বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধিগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্যানসার। আর পাকস্থলীর ক্যানসার তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশেও এটি মৃত্যুহারের জন্য দায়ী রোগগুলোর তালিকায় রয়েছে। তাই এ ক্যানসার যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রতিরোধ করা যায়, সে জন্য এর উপসর্গ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কারণ পাকস্থলীর ক্যানসার খুবই মারাত্মক। তবে আশার কথা হলো প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। অর্থাৎ ক্যানসার পুরোপুরিভাবে প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ঝুঁকির কারণগুলো জানা থাকলে আমরা সচেতন হতে সক্ষম হব। ফলে এর ঝুঁকি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারব।
এর মধ্যে কিছু রয়েছে, যার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, আবার কিছু রয়েছে যেগুলো আমরা জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিবর্তন করতে পারি। আর এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। নিয়মমাফিক চলাফেরার মাধ্যমে ক্যানসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এই লক্ষ্যে এসকেএফ অনকোলজি নিবেদিত ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ অনুষ্ঠানের ১৬তম পর্বে অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডা. অসীম কুমার সেনগুপ্ত, কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড রেডিয়েশন অনকোলজি, ক্যানসার কেয়ার সেন্টার, ইউনাইটেড হাসপাতাল লি., গুলশান, ঢাকা এবং ডা. সামিয়া আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা। এ অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় ‘পাকস্থলীর ক্যানসার’।
ডা. অসীম কুমার সেনগুপ্ত বলেন, ‘সারা বিশ্বে ক্যানসারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাকস্থলীর ক্যানসারের স্থান পঞ্চম এবং আমাদের দেশেও এটি তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানেই সব সময় অবস্থান করে। এশিয়ান অঞ্চলগুলোয় এর প্রকোপ বেশি। আমাদের দেশেও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে, তবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। পৃথিবীর সব দেশে এর ব্যাপ্তি সমান নয়, ঝুঁকির ক্ষেত্রেও তারতম্য রয়েছে।’
সাধারণত পাকস্থলীর ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। অথবা উপসর্গ থাকলেও সেটি খুব সামান্য হয়ে থাকে। মূলত হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধা মন্দা, গলা জ্বলা, বমি বমি ভাব,মলের রং কালো হওয়া কিংবা পেটে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া অ্যাডভান্সড স্টেজে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়া। আর তখন ক্যানসার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। অনেক সময় পাকস্থলীর ক্যানসার লিভার, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
ডা. সামিয়া আহমেদ বলেন, ‘পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু আছে, যেগুলো খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে হয়ে থাকে। আর কিছু পারিবারিক কারণেও হয়ে থাকে। যেমন, আমরা আজকাল তাজা ফল ও শাকসবজি কম খাচ্ছি, বরং প্রসেসড ফুড, সল্টেড ফুড, স্মোকড মিট বা পিকল্ড ফুড বেশি খাচ্ছি। এ ছাড়া কারও হেলিকো ব্যাকটর পাইলোরি ইনফেকশন, নাইট্রাইডস, কিংবা ফ্যামিলিয়াল পলিপসিস বা লিঞ্চ সিন্ড্রোম হলে সে ক্ষেত্রে তার পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। ধূমপান ও মদ্যপান করলেও এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার কারণেও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।’
পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অনেকেই থাকেন, যাঁরা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাস্ট্রিক আলসারে আক্রান্ত কিংবা অ্যাডভান্সড স্টেজে বিভিন্ন জটিল উপসর্গ নিয়ে আসেন। বর্তমানে আমাদের দেশেও পাকস্থলীর ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। তাই উপসর্গ দেখামাত্রই দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
Video Link:
https://www.facebook.com/watch/?v=415659543195608Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A6%87-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%95