বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধিগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্যানসার। আর পাকস্থলীর ক্যানসার তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশেও এটি মৃত্যুহারের জন্য দায়ী রোগসমূহের তালিকায় রয়েছে। তাই এ ক্যানসার যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রতিরোধ করা যায়, সে জন্য এর উপসর্গ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কারণ পাকস্থলীর ক্যানসার খুবই মারাত্মক। তবে আশার কথা হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। আর এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এই লক্ষ্যে এসকেএফ অনকোলজি নিবেদিত ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ অনুষ্ঠানের চতুর্দশ পর্বে অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডা. এ টি এম কামরুল হাসান, এমডি (মেডিকেল অনকোলজি), ক্যানসার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা এবং ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, এমডি (মেডিকেল অনকোলজি), সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা। এ অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয়: পাকস্থলীর ক্যানসার।
ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের দেশে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোতে ৬৮-৭০ বছর বয়সে ক্যানসার দেখা দেয় এবং আমাদের দেশে ৫০-৫২ বছর বয়সেই তা দেখা দেয়। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে, তবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। পৃথিবীর সব দেশে এর ব্যাপ্তি সমান নয়, ঝুঁকির ক্ষেত্রেও তারতম্য রয়েছে। বিভিন্ন দেশের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ভিন্নতার কারণে এটি ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে আশার কথা হলো, পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার আগের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে।
পাকস্থলীর ক্যানসার আর্লি স্টেইজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাসিম্পটমেটিক হয়ে থাকে। অর্থাৎ তেমন একটা উপসর্গ প্রকাশ পায় না। অথবা উপসর্গ থাকলেও সেটি খুব সামান্য হয়ে থাকে। মূলত পেটে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, গলা জ্বলা, বমি বমি ভাব কিংবা অ্যাসিডিটি হতে পারে। এ ছাড়া অ্যাডভান্সড স্টেজে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ধীরে ধীরে ওজন কমে যাওয়া। এ ছাড়া ক্ষুধামান্দ্য, অল্প খেলেই ভরপেট অনুভূত হওয়া, বমিভাব বা বমি হওয়া, বমির সঙ্গে রক্ত আসা, মলের সঙ্গে কালচে রক্ত আসা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আর ক্যানসার যদি লিভারে ছড়িয়ে যায় সে ক্ষেত্রে জন্ডিস হতে পারে। আবার পেটের ভেতরে পানি আসতে পারে। অনেকের ক্যানসার ফুসফুসেও ছড়িয়ে যায়। তখন কাশি হতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এটি হাড় কিংবা মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
আমাদের দেশে রোগীরা সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে এ-জাতীয় রোগকে অবহেলা করে থাকেন। অনেকেই ঠিকমতো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ না করে কাছাকাছি কোনো ফার্মেসি থেকে অনুমান করে কোনো ওষুধ খাচ্ছেন, যার ফলে রোগ আরও জটিল হতে থাকে। তবে বর্তমানে আমাদের দেশেও পাকস্থলীর ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই উপসর্গ দেখামাত্রই দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ক্যানসার পুরোপুরিভাবে প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ঝুঁকির কারণগুলো জানা থাকলে আমরা সচেতন হতে সক্ষম হব। ফলে এর ঝুঁকি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারব। এর মধ্যে কিছু রয়েছে যার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, আবার কিছু রয়েছে যেগুলো আমরা জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিবর্তন করতে পারি। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষেরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাস্ট্রিক আলসারে আক্রান্ত হওয়া এবং ওষুধ সেবন করা এর অন্যতম কারণ। এসব রোগীদের পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। জেনেটিক কারণে এ ক্যানসার হতে পারে।
এছাড়া একটি বড় কারণ ধূমপান। এ ছাড়া পান, জর্দা খেলেও এ রোগের ঝুঁকি থাকে। কারও পাকস্থলীর অর্ধেক অংশ কোনো রোগের কারণে কেটে ফেলা হলে রোগীর পাকস্থলীতেও ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপানে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। ক্যানসারের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন যেমন- প্রসেসড ফুডের পরিহার করে তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়া এবং নিয়মমাফিক চলাফেরার মাধ্যমে ক্যানসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
Video Link:
https://www.facebook.com/watch/?v=3618526961574536Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%93