গরিব ও দুর্বলরা সমাজে মূল্যহীন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান

Author Topic: গরিব ও দুর্বলরা সমাজে মূল্যহীন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান  (Read 674 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
গরিব ও দুর্বলরা সমাজে মূল্যহীন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান

দুনিয়ায় মানুষ সাধারণত গরিব, দুর্বল ও অসহায় মানুষকে হীনচোখে দেখে। এর বিপরীতে ধনী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর মানুষকে মর্যাদার চোখে দেখা হয়। কিন্তু আল্লাহর কাছে ধন-সম্পদ ও সামাজিক প্রভাব মর্যাদার মাপকাঠি নয়। গরিব ও দুর্বল মানুষও আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হতে পারে, যদি সে মুত্তাকি হয়।,তাকওয়াবান নেককার ব্যক্তির মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি, হতে পারে সে গরিব কিংবা ধনী। এখানে গরিব ও দুর্বল শ্রেণির মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো—

মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে গরিব-মিসকিন ও অসহায়কে অবজ্ঞার চোখে দেখা। এরা অভাব-অনটনে যেমন জর্জরিত, তেমনি সম্পদশালীর কাছে অবহেলিত। এদের পক্ষে কথা বলার কোনো মানুষ নেই। নেই তাদের মানসিক কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো কোনো স্বজনও। সামাজিকভাবে যেহেতু এরা মর্যাদাহীন, তাই ব্যক্তির কাছেও মূল্যহীন। মানুষের ভালোবাসা থেকে এরা নিদারুণভাবে বঞ্চিত। অথচ বিশ্বমানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) এই শ্রেণির লোকদের ভালোবাসার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

আবু জার (রা.) বলেন, ‘আমার বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) আমাকে সাত কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। (১) আমি যেন গরিব-মিসকিনকে ভালোবাসি ও তাদের নৈকট্য লাভ করি। (২)আমি যেন ওই ব্যক্তির দিকে তাকাই, যে আমার চেয়ে নিম্ন স্তরের এবং ওই ব্যক্তির দিকে না তাকাই, যে আমার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের। (৩) আমি যেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করি, যদিও তারা একে ছিন্ন করে। (৪) আমি যেন কারো কাছে কিছু  না চাই অর্থাৎ হাত না পাতি, আমার সমস্ত চাওয়া পাওয়া যেন আল্লাহর কাছে হয়। (৫) আমি যেন সর্বদা  ন্যায় ও সত্য কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়। (৬) আমি যেন আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করি এবং (৭) তিনি আমাকে এই নির্দেশই দিয়েছেন যে আমি যেন বেশির ভাগ সময় ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করি। কেননা এই শব্দগুলো আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে আগত।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত, হাদিস : ৫২৫৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৪৯)

গরিব ও দুর্বলদের মর্যাদাস

১. গরিব ও দুর্বলদের কারণে রিজিক প্রদান করা হয় :

আল্লাহভীরু গরিব ও দুর্বল শ্রেণির লোকেরা সামাজিকভাবে হেয় হলেও মহান আল্লাহর কাছে মর্যাদাশীল। এ শ্রেণির কারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের রিজিক দিয়ে থাকেন। সাদ (রা.) নিজেকে নিম্ন শ্রেণির লোকদের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল মনে করলে রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুর্বল লোকদের দোয়ায় তোমাদের সাহায্য করা হয় ও রিজিক দেওয়া হয়।’ (বুখারি, মিশকাত, হাদিস : ৫২৩২)

২. জান্নাতের অধিবাসীদের বেশির ভাগ সম্পদহীন :

সাধারণত সম্পদশালীদের কমসংখ্যকই আল্লাহভীরু হয়ে থাকে। বরং এদের বেশির ভাগ হয় উদ্ধত, অহংকারী। ধরাকে করে সরাজ্ঞান। আখিরাতে পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত ও জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই। দুনিয়া নিয়েই এরা মহা ব্যস্ত। অথচ এই সাধারণ জ্ঞানটুকু তাদের ঠিকই আছে যে দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। যেকোনো সময় এখানে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাবে। এর পরও আখিরাতের প্রস্তুতি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ফলে চূড়ান্ত বিচারে তারা হবে চরমভাবে ব্যর্থ। জ্বলন্ত হুতাশনে জীবন্ত পুড়বে যুগ যুগ ধরে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি, যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তাহলে তা তিনি পূর্ণ করে দেন। (তিনি আরো বলেন) আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক ব্যক্তি।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৫১০৬)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ অধিবাসী হলো গরিব-মিসকিন। আর জাহান্নামে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ নারী।’ (মুসলিম ও  মিশকাত, হাদিস : ৫২৩৪)

যারা দারিদ্র্যকে নিজের দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করেন, আশা করি হাদিসগুলো তাদের লালিত বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারবে। দুনিয়াতে সম্পদের দীনতাই আপনাকে অগ্রগামী জান্নাতি হতে সহায়তা করবে, ইনশাআল্লাহ।

৩. ধনীদের ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ :

দুনিয়াবঞ্চিত এই গরিব অসহায়দের জন্য সুখের বিষয় হলো, ধনীদের আগেই এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে মূল্যহীন থাকলেও আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনে সবার আগে জান্নাতে প্রবেশের মহা সম্মানে ভূষিত হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা তাদের ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর
তা হলো (আখিরাতের) অর্ধদিনের সমান।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৫৩)

মুমিনদের করণীয়

১. গরিব বলে কাউকে অবজ্ঞা না করা :

গরিব ও অসহায় মুসলমানদের অবজ্ঞা-অবহেলা না করতে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখো, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৮)

২. নিম্ন স্তরের মানুষের দিকে দৃষ্টি দেওয়া :

মুমিনদের উচিত নিজ অবস্থানের চেয়ে উচ্চ স্তরের কোনো ব্যক্তি বা তার সম্পদের দিকে আক্ষেপের দৃষ্টিতে না তাকিয়ে বরং নিম্ন স্তরের মানুষের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থার জন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তির দিকে দেখে, যাকে ধন-সম্পদে, স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চেয়ে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকায়।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৫২৪২)

৩. অল্পে তুষ্ট থাকা :

মুমিনমাত্র করণীয় হচ্ছে অল্পে তুষ্ট থাকা। আল্লাহপ্রদত্ত হালাল জীবিকা যত অল্পই হোক না কেন, তাতে সন্তোষ থেকে শুকরিয়া আদায় করলে দুনিয়ার ধন-সম্পদের মোহ তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। অল্পে তুষ্ট থাকা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুস্থ দেহে পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয় এবং তার কাছে যদি সারা দিনের খোরাকি থাকে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়া একত্রিত করা হলো।’ (ইবনে মাজাহ,  হাদিস : ৪১৪১)

পরিশেষে গরিব-মিসকিন সমাজে উপেক্ষিত হলেও মহান আল্লাহর বিধান মেনে যত কষ্টেই সে দিনাতিপাত করুক না কেন, বিচার দিবসে সে-ই হবে মহা সম্মানিত। সবার আগেই প্রবেশ করবে অনন্ত সুখের অনিন্দ্যসুন্দর বাগান জান্নাতে।

« Last Edit: September 15, 2021, 12:21:08 PM by ashraful.diss »
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka