চোখের প্রেসার বা গ্লুকোমা সম্পর্কে ও অন্ধত্ব রোধে সচেতনতার জন্য প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৮-১৩ মার্চ গ্লুকোমা সপ্তাহ পালিত হয়।
এ বছরও বাংলাদেশসহ সব দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। চোখের প্রেসার মানুষের অজ্ঞতার জন্য ব্লাড প্রেসারের চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। চোখের উচ্চ প্রেসারকে অকুলার হাইপার টেনশন বলে।
এ ক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক চোখের চাপ ১১-২১ মিমি. মার্কারির চেয়ে বেশি হলেই অকুলার হাইপার টেনশন ধরা হয়। যদিও অপটিক স্নায়ু বা দৃষ্টি পরিধির (ভিস্যুয়াল ফিল্ড) কোনো পরিবর্তন নাও হতে পারে। তবে যদি অপটিক স্নায়ু বা ভিস্যুয়াল ফিল্ডের ক্ষতি হয় এবং চোখের উচ্চ প্রেসার থাকে তাহলে তাকে গ্লুকোমা বলে।
গ্লুকোমা কেন হয়?
১. সিলিয়ারি এপিথিলিয়াম থেকে পানিজাতীয় চোখের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য যে প্রত্যক্ষ নিঃসরণ হয়, যদি তার পরিমাণ বেশি হয়। ২. পরোক্ষ নিঃসরণ ২০ শতাংশ স্বাভাবিক। যদি কোনো কারণে (ওষুধ দ্বারা) এর চেয়ে কম হয় তাহলে গ্লুকোমা হয়। ৩. যদি ট্রাবিকুলাম, কর্নিও স্কেলেরাল সেমওয়ার্ক, স্নেমস ক্যানাল ইত্যাদি কোনো পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তাহলেও গ্লুকোমা হয়।
গ্লুকোমা আছে কিনা কিভাবে জানা যায়
১. চোখের প্রেসার মাপার যন্ত্র টনোমিটার দিয়ে। ১১-২১ mm Hg-এর বেশি হলে গ্লুকোমা অফথালামোসকোপ দিয়ে অপটিক স্নায়ুর পরিবর্তন হয়েছে কিনা দেখা।
২. দৃষ্টি পরিধি বা ভিস্যুয়াল ফিল্ড দেখার যন্ত্র পেরিমিটার/এনালাইসার (হাসফ্রে বা অক্টোপাস দিয়ে)।
৩. চোখের কোণ সরু কিনা দেখে।
৪. চোখের দৃষ্টিশক্তির লক্ষণগুলো পর্যালোচনা করা। ক. আলোর পার্শ্বে রংধনুর মতো দেখা; খ. চোখে ব্যথা হওয়া; গ. মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা; ঘ. চোখ লাল হওয়া/ঝাপসা দৃষ্টি; ঙ. চোখ দিয়ে পানি পড়া; চ. চোখে ঝাপসা দেখা; ছ. দৃষ্টির পরিধি কমে যাওয়া (ভিস্যুয়াল ফিল্ড); জ. মনি বড় হওয়া (ডাইলেটেড পিউপিল); ঝ. শেষের দিকে চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যাওয়া।
সবচেয়ে মারাত্মক হলো কখনো কোনো লক্ষণ ছাড়াই চোখের প্রেসারে মানুষ অন্ধত্ববরণ করে।
গ্লুকোমার প্রকারভেদ
ক. জন্মগত : গ্লুকোমা বা বুফথালমোস এবং খ. একোয়ার্ড বা জন্ম-পরবর্তী সংশ্লিষ্টতা। ১. প্রাইমারি : ক. চোখের কোণ ছোট হওয়া; খ. খোলা কোণ থাকা (সিম্পল গ্লুকোমা বা ক্রনিক গ্লুকোমা)। ২. সেকেন্ডারি : চোখের অন্য রোগের কারণে যেমন- ইউভিয়াইটিস, কর্নিয়ার ক্ষত, চোখের টিউমার, বিট্রাসে রক্ত জমা। ছানি রোগ হলেও অপারেশন না করালে।
চিকিৎসা
১. চোখের ওষুধ : চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো পাইলো ড্রপ, টিমো ড্রপ, ল্যাটোনো প্রষ্ট, প্রষ্টগ্লানডিন, আলফাগান, বেটাগান।
২. খাওয়ার বড়ি : এসিমক্স, ইলেকট্রো কে।
৩. ট্রাবিকুলোপ্লাষ্টি : লেজার।
৪. অস্ত্রোপচার : আইরিসে ছিদ্র করা, ট্রাবিকুলেক্টমি/ট্রাবিকুলেক্টমি, সিজ বা ফিল্টারিং অপারেশন।
সেকেন্ডারি গ্লুকোমার কারণগুলো দূর করা। যেমন, ছানি রোগ দীর্ঘদিন অপারেশন না করালে; ছানি অপারেশনের পর ইউভিয়াইটিস বা কর্নিয়ার ক্ষত চিকিৎসা না করালে।
প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : চক্ষু বিশেজ্ঞ ও সার্জন; চেয়ারম্যান, কমিউনিটি অফথালমলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়