আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থার অনুপম দৃষ্টান্ত

Author Topic: আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থার অনুপম দৃষ্টান্ত  (Read 906 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনিই একমাত্র ‘পরিপূর্ণ মানব’ ছিলেন।

তিনি নিজে যেমন আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখতেন ঠিক তার উম্মতকেও তিনি এ শিক্ষাই দিয়েছেন তারাও যেন সর্বাবস্থায় কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তার ওপরই ভরসা রাখে।

তাই আমরা যদি মহানবীর (সা.) পরিপূর্ণ অনুসরণ করি, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখি এবং আল্লাহর সত্তায় ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করি তাহলে তিনি আমাদেরকে কখনও বিনষ্ট করবেন না। আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখলে তিনি আমাদেরকে স্বীয় নিরাপত্তাবেষ্টনীতে স্থান দিবেন।

আল্লাহর প্রতি মহানবীর (সা.) আস্থা কতই না অসাধারণ ছিল। মহানবী (সা.) তায়েফ সফর থেকে ফেরার পথে যখন নাখলা নামক স্থানে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন সেই ঘটনা আমরা স্মরণ করতে পারি।

হজরত যায়েদ বিন হারেস (রা.) মহানবী (সা.)-এর সমীপে নিবেদন করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এখন মক্কায় কীভাবে প্রবেশ করবেন কেননা তারা তো আপনাকে বের করে দিয়েছে?

দেখুন! মহানবী (সা.) কত অসাধারণ মহিমা ও আস্থার সাথে উত্তর দেন, তিনি (সা.) বলেন হে যায়েদ! দেখবে আল্লাহ ঠিকই কোন না কোন পথ উন্মুক্ত করে দিবেন আর আল্লাহ নিজ ধর্মের সাহায্যকারী। তিনি তার নবীকে অবশ্যই বিজয় দান করবেন।

অতঃপর তিনি (সা.) কুরাইশ নেতাদের কাছে বার্তা প্রেরণ করেন যেন তারা তাদের আশ্রয়ে তার (সা.) মক্কায় প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেয়।

কয়েকজন নেতা অস্বীকৃতি জানালেও অবশেষে মক্কার একজন সম্ভ্রান্ত নেতা মুতঈম বিন আদী স্বীয় আশ্রয়ে মহানবী (সা.)-কে মক্কায় প্রবেশ করানোর ঘোষণা দেন।

অত্যাচারীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মক্কা থেকে হিজরতের সময় যখন আসে আর তখন তিনি (সা.) পরম গাম্ভীর্যের সাথে মক্কা থেকে হিজরত করেন।

গুহায় আশ্রিত অবস্থায় শত্রুরা যখন মাথার ওপর এসে পৌঁছে তখনও আল্লাহতায়ালার প্রতি কীরূপ অসাধারণ আস্থা!

তার প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রেখে তিনি (সা.) বলেছিলেন, হজরত আবু বকর (রা.) এ সম্পর্কে বর্ণনা করেন, আমি মহানবী (সা.)-এর সাথে গুহায় ছিলাম। আমি মাথা উঁচিয়ে তাকালে হঠাৎ পশ্চাদ্ধাবনকারীদের পা দেখতে পাই।

তখন আমি মহানবী (সা.)-এর সমীপে নিবেদন করি, হে আল্লাহর রাসুল! কেউ যদি একটু ঝুঁকে তাকায় তবে আমাদের দেখে ফেলবে।

তিনি (সা.) বললেন, হে আবু বকর! নীরব থাক, আমরা দু’জন আর আমাদের সাথে তৃতীয় জন রয়েছেন ‘আল্লাহতায়ালা’। এটি হল, আল্লাহর ওপর আস্থার সেই উন্নত মান যা একমাত্র মহানবী (সা.)-এর জীবনেই আমরা দেখতে পাই।

এরপর দেখুন! গুহা থেকে বেরিয়ে তিনি (সা.) যখন যাত্রা আরম্ভ করেন তখন শত্রুর ভয়ের বিষয়ে কীরূপ ভ্রুক্ষেপহীনতা এবং আল্লাহতায়ালার সত্তায় কত গভীর আস্থা তার (সা.) ছিল।

হজরত আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, হিজরতের সময় ঘোড়া ছুটিয়ে আমাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে করতে সোরাকা যখন আমাদের নিকটে পৌঁছে যায় তখন আমি নিবেদন করি, হে আল্লাহর রাসুল!
পশ্চাদ্ধাবনকারীরা তো একেবারে নাকের ডগায় পৌঁছে গেছে আর আমি আমার জন্য নয় বরং আপনার জন্য চিন্তিত। তখন তিনি (সা.) বলেন, ‘লা তাহযান ইন্নাল্লাহা মা আনা’ অর্থাৎ বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন (সুরা আত তাওবা, আয়াত: ৪০)।

অতএব, ওই সময়ই মহানবীর (সা.) দোয়ার কল্যাণে সোরাকার ঘোড়ার পা মাটিতে দেবে যায় আর সে মহানবী (সা.)-এর নিকট নিরাপত্তা চায়।

সে সময় তিনি (সা.) সোরাকার স্বপক্ষে এই মহান ভবিষ্যদ্বাণী করেন, হে সোরাকা! তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে যখন কিসরার কঙ্গণ তোমার হাতে পরানো হবে? আর এই ভবিষ্যদ্বাণীও পরবর্তীতে অত্যন্ত মহিমার সাথে পূর্ণ হয়।

এরপর সেই মহিমাও দেখুন! যখন তিনি (সা.) শত্রুর কাছ থেকে মাত্র এক ফুট দূরত্বে নিরস্ত্র দাঁড়িয়ে ছিলেন আর শত্রু তরবারী উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু মহানবীর (সা.) কোন ভয় ছিল না।

কীরূপ ঈমান, বিশ্বাস এবং আল্লাহতায়ালার সত্তায় মহানবীর (সা.) কতটা আস্থা ছিল।

হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘যাতুর রিকার যুদ্ধে আমরা মহানবীর (সা.) সাথে ছিলাম। একদিন আমরা ছায়াপ্রদ একটি বৃক্ষের নিকট পৌঁছাই। মহানবীর (সা.) বিশ্রামের জন্য সেটিকে নির্বাচন করা হয়।

হঠাৎ এক মুশরিক সেখানে আসে যখন কিনা মহানবীর (সা.) তরবারী গাছে ঝুলানো ছিল। সেই ব্যক্তি তরবারী উঁচিয়ে বলল, তুমি কি আমাকে ভয় পাও নাকি পাও না?

মহানবী (সা.) তাকে উত্তর দেন, না। সে আবার বলল, কে তোমাকে আমার কাছ থেকে রক্ষা করতে পারে? তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহ। এতে তার হাত থেকে তরবারী পড়ে যায়। তখন মহানবী (সা.) সেটি উঠিয়ে বললেন, এখন আমার হাত থেকে কে তোমাকে বাঁচাবে?

তখন সে বলতে আরম্ভ করে, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। তিনি (সা.) বললেন, তুমি কি এই সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই আর আমি আল্লাহর রাসুল? সে ছিল কট্টর মুশরিক।

সে উত্তরে বলল, না; কিন্তু আমি এই অঙ্গিকার করছি, আপনার সাথে আর কখনো লড়াই করবো না আর তাদের সাথেও যোগ দিব না যারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করে। তখন তিনি (সা.) তাকে ছেড়ে দেন। এরপর সে তার সঙ্গিদের সাথে গিয়ে যোগ দেয় আর তাদের বলতে থাকে, আমি এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে তোমাদের কাছে এসেছি যিনি লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম। (বোখারি, কিতাবুল মাগাজি)

একথা সত্য যে, মহানবীর (সা.) সাথে আল্লাহতায়ালার যে ব্যবহার এবং যে অঙ্গীকার ছিল, তা সাধারণ মুসলমান ও মানুষের ক্ষেত্রে হতে পারে না কিন্তু যেমনটি এই হাদীস থেকে স্পষ্ট, হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাতের বেলা মহানবীর (সা.) নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে পাহারা দেয়া হতো।

মহানবীর (সা.) প্রতি যখন এই ওহী ‘ওয়াল্লাহু ইয়া’সিমুকা মিনান্নাস’ অবতীর্ণ হল অর্থাৎ, আল্লাহতায়ালা মানুষের দুরভিসন্ধি হতে তোমাকে রক্ষা করবেন তখন মহানবী (সা.) তাবুর বাইরে উঁকি দিয়ে বললেন, তোমরা এখন চলে যেতে পার।

কেননা আল্লাহতায়ালা স্বয়ং আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু নিজ উম্মতকে আল্লাহতায়ালার সত্তায় বিশ্বাস স্থাপনের জন্য এবং তার প্রতি আস্থা রাখার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে একস্থানে তিনি (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের সত্তর হাজার মানুষ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

তারা এমন মানুষ হবে যারা অন্যের দোষ-ত্রুটিসন্ধানে থাকে না। আর তারা (গণক দ্বারা) শুভাশুভ নির্ণয়ের কুসংস্কারেও লিপ্ত থাকবে না বরং স্বীয় প্রভুর প্রতি আস্থা রাখবে।’ (বোখারি, কিতাবুর রিকাক)

এই হাদিসের আলোকে এটি স্পষ্ট হয় যে, উম্মতের লোকেরা যদি আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত শিক্ষামালার ওপর আমল করে, বৃথালাপ ও অপকর্মে লিপ্ত না হয়, বান্দার প্রাপ্য অধিকার প্রদান করে, স্বীয় প্রভুর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তার প্রতি আস্থা রাখে এবং তারই সমীপে বিনত হয় তাহলে তারা কোন হিসাবের সম্মুখীন না হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

এখানে সংখ্যার যে উল্লেখ আছে তা আধিক্য বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং পাশাপাশি এই ভবিষ্যদ্বাণীও রয়েছে যে, আমার উম্মতে ব্যাপকহারে এমন লোক সৃষ্টি হবে, যারা আল্লাহর সত্তায় ভরসাকারী হবে আর এমন মানুষ কিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্টি হতে থাকবে, ইনশাল্লাহ।

এমন নয় যে, সত্তর হাজার সংখ্যা পূর্ণ হওয়া মাত্রই  ফেরেশতারা জান্নাতের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলবে, এখন পুণ্যকর্ম সম্পাদনকারী এবং আল্লাহর সত্তায় আস্থাশীল সেই শেষ ব্যক্তি জান্নাতে ঢুকে গেছে তাই এখন আর সুযোগ নেই।

এখন তোমরা যতই আল্লাহর ওপর ভরসা কর না কেন কিংবা পুণ্য কাজ কর না কেন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। বরং এমন নয়, আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহের দ্বার কখনো বন্ধ হয় না।

তাই আসুন, বিপদাপদে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি আর তার কাছেই সাহায্য চাই। কেননা একমাত্র তিনিই পারেন বিপদাপদ দূর করতে।

সেই সাথে বাহ্যিক উপায় উপকরণের ওপর আস্থা না রেখে সব বিষয়ে আল্লাহতায়ালাকে প্রাধান্য দেই।
তবে বাহ্যিক উপকরণ ব্যবহার করতে কোন বাধা নেই কিন্তু আস্থা রাখব কেবল সৃষ্টিকর্তার ওপর। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে এর তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: গষেবক ও কলামিস্ট
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34