Famous > History

Education philosophy of Khan Bahadur Ahshan Ullah (R)

(1/1)

roman:
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) শিক্ষাদর্শন - ১
সুশিক্ষা

মানসিক শক্তির পরিপুষ্টি শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। শিশুর মনোবৃত্তিগুলি এরূপে পরিচালিত করিতে হইবে যে, এই শক্তির
উন্নতি সাধিত হইতে পারে। যে শিক্ষা দ্বারা এই শক্তি পরিপুষ্ট না হয়, তাহা প্রকৃত শিক্ষাবাচ্য নহে। কতকগুলি বিষয়
কণ্ঠস্থ করিলে কোন শক্তি জন্মে না। পরীক্ষায় কৃতকার্য্যতা কখনও শিক্ষকের লক্ষ্য হওয়া উচিত নহে। জ্ঞানদান ও
মানসিক শক্তির পরিপুষ্টি তাঁহার একমাত্র লক্ষ্য হইবে। শিক্ষক কেবল বিদ্বান হইলেই শিক্ষাকার্য্য সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত
হয় না। শিক্ষকের অনেকগুলি গুণ থাকা আবশ্যক, যথা- উপযোগিতা, প্রবৃত্তি ও আগ্রহ, শিক্ষার্থীর প্রতি সহানুভূতি,
হৃষ্টচিত্ততা, শাসনক্ষমতা, শিক্ষাকৌশল ও উপস্থিতবুদ্ধি।

শিশুর স্বভাব লক্ষ্য করিয়া শিক্ষাদান করিতে হইবে। উহার বাহ্যজ্ঞান, ধারণশক্তি প্রভৃতি বিবেচনা করিয়া শিক্ষককে
ত্রমশঃ অগ্রসর হইতে হইবে। জ্ঞান ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য; যাহাতে সকল ইন্দ্রিয়েরই পরিচালনা হয়, তৎপ্রতি শিক্ষক দৃষ্টি
রাখিবেন। আমাদের অধিকাংশ জ্ঞান চক্ষু ও কর্ণ সাহায্যে জন্মিয়া থাকে, সুতরাং এই দুইটি ইন্দ্রিয়ের বিশেষ অনুশীলন
প্রয়োজনীয়। শিশুর প্রথম জ্ঞান বস্তুসাপেক্ষ হওয়া আবশ্যক। বস্তু ব্যতিরেকে শিশুকে কোন শিক্ষা দেওয়া উচিত নহে।
শিশু প্রকৃত ভাব উপলব্ধি করিতে পারিয়াছে কি না, ইহা নানাপ্রকার প্রশ্ন দ্বারা পরীক্ষা করিতে হইবে। অস্পষ্ট ভাব ও
অসস্পূর্ণ জ্ঞান বিঘœদায়ক। শব্দ পরিত্যাগ করিয়া শব্দবোধক ভাবে প্রতি চিন্তাশক্তিকে পরিচালিত করাইতে হইবে। দৃষ্টি
শব্দের উপর চালিত হইবে সত্য কিন্তু চিন্তা শব্দঘটিত অর্থের উপর ধাবিত হইবে। পরিশেষে শব্দের বিনা সাহায্যে
চিন্তাশক্তি এক ভাব হইতে ভাবান্তরে আকৃষ্ট হইবে। ভাষা ও জ্ঞান দুইটি পৃথক বস্তু। উভয়েরই উন্নতি বাঞ্ছনীয়।
শিক্ষা প্রথমে বস্তুবিষয়ক ও ক্রমে ভাববিষয়ক হইবে। শিশুর প্রধান জ্ঞান অপরের সাক্ষ্য সাপেক্ষ হওয়া উচিত নহে।
শিশু স্বয়ং পর্যবেক্ষণ করিয়া দৃষ্টান্ত হইতে সংজ্ঞা গঠন করিবে। ইহাতে উহার জ্ঞানের প্রসার হইবে।

সহজ হইতে জটিল ও জ্ঞাত হইতে অজ্ঞাত বিষয়ে অগ্রসর হওয়া সুশিক্ষার অন্যতম প্রণালী। ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান হইতে
ক্রমে ইন্দ্রিয়ের অলব্ধ জ্ঞানলাভের চেষ্ট করিতে হইবে। দৃষ্ট বস্তুর জ্ঞানের সাহায্যে দৃষ্টি বহির্ভূত বস্তুর জ্ঞান জন্মাইতে
হইবে। ইহাতে চিন্তাশক্তি পরিপুষ্ট হইবে।

পদার্থ, চিত্র বা আদর্শ সাহায্যে শিশুকে প্রথম শিক্ষা দিতে হইবে। শিক্ষণীয় বিষয়টি শিশুকে দর্শন বা স্পর্শ করিতে
দেওয়া আবশ্যক, পরে গল্পচ্ছলে ঐ পদার্থ সম্বন্ধে নানাবিধ তথ্য শিক্ষা দেওয়া উচিত। যে পর্য্যন্ত পদার্থটি সম্বন্ধে তাহার
বিবরণগুলি দৃঢ়ীভূত না হইবে, সে পর্য্যন্ত অন্য বিষয়ের আলোচনা করিতে হইবে না।

শিশু বয়স্ক হইলে উহার স্মৃতিশক্তি পরিপুষ্ট করিতে হইবে। ঐ সময়ে তাহাকে কবিতা, নামতা, প্রভৃতি কণ্ঠস্থ করাইতে
হইবে। দশ বৎসর বয়স অতীত হইলে ক্রমে যুক্তি ও তর্কশক্তি পরিচালনা করিতে হইবে। পদার্থ সম্মুখে না রাখিয়া
সেই সম্বন্ধে মৌখিক আলোচনা করিতে হইবে।

সুপ্রশ্ন শিক্ষার একটি প্রধান অবলম্বন। যে শিক্ষক সুপ্রশ্ন করিতে পারেন, তাঁহার কৃতকার্য্যতা স্থিরনিশ্চয়। ছাত্র হইতে
প্রশ্নের সমস্ত উত্তর লইতে চেষ্টা করিতে হইবে। অনেক স্থানে শিক্ষক পরিশ্রম করিয়া থাকেন, কিন্তু ছাত্র নির্ব্বাক ও
নিষ্কাম থাকে। ইহাতে অলসতা বৃদ্ধি পায় ও কার্য্যাত্মক প্রবৃত্তির বিনাশ হয়। ছাত্রকে আত্মাবলম্বন শিক্ষা দিতে হইবে।
ইহাতে অনুসন্ধিৎসা বাড়িতে ও নূতন শক্তির সঞ্চার হইবে। এক বাক্য দ্বারা বারংবার একই প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ। ইহাতে
বৃথা সময় নষ্ট হয় ও ছাত্রের মনোযোগের হ্রাস হয়। এমন কোন প্রশ্ন করিতে হইবে না, যাহার উত্তরে “হ্যাঁ” বা “না”
বলিলেই চলিতে পারে। এইরূপ প্রশ্ন দ্বারা শিক্ষার অপব্যবহার হয় ও ছাত্রের ঔৎসুক্য নিরস্ত হয়। প্রশ্ন করিবার সময়
শিক্ষক সমস্ত ক্লাসের প্রতি লক্ষ্য করিয়া প্রশ্ন করিবেন, কিঞ্চিৎ পরে কোন ছাত্রকে উত্তরের জন্য মনোনীত করিবেন।
ছাত্রদিগকে ক্রম অনুসারে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ। কখন কখন ছাত্রবিশেষকে প্রশ্ন করিতে বলিতে হইবে। যে ছাত্র উত্তর না
দিতে পারিবে, প্রশ্নকারী উত্তর দিয়া তাহার স্থান অধিকার করিবে। এইরূপ প্রশ্নে ছাত্রগণ আমোদ উপভোগ করবে।
উত্তর খাঁটি ও সম্পূর্ণ না হইলে অগ্রাহ্য হইবে। অর্দ্ধ উত্তর সর্ব্বদা পরিত্যাজ্য। পূর্ণবাক্যে উত্তর দেওয়া কখনো কখনো
আবশ্যক। ভাল উত্তর পাইলে প্রশংসাবাদ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। উহাতে অপর ছাত্রের কৌতূহল বাড়ে। অসম্পূর্ণ উত্তর
সর্ব্বসমক্ষে অগ্রাহ্য করিতে হইবে। কাহারও উত্তর অগ্রাহ্য হইলে কুৎসিত বাক্য প্রয়োগ অসঙ্গত। অভদ্রতার সহিত
উত্তর করিলে উত্তরকারীকে নিরুৎসাহ ও লাঞ্ছিত করিতে হইবে। বারংবার প্রশ্ন করিবার পরও ছাত্রগণ উত্তর দিতে
অসমর্থ হইলে, শিক্ষিতব্য বিষয় পুনরালোচনা করিতে হইবে। কোন কোন সময়ে ছাত্র বালকদিগকে এক সঙ্গে উত্তর

দিতে উৎসাহিত করিতে হইবে, ইহাতে লাজুক ও ভীত ছাত্র ক্রমে সাহসী হইবে। কোন নির্দ্দিষ্ট বালককে সর্ব্বদা
উত্তরের জন্য মনোনীত করা নিষিদ্ধ। বিশেষ কারণ ব্যতীত শিক্ষক স্বয়ং উত্তর বলিয়া দিবেন না; তবে আবশ্যক হইলে
কখন কখন ইঙ্গিতমাত্র দিতে পারেন।

কেবল পরিশ্রমী হইলে সুশিক্ষক হওয়া যায় না। যে প্রণালী অবলম্বন করিলে শিক্ষণীয় বিষয় সহজবোধ্য হয়, তাহারই
চেষ্টা করিতে হইবে। শিক্ষা কষ্টসাধ্য হইলে কার্যকরী হয় না। যাহাতে শিক্ষকের বৃথা সময় নষ্ট না হয়, অথচ ছাত্রদিগের
মানসিক শক্তির উৎকর্ষ ঘটে তৎপ্রতি শিক্ষকের দৃষ্টি থাকা উচিত।

কোন একটি বিষয়ের অত্যধিক আলোচনা করিলে মনোযোগ শক্তির হ্রাস হয়। সাহিত্য, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল
প্রভৃতি পাঠ্য বিষয়গুলি পর্য্যায় পরিবর্ত্তন করিলে মনের প্রফুল্লতা জন্মে ও জড়তা দূর হয়। অনেক সময় ব্যাপিয়া কোন
পাঠ দেওয়া সঙ্গত নহে, ইহাতে মনোবৃত্তি শিথিল হইয়া পড়ে। ব্যায়াম এই শিথিলতা দূর করে ও পুনঃ পাঠের জন্য
ঔৎসুক্য বৃদ্ধি করে।

কৃতকার্য্যতার জন্য শিক্ষকের পক্ষে কষ্টসহিষ্ণুতা, ধৈর্য্য, ভদ্রতা, অমায়িকতা, গাম্ভীর্য্য ও দয়া একান্ত আবশ্যক। এক
কথায় বলিতে হইলে, শিক্ষকের আদর্শ পুরুষ হওয় উচিত। তাঁহার বিদ্যা ও চরিত্র সকলের অনুকরণীয় হইবে। অনেক
শিক্ষক শাসনসংরক্ষণ হেতু চীৎকার করিয়া থাকেন, ইহা দূষণীয় হইবে। শিক্ষকের ভ্রƒভঙ্গি ছাত্রের মনে ভয়ের সঞ্চার
করিবে ও ঈষৎ হাস্য পুরস্কারস্থানীয় হইবে। শিক্ষক প্রত্যেক ছাত্রের দক্ষতা ও অভাব ভালরূপ দেখিবে। এক দিকে
তাহার স্বভাবের প্রতি ও অপর দিকে তাহার জ্ঞানের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া শিক্ষণীয় বিষয়ের অবতারণা করিবেন। তাঁহাকে
সর্ব্বদা মনে রাখিতে হইবে যে, তিনি ছাত্রগণের শিক্ষক, শাসনকর্তা ও বন্ধু।

ছোট বালকদিগের শিক্ষার জন্য বক্তৃতা পদ্ধতি উপযোগী নহে। উহাতে ছাত্রদিগের আত্মাবলম্বনের লোপ হয়,
বুদ্ধিশক্তির খর্ব্বতা হয় ও অভিনিবেশের হ্রাস হয়। কলেজে বহু ছাত্র একত্রে সমন্বিত হইলে অধ্যাপকগণ বক্তৃতার উপর
নির্ভর করিতে বাধ্য হইয়া থাকে। সুকোমলমতি শিশুর পক্ষে ইহা উপাদেয় নহে।

অনেক শিক্ষক স্বীয় পরিচ্ছদের প্রতি লক্ষ্য রাখেন না। সাহেব না সাজিয়াও অনেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন
করিতে পারেন। শিক্ষকের স্থান আদর্শস্থানীয়, সুতরাং তাঁহার মলিন বস্ত্র, অপরিষ্কৃত জুতা, তৈলাক্ত টুপী শোভা পায়

না। ব্যহ্যিক পারিপাট্য আভ্যন্তরীণ চরিত্রের পরিচায়ক। ইহাতে ছাত্রেরা স্বভাবতঃ আকৃষ্ট হয়। কোন কোন শিক্ষক
ক্লাসের মধ্যে বিশ্রীভাবে দাঁড়াইয়া থাকেন, ইহা ছাত্রদিগের পক্ষে অনুকরণীয়। শিক্ষকের অধিক সময় “এটেন্সন্”
অবস্থায় দাঁড়াইয়া থাকা উচিত। দেওয়ালে ঠেস দেওয়া, চেয়ারে পা তুলিয়া বসা বা টেবিলে পা উঠাইয়া দেওয়া
শিক্ষকের পক্ষে নিষিদ্ধ। এই সমস্ত কু-অভ্যাস বালকদিগের অনুকরণীয় হওয়া উচিত নহে।

Collected...

Navigation

[0] Message Index

Go to full version