ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

Author Topic: ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত  (Read 599 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত
           
লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তি, গুনাহ থেকে পমাহে রমজানে যেসব আমল দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্যলাভে ধন্য হয়, তার মধ্যে এর শেষ দশকের ইতেকাফ অন্যতম। রমজানের শেষ দশক আগমন করলে রাসুল (সা.) খুব বেশি   ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হয়ে পড়তেন। হজরত    আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আগমন করত রসুল   (সা.) তাঁর কোমর বেঁধে নিতেন, রাত জাগতেন আর তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও জাগাতেন।’ ইবনে খুজাইমা।লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তি, গুনাহ থেকে পরিত্রাণ,একাকী সংগোপনে মহান প্রভুর ইবাদত, আত্মিক উন্নতি সাধন, বাকি এগারো মাসের ইবাদতের অনুশীলনসহ অসংখ্য বরকতসমৃদ্ধ আমলের সমন্বয় হলো ইতেকাফ।

ইতেকাফের পরিচয়:

ইতেকাফ শব্দের অর্থ স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন বা যে কোনো দিন দুনিয়াবি সব কাজকর্ম তথা পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদে বা ঘরের পবিত্র স্থানে ইবাদতের নিয়তে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা মসজিদে ইতেকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হবে না।’ সূরা বাকারা : ১৮৭।

ইতেকাফের শর্তসমূহ:

তেকাফের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তা হলো— ১. পুরুষ লোক জামে মসজিদে ইতেকাফ করবে আর মহিলারা ঘরের নিভৃত স্থানে ইতেকাফ করবে ২. ইতেকাফের নিয়ত করতে হবে ৩. সর্বদা পাক-পবিত্র থাকতে হবে ৪. রমজানের ইতেকাফকারী রোজাদার হবেন।

ইতেকাফের প্রকারসমূহ :

ইতেকাফ তিন প্রকার— ১. সুন্নত ইতেকাফ : রমজানুল মোবারকের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফই সুন্নত। ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতেকাফের সময়। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর এ দিনগুলোতেই ইতেকাফ করতেন। এ কারণে একে সুন্নত ইতেকাফ বলা হয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রসুল (সা.) আমৃত্যু রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতেকাফ করেছেন।’ বুখারি।

২. ওয়াজিব ইতেকাফ : মানতের ইতেকাফ ওয়াজিব। ইবনে উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি জাহেলী যুগে হারাম শরীফে ইতেকাফের মান্নত করেছিলাম, এখন কী করব? তিনি জবাব দিলেন, তুমি তোমার মানত পূরণ কর। বুখারী। তা ছাড়া সুন্নত ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব।

৩. নফল ইতেকাফ : এ ইতেকাফ মানুষ যে কোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ মন চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতেকাফের নিয়ত করা সুন্নত। এ তিন ধরনের ইতেকাফের ভিন্ন ভিন্ন বিধান আছে। আজ আমরা শুধু সুন্নত ইতেকাফের কিছু বিধান আলোচনা করব।

রমজানের ইতেকাফের হুকুম :

রমজানের সুন্নত ইতেকাফকারীদের ২০ রমজানের সূর্যাস্তের আগে মসজিদের সীমানায় প্রবেশ করতে হবে এবং ২৯ বা ৩০ রমজান পরবর্তী মাস তথা শাওয়ালের চাঁদ দেখে মসজিদ থেকে বের হতে হবে। রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গুনাহ হবে। ফোতওয়ায়ী শামি।

ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত :

রমজানের শেষ দশকে এ সুন্নত ইতেকাফের অধিক গুরুত্বের কারণ হলো লাইলাতুল কদরের নেকি লাভ করতে হলে ইতেকাফের মাধ্যমেই সহজে করা যায়। কারণ ইতেকাফকারী রমজানের শেষ দশকের সব রজনীতেই আমলে মগ্ন থাকেন। কোনো এক রজনী তো কদর হবেই। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও এই মহিমা অনুসন্ধানে প্রথম ১০ দিন ও মাঝের ১০ দিন ইতেকাফ করেছি, অবশেষে আমার কাছে একজন ফেরেশতা এসে বলেছে যে, তা শেষ দশকে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা ইতেকাফ করতে চায় তারা যেন শেষ দশকে ইতেকাফ করে।’ অতঃপর সাহাবায়ে কিরাম তাঁর সঙ্গে শেষ দশকে ইতেকাফ করলেন। মুসলিম।

শবেকদরকে পাওয়া এবং এই পবিত্র রাতের ঘোষিত ফজিলত থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য ইতেকাফ থেকে উত্তম আর কোনো উপায় নেই। কারণ আল্লাহতায়ালা কদরের রাতকে নির্দিষ্ট করে দেননি; বরং এর তারিখ গোপন রেখেছেন; যাতে মুসলমানরা রমজানের শেষ ১০ দিনের সব বেজোড় রাতে আমল করতে থাকে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে লাইলাতুল কদর খোঁজ কর।’ বুখারি।

স্বাভাবিকভাবে মানুষের পক্ষে রাতের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে নিয়োজিত থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু ইতেকাফ অবস্থায় যদি রাতে ঘুমিয়েও থাকে, তবু তাকে ইবাদতকারীদের মধ্যে শামিল করা হবে। তখন শবেকদরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে ব্যয় করার ফজিলত অর্জন করবেন। লাইলাতুল কদর তালাশের পাশাপাশি ইতেকাফকারীর জন্য তার আত্মশুদ্ধি হাসিল, আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন, পৃথিবীর সবকিছুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মাবুদের একচ্ছত্র ইবাদত করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইতেকাফকারী গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে। তার সব নেক আমল এমনভাবে লিপিবদ্ধ হতে থাকে, যেভাবে সে নিজে করত।’ ইবনে মাজাহ।

ইতিকাফে বর্জনীয়:

ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বর্জনীয়- ১. ইতিকাফ অবস্থায় বিনা ওজরে মসজিদের বাইরে যাওয়া, ২. দুনিয়াবি আলোচনায় মগ্ন হওয়া, ৩. কোনো জিনিস বেচাকেনা করা, ৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ করা, ৫. ওজরবশত বাইরে গিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত বিলম্ব করা ও ৬. স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা। এসব কাজ করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। ইতিকাফ দীর্ঘ সময় ধরে করা উত্তম,বিশেষত মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ অবস্থায় থাকায় ‘লাইলাতুল কদর’ বা হাজার মাসের শ্রেষ্ঠতম ভাগ্যের রজনী লাভের সৌভাগ্য হতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের পবিত্র মাহে রমজানে মসজিদে ইতিকাফ করার মাধ্যমে গুনাহের পাপরাশি থেকে বেঁচে থেকে অশেষ নেকি লাভের মোক্ষম সুযোগ দান করুন ।

« Last Edit: September 15, 2021, 02:28:35 PM by ashraful.diss »
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka