শিক্ষা চলছে একদিকে, চাকরির বাজার আরেক দিকে

Author Topic: শিক্ষা চলছে একদিকে, চাকরির বাজার আরেক দিকে  (Read 2193 times)

Offline nafees_research

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 344
  • Servant of ALLAH
    • View Profile
শিক্ষা চলছে একদিকে, চাকরির বাজার আরেক দিকে

আমরা মধ্য ও উন্নত আয়ের দেশের দিকে যাচ্ছি। দেশে অনেক শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ের অভাব নেই। কিন্তু সমস্যা হলো এসব তরুণ প্রজন্মের চাকরি–উপযোগী শিক্ষার অভাব রয়েছে। ইংরেজি ভাষায়ও তাঁরা দক্ষ নন। এই কারণে তাঁদের বাদ দিয়ে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিতে হচ্ছে। এসব বিদেশি বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে আমাদের শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে চাকরি খুঁজছেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই চাকরি দরকার। অধিকাংশই চাকরি পাচ্ছেন না। এ জন্য অন্যতম দায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। তাই বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতায় আমরা হেরে যাচ্ছি।

এক বিচিত্র নিয়ম আমাদের পরীক্ষার! পরীক্ষা আসছে তো ইংরেজি গ্রামার, প্যারাগ্রাফ, ডায়ালগ, লেটার—এসব মুখস্থ করো। পরীক্ষায় লিখে দাও। পাস ঠেকায় কে। এবার সনদ নিয়ে ঘুরতে থাকো। কিন্তু এ সনদে চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। দেখা যাচ্ছে, এই সনদধারীদের একটি বড় অংশ ভালো করে ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখতে পারে না। ই-মেইল করতে পারে না। ইংরেজিতে কথা বলতে পার না। অধিকাংশই বিদেশি বায়ারসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সামনে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে পারে না। কারণ, শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যবহারিক চর্চা নেই বললেই চলে।

আবার অনেক প্রকৌশলীর অবস্থাও একই। লেখাপড়া শেষ করছেন। হাতেকলমে শিখছেন না। এ কারণে চাকরিজীবনে ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না।

বিশ্বে প্রযুক্তি পরিবর্তনের ধারা চলছে। নতুন বিষয় আসছে। আমরা দাঁড়িয়ে আছি একই জায়গায়। ব্যবসায়ী নেতা ফজলুল হকের মতে, প্রতিষ্ঠানের মধ্য ও উচ্চপর্যায়ে পেশাদার মানবসম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থা আজকের দিনের চাকরি বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বিশেষ করে টেক্সটাইল ও পোশাকশিল্পের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীর যোগ্যতার অবস্থা খুবই খারাপ। আবার যাঁরা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন, তাঁদেরও অধিকাংশ ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় সব ক্ষেত্রেই এ ধরনের সমস্যা।

এখন দেশে হাজার হাজার উৎপাদনশীল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। চাকরির বিজ্ঞাপনে দাপ্তরিক পদের তুলনায় অনেক গুণ বেশি আবেদনপত্র পাওয়া যায়। কারিগরি পদের জন্য আবেদন খুব কম পড়ে। দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় পড়াশোনা করেন। কারিগরি বিষয়ে আগ্রহ কম।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এ ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর সাধারণ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা কমান দরকার। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষার প্রবণতা বাড়ান দরকার। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মতে কোনো শিল্পের জন্য কী ধরনের মানবসম্পদ দরকার, সেট ঠিক করতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি তৈরি করতে হবে। জার্মানিসহ অনেক উন্নত দেশে সেটাই হয়।

পৃথিবীর কোনো দেশে শতভাগ দক্ষ মানবসম্পদ থাকে না। আমাদের মতো দেশে এ সমস্যা আরও গভীর। কোনো সন্দেহ নেই সংকট তীব্র। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এটাও কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো নীতিনির্ধারকদের মানসিকতায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সঠিক উদ্যোগ। কার্যকর পরিকল্পনা এবং দ্রুত বাস্তবায়নের মানসিকতা।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, যাদের আমরা অদক্ষ বলছি, তাদের নিয়েই বিদেশিরা কাজ করছেন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে বাংলাদেশিদের কাজের সুনাম আছে। সুনাম আছে তাদের দক্ষতা ও সততার। বাংলাদেশিরা বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন। আর আমরা দক্ষ মানবসম্পদ পাচ্ছি না।

বিশ্বের প্রায় কোনো দেশেই সরকার সব করে না। বেসরকারিভাবে ও দায় নিতে হয়। দেশের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান শত কোটি টাকা আয় করছে। তাদের কয়টা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে? কয়টা গবেষণাকেন্দ্র আছে? তাদেরও দক্ষ মানব সম্পদের চাহিদা রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানেরও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দায় নেওয়া জরুরি।

অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অবৈধ শ্রমিক কাজ করছেন। অবৈধ শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠান কেউই দেশের প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে না। শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান না অনেক সরকারি প্রকল্পেও অবৈধ বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এটা কী করে সম্ভব! অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের চুক্তিতে বিদেশি নিয়োগের বিষয় থাকতে পারে। এখানে কঠিন শর্ত থাকা জরুরি। সেটা হলো শুধু যেসব কাজ দেশের কর্মী দিয়ে করা সম্ভব না কেবল সে ক্ষেত্রে বিদেশি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের মানবসম্পদ দিয়ে বিশেষায়িত কাজের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি পোশাকশিল্প নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী দেশের ২৪ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানাতে বিদেশি কর্মী আছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক শ কোটি ডলার বিদেশিরা নিয়ে যায়।

আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকার তৈরি করছে। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ কর্মবাজারে আসছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাঁরা উচ্চশিক্ষিত হচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই বেকার থাকছেন। তারপরও কোনোভাবেই থামছে না উচ্চশিক্ষার ঢল। প্রতিটি শিক্ষার্থীর পেছনে বিপুল রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিক অর্থ ব্যয় হয়। অনেক অর্থ ও সময় ব্যয় করে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করছেন। এত কিছু করে চাকরির বাজারে তিনি কতটুকু যোগ্য হচ্ছেন? আজকের দিনে সেটি একটি অনেক বড় প্রশ্ন। এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের এখনই গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে চাকরির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা কারিকুলাম করতেই হবে। শুধু ইংরেজিটা ঠিকভাবে শেখাতে পারলেও সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়। দেশ স্বাধীনের প্রায় ৫০ বছরেও এতটুকু উন্নতি আমরা করতে পারিনি। এটা খুবই দুঃখজনক।

আশফাকুজ্জামান: সাংবাদিক

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/article/1639261/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87
Nafees Imtiaz Islam
Deputy Director, IQAC, DIU and
Ph.D. Candidate in International Trade
University of Dhaka

Tel.:  65324 (DSC-IP)
e-mail address:
nafees-research@daffodilvarsity.edu.bd  and
iqac-office@daffodilvarsity.edu.bd

Offline zafrin.eng

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 390
  • Test
    • View Profile
Thanks for sharing the post  :)

Offline kamrulislam.te

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 212
  • Success doesn't come to u, u have to go after it.
    • View Profile
Md. Kamrul Islam
Lecturer, Department of Textile Engineering
Faculty of Engineering, DIU
Cell : +8801681659071
Email: kamrulislam.te@diu.edu.bd
https://sites.google.com/diu.edu.bd/md-kamrul-islam/