ভাড়া বাসায় আর কত

Author Topic: ভাড়া বাসায় আর কত  (Read 1358 times)

Offline Badshah Mamun

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1997
    • View Profile
    • Daffodil International University
ভাড়া বাসায় আর কত
« on: February 15, 2021, 01:56:37 PM »
ভাড়া বাসায় আর কত


‘ভাড়া বাসায় আর কত? ভাড়ার টাকায় শুরু হোক ঋণ শোধ। আর ঋণেই হয়ে যাক নিজের ফ্ল্যাট।’ ঠিক এমনভাবেই রহমান পাশার কাছে আবাসন ঋণের বিপণন করেছিলেন বেসরকারি এক ব্যাংকের খুচরা ঋণ বিভাগের কর্মকর্তা।

এক শিল্প গ্রুপের মধ্যম শ্রেণির কর্মকর্তা রহমান পাশাও এতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। নিজের জমানো টাকা ও ব্যাংকঋণে এখন নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন। ভাড়ার টাকায় ঋণের কিস্তি শোধ করেন। এটি ২০১৬ সালের ঘটনা। আর এখন তো সুদহার কমায় আবাসন ঋণ আরও সস্তা হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে কিছুদিন ফ্ল্যাট বিক্রির গতি কম ছিল। এখন বিক্রি বেড়েছে।

নিজের একটি ফ্ল্যাট হবে, মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে এক বড় স্বপ্ন। তাঁদের এই স্বপ্নপূরণে এখন হাতছানি দিয়ে ডাকছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা যেন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সুদের হার কমিয়ে গ্রাহকদের দীর্ঘ মেয়াদে আবাসন ঋণ দিতে নেমেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আবেদন পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঋণের অনুমোদন দিচ্ছে। অন্যরা নির্দিষ্ট সময়েই ঋণ আবেদন নিষ্পত্তি করছে।

সুদহার সর্বোচ্চ ৯%
বিদায়ী ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ব্যাংকগুলোর মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয় সুদ কমানোর। এর ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকের দেওয়া ঋণের সুদহার সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বড় চমক দেখিয়েছে। ব্যাংকটি এখন সাড়ে ৭ শতাংশ সুদে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আবাসন ঋণের গ্রাহকদের নিজের ব্যাংকে আনছে (ঋণ টেকওভার)। তবে নতুন ঋণ দিচ্ছে ৮ শতাংশ সুদে। ব্যাংকটির ‘ঠিকানা’ নামে আলাদা একটি ঋণ প্রকল্প চালু রয়েছে।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় কিছুদিন ঋণচাহিদা ছিল না। এখন ঋণের জন্য ভালো চাহিদাও আসছে। আমরাও ঋণ দিচ্ছি। এ জন্য সুদহারও কমিয়ে দিয়েছি।’

শুধু ডাচ্-বাংলা নয়, এখন সব ব্যাংকই আবাসনের মতো খুচরা ঋণকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অন্য ঋণের চেয়ে ফ্ল্যাট কেনার ঋণ বেশি নিরাপদ। কারণ, এই ঋণে খেলাপি কম এবং ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ফ্ল্যাট ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর সংকটে না পড়লে কেউ ফ্ল্যাটের মালিকানা হারাতে চান না। তাই ব্যাংকগুলো দিন দিন এই ঋণে মনোযোগ বাড়াচ্ছে। আর এখন শিল্প ঋণের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলো আবাসনসহ বিভিন্ন খুচরা ঋণে নজর বাড়িয়েছে।

বেড়েছে ঋণের সীমাও
আগে ব্যাংকগুলো ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দিতে পারত। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (লিজিং কোম্পানি) আগে থেকেই গ্রাহকের চাহিদামতো ঋণ দিতে পারছে। ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াটিও আগের চেয়ে অনেক সহজ করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলোই ঋণ দিতে ছুটছে গ্রাহকের দ্বারে দ্বারে।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক ফ্ল্যাট বিক্রির উপযোগী হয়েছে। কারণ, বড় একটা সময় ফ্ল্যাট বিক্রি বন্ধ ছিল। এখন সুদহার কমে গেছে। ভালো ঋণ আবেদনও আসছে। আমরাও ঋণ দিচ্ছি। সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ।’

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে মোট দামের ৩০ শতাংশ টাকা নিজের থাকতে হয়। অর্থাৎ, এক কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনতে প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। বাকি ৩০ লাখ টাকা ক্রেতার নিজের থাকতে হয়। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্ল্যাটের দামের পুরোটাই ঋণ হিসেবে দিতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাসন খাতে ঋণ বিতরণে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, ব্র্যাক, দ্য সিটি, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রভৃতি।

২০১৫ সালের আগে আবাসন ঋণের সুদহার ছিল ১৫ শতাংশের বেশি। ওই সময়ে অনেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে পারেননি। এতে আবাসন খাতেও বড় সংকট তৈরি হয়েছিল। অন্যান্য দেশে কম সুদ ও লিজে আবাসন ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে এমন কোনো সুযোগ এখনো সৃষ্টি করা হয়নি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্য তৈরি করে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

পথ দেখায় আইএফআইসি
দেশে আবাসন ঋণের সুদহার কমিয়ে প্রথম বড় আলোচনায় আসে বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংক। ২০১৫ সালের শুরুর দিকেও ব্যাংকটি যেখানে গৃহঋণের বিপরীতে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ সুদ নিত, সেখানে ওই বছরের ডিসেম্বরে তা কমিয়ে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে শুরু করে। তখন ব্যাংক খাতে সুদহার ছিল ১৫ শতাংশের ওপরে। এর ফলে কম সুদে ঋণ বিতরণে সাফল্য আসে। গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি আবাসন ঋণ নেন আইএফআইসি ব্যাংক থেকে। ব্যাংকটির ‘আমার বাড়ি’ নামে আলাদা একটি পণ্য রয়েছে। এই ব্যাংক বাড়ি নির্মাণে ২ কোটি ও সেমিপাকা ভবন নির্মাণে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। আইএফআইসি ব্যাংকের দেখাদেখি অন্যান্য ব্যাংক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই পথে হাঁটতে শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাসন খাতে ঋণ বিতরণে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, ব্র্যাক, দ্য সিটি, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রভৃতি। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ), আইডিএলসি, আইপিডিসি, ন্যাশনাল হাউজিং, লংকাবাংলা এগিয়ে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহার এখন সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁদের আয় নিয়মিত ছিল, তাঁদের হাতে টাকা জমে গেছে। কেউ দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে পারেননি। তাঁদের অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার দিকে ঝুঁকছেন। ২০১৬ ও ১৭ সালে আবাসনে যে ঋণ যেত, এখন তার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হচ্ছে। এখন ঢাকায় প্রতিদিন ১০-১২ টি নতুন ঋণ বিতরণ হচ্ছে। এ ছাড়া ছোট বাড়ি নির্মাণে প্রতি মাসে এক শ জনের বেশি গ্রাহককে ঋণ দিচ্ছি।’

ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেতনভুক্ত, স্ব-নিয়োজিত (সেলফ-এমপ্লয়েড), ব্যবসায়ী এবং বাড়িওয়ালাদের ঋণ দিয়ে থাকে। আবার ব্যক্তিগত বা যৌথ, দুইভাবেই আবেদন করা যায়। ঋণ পাওয়ার জন্য বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। যাঁরা চাকরিজীবী, তাঁদের মাসিক আয় হতে হবে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা।

ঋণ আবেদনপত্রে সংযুক্ত করতে হবে আবেদনকারী এবং গ্যারান্টারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পরিষেবা বিলের কপি (গ্যাস বিল, টেলিফোন বিল, ওয়াসা বিল) ও অন্যান্য আয়–সংক্রান্ত নথিপত্র।

এ ছাড়া বেতন বা আয়ের এক বছরের ব্যাংক লেনদেন বিবরণী (স্টেটমেন্ট), ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ (ই-টিন) কপি জমা দিতে হবে। বাড়ির নির্মাণ ঋণ হলে জমির মালিকানা–সংক্রান্ত নথিপত্র ও অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ বছর মেয়াদ পর্যন্ত যেকোনো পরিমাণ হোম ঋণ প্রদান করছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিবিএইচের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিমুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের শেষ চার মাস থেকে ভালো ঋণ যাচ্ছে। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। আর সুদহার আগের চেয়ে কম হওয়ায় গ্রাহকদেরও আগ্রহ বেড়েছে। বলা যায়, সব মিলিয়ে আবাসন ঋণ আগের চেয়ে বেশি যাচ্ছে।

নথিপত্র যা লাগবে
ফ্ল্যাট কেনার ঋণের জন্য অবশ্য কাগজপত্র কম লাগে। এ জন্য ফ্ল্যাট ক্রেতা এবং ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পাদিত ফ্ল্যাট ক্রয়ে রেজিস্ট্রি করা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে। এ ছাড়া জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তিপত্রের মূল কপি এবং বরাদ্দপত্র লাগবেই।

বাড়ি নির্মাণ ঋণের জন্য প্রথমেই দরকার যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নকশার সত্যায়িত ফটোকপি, মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান, খাজনা রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি। এ ছাড়া লাগবে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত কপি। জেলা বা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি)। সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে মূল বরাদ্দপত্র এবং দখল হস্তান্তরপত্রও লাগবে।

© প্রথম আলো
Md. Abdullah-Al-Mamun (Badshah)
Senior Assistant Director
Daffodil International University
01811-458850
cmoffice@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd

www.fb.com/badshahmamun.ju
www.linkedin.com/in/badshahmamun
www.twitter.com/badshahmamun