেন করোনায় আক্রান্ত রোগীরা পরবর্তী সময়ে কী ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারেন এবং এর প্রতিকার নিয়ে। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের ভাইরাসই মানুষের শরীরে তেমন কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে না। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখা গেছে। যদিও এ নিয়ে তেমন ভয়ের কিছু নেই। কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করলেই চলবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের মধ্যে হার্ট বা ফুসফুসের কিছু সমস্যা দুই বা তিন মাস পরও দেখা গেছে। তবে ভয়ের তেমন কিছু নেই। শুধু প্রয়োজন সতর্কতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা।
কারণ, অগেই বলেছি আমাদের শরীরে একেকটি বিষয় একেকভাবে প্রতিক্রিয়া করে। সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে সচেতনতা। করোনা মোকাবিলায় এর থেকে জরুরি আর কোনো কিছুই নেই। আমি বলতে চাই, এ বিষয়ে আমাদের গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিদিনই আমি দেখেছি, প্রতিটি গণমাধ্যম করোনা বিষয়ে নানা সচেতনতামূলক বিষয় প্রচার করছে। আমাদের দেশে কিন্তু আমরা বেশ ভালোভাবেই করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছি। আরও সফলতার জন্য চাই সচেতনতা। সরকারি বিধিনিষেধগুলো পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
Video Link:
https://www.facebook.com/watch/?v=2833453746897955Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A7%8E%E0%A6%B8%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6-%E0%A6%B6%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF