দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৮টি

Author Topic: দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৮টি  (Read 1317 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2667
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management


বঙ্গোপসাগর থেকে উড়ে আসা সাদা মেঘের ছায়া আর বসন্তের ফুরফুরে হাওয়ার খেলা চলছে প্রকৃতিতে। সূর্য এখনো তেতে ওঠেনি। নেই শীতও। এমন দারুণ সময়ে বুকভরে নিশ্বাস নিতে কার মন না চায়? কিন্তু ঢাকায় নিশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢোকা এ বাতাস মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, রাজধানীর বাতাসকে এখন বিষিয়ে তুলছে যানবাহনের ধোঁয়া। বায়ুদূষণের জন্য অর্ধেক (৫০%) দায়ই মূলত তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই ধোঁয়ার। ৪০ ভাগ দূষণের উৎস খড়, কাঠ, তুষের মতো জৈব বস্তুর ধোঁয়া ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা। বাকি ১০ শতাংশ দূষিত বস্তুকণা আসে ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে।

এ থেকে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর বায়ুদূষণের উৎসের একটি বড় বদল ঘটে গেছে। এক যুগ ধরে ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হিসেবে ইটভাটাকে মনে করা হতো। কিন্তু এই জরপি বলছে, ঢাকার বাতাসে দূষিত বস্তুর উৎস হিসেবে ইটভাটার স্থান দখল করেছে যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ু মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক আবদুস সালামের নেতৃত্বে করা এই গবেষণায় বলা হয়েছে, বাতাসে এই সব কটি সূক্ষ্ম বস্তুকণা মিলে তৈরি করছে কালো কার্বন, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই কালো কার্বন বছরের অর্ধেকের বেশি সময়জুড়ে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোয় চলা অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতকাজের কারণে প্রচুর ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে। কালো কার্বন ওই ধুলায় ভর করে উন্মুক্ত স্থানের পাশাপাশি বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই ঘরের ভেতরে থাকলেও নিশ্বাসের সঙ্গে তা শরীরে ঢুকে পড়ছে।

অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙে ফেলছে, বন্ধ করে দিচ্ছে—এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এখন বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। এগুলোর বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি দেশে এখন প্রচুর বড় অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। সেগুলোতে ঠিকমতো ধুলা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

রাস্তায় বের হলেই দেখা যাবে ভুরভুর করে কালো ধোঁয়া ছেড়ে দিব্যি সবার মুখ অন্ধকার করে ছুটে যাচ্ছে বাস। খোদ ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের গায়ে কালো ধোঁয়া ছেড়েও চলে যাচ্ছে বাস। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। যানবাহনের সব ধোঁয়াই দূষণের জন্য দায়ী। কালো ধোঁয়ায় দূষণের পরিমাণ বেশি। আর কালো ধোঁয়ার বড় উৎস মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো। যেগুলো থেকে কালো বিষাক্ত ধোঁয়া বের হয়। প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে এ ধরনের যানবাহন বাড়ছে। ২০২০ সালের হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৮টি। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৬টি গাড়ি রয়েছে রাজধানীতে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ক্যামিকেল সোসাইটি দক্ষিণ এশিয়ায় কালো কার্বনের উৎস পরিমাপ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অব এয়ার রিসার্চ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের আটজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি করা হয়। তাতেও দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী কালো কার্বন। আর এর ৫২ শতাংশ আসে জৈব জ্বালানি অর্থাৎ জ্বালানি তেল পোড়ানো ধোঁয়া থেকে।

আবার বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে ঢাকার বায়ুর মান ১২ শতাংশ বেশি খারাপ হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু প্রকল্প থেকে ২০১২ সালে সর্বশেষ রাজধানীর বায়ুদূষণের উৎস নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য দায়ী উৎসগুলোর মধ্যে ইটভাটার অবদান প্রায় ৫৮ শতাংশ। ধুলা ও ধোঁয়া থেকে আসে ২৫ শতাংশ, জৈব বস্তু পোড়ানো থেকে আসে সাড়ে ৭ শতাংশ। বাকি দূষণের কারণ শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য উৎস।

ওই গবেষণার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ অধিদপ্তর সারা দেশে ইটভাটার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযান চালায়। সরকারি ওই সংস্থাটির ২০২০ সালের হিসাবে, সারা দেশে ৮ হাজার ৩৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ইটভাটা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। আর পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই ২ হাজার ৫১৩টি ইটভাটার। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র—এ দুটি শর্তই পালন করেনি, এমন ইটভাটা রয়েছে তিন হাজারের বেশি।

গত দুই বছরে এ ধরনের প্রায় দুই হাজার ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে এক হাজার ইটভাটা পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে মোট ৪৫ কোটি টাকা। এসব অভিযানের পর ইটভাটাগুলো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তর করার পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক রুহিনা ফেরদৌসী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সত্যি বায়ুদূষণের উৎস হিসেবে ইটভাটার চেয়ে অন্যান্য উৎসের অবদান বাড়ছে। তাই আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধুলার বিরুদ্ধেও অভিযান জোরদার করব।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের উচিত বায়ুদূষণের সব কটি উৎস বন্ধে সমান উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু ইটভাটা ছাড়া দূষণের অন্য উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি উদ্যোগ দেখা যায় না। বিশ্বের বড় শহরগুলোয় সারা দিনের ধুলোগুলো রাতে পানি দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হয়। আমাদের এখানে দিনের বেলা শুধু কোনোমতে ঝাড়ু দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বড় নির্মাণ অবকাঠামো তৈরির সময় ধুলা নিয়ন্ত্রণে বালু ও সিমেন্ট সব সময় ঢেকে রাখা হতো। কিন্তু রাজধানীর কোনো অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ধুলা নিয়ন্ত্রণেরর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। গাড়ির ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণেও শিথিলতা। আইনুন নিশাত বলেন, ‘বায়ুদূষণের এসব উৎস নিয়ন্ত্রণে কী করতে হবে, তা আমরা সবাই জানি। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজের কাজটা তো করতে হবে।’


Source: https://www.prothomalo.com/bangladesh/environment/%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%95-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A7%E0%A7%8B%E0%A6%81%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0