আল্লাহর দরবারে মিথ্যাবাদীর ইবাদত মূল্যহীন

Author Topic: আল্লাহর দরবারে মিথ্যাবাদীর ইবাদত মূল্যহীন  (Read 833 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি, রমজানের রোজা রাখছি এবং অন্যান্য ভালো কাজও করছি কিন্তু সংসারে অশান্তি যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।

নামাজে যে দোয়া করছি তাও কবুল হচ্ছে না, সন্তানরাও নানান খারাপ কাজে লিপ্ত। এর কারণ কি? এর মূল কারণ হচ্ছে আমার অন্তর ও বাহির এক নয়।

আমি মুখে বলি একটা আর করি অন্য। আমি অন্যকে যে নসিহত করি তা নিজেই পালন করি না। নিজ ঘরে সেই নসিহতের আমল নেই। আমার সবকিছুতে মিথ্যা ছেয়ে আছে।

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আর চুরি ও আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল হয় না।’ (সহিহ মুসলিম)

তাই যেব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে তার পুণ্যকর্ম আল্লাহর দরবারে মূল্যহীন।

আসলে যারা মিথ্যা বলে আল্লাহতায়ালার তাদের ওপর ভরসা নেই। তারা মনে করে মিথ্যা বলে আমি অনেক কিছু অর্জন করে নিব কিন্তু তারা বুঝে না যে, এই মিথ্যাই তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে, তার সন্তানদের ভবিষ্যত সে নষ্ট করছে। মিথ্যাবাদীদের মূলত ঈমান নেই।

যেভাবে  আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিদর্শনাবলীতে যারা ঈমান রাখে না কেবল তারাই মিথ্যা আরোপ করে থাকে।’ (সুরা নাহাল, আয়াত: ১০৫)

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম করা থেকে বিরত থেকো। কেননা এর কারণে (সাময়িক) পণ্য বেশি বিক্রি হলেও বরকত কমে যায়।’ (মুসলিম)

এখন আমরা কি দেখছি? ব্যবসায়-বাণিজ্য যে কাজই করছি সব কিছুতে মিথ্যাকে প্রাধান্য দিচ্ছি, যার ফলে সংসারের শান্তি যেন বিনষ্ট হয়ে গেছে।

একই সঙ্গে আমার ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কোন কাজে আসছে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার সকল কাজে মিথ্যার ছড়াছড়ি। যদিও আমরা জানি মিথ্যা বলার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ, তারপরও মিথ্যাই যেন আমার সঙ্গী।

দেহের প্রতিটি অঙ্গের বিষয়ে আল্লাহর দরবারে আমাদেরকে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সামান্য লাভের জন্য মিথ্যা বলে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘আর যে বিষয় তোমার জানা নেই সে বিষয়ে কোন অবস্থান নিও না। নিশ্চয় কান, চোখ ও হৃদয়-এগুলোর প্রত্যেকটি সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩৬)

আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার ওপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।’ (সুরা নাহাল, আয়াত : ১১৬)

সর্বক্ষেত্রে যারা সত্য বলে তাদের পুরস্কারস্বরূপ রয়েছে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি আর যার সাময়িক লাভের জন্য মিথ্যাকে জীবনের সঙ্গী বানিয়ে নিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন।

হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে পথ দেখায় এবং কল্যাণ মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। কোন মানুষ সত্য কথা বলতে থাকলে আল্লাহ তাকে সত্যবাদীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। মিথ্যাচার পাপাচারের দিকে নিয়ে যায় এবং পাপাচার মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোন লোক মিথ্যা কথা বলতে থাকলে আল্লাহ তাকে মিথ্যাবাদীদের তালিকাভুক্ত করেন।’ (বোখারি ও মুসলিম) 

মহানবী (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন মিথ্যার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা মিথ্যাবাদী থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়।’ (তিরমিজি)

এখন বলুন, আমি নামাজ-রোজা যাই করিনা কেন মিথ্যা যদি পরিত্যাগ না করি তাহলে আমার এ আমলে কোন লাভ নেই। তাই যেভাবেই হোক মিথ্যা পরিত্যাগ করতেই হবে। মিথ্যা পরিত্যাগ ছাড়া আমার ইবাদত আল্লাহর কাছে কোনই মূল্য নেই।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলার কারণে কারণে প্রতিনিয়ত কতই না সুখের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। 

এছাড়া আমাদের মিথ্যা বলার কারণে সন্তানদের ওপরও এর মন্দ প্রভাব বিস্তার করে। যারফলে সন্তানরাও মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে যায় আর ধীরে ধীরে তারা পরিবারের বদনামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তাই আসুন, নিজেদের পুণ্যকর্মগুলোকে আল্লাহর দরবারে গৃহীত করার জন্য মিথ্যা পরিত্যাগ করি আর পাপকর্মের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাই।

আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নিন, আমিন।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
 
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34