মহামারীকালে করণীয় সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের সুস্পষ্ট নির্দেশনা

Author Topic: মহামারীকালে করণীয় সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের সুস্পষ্ট নির্দেশনা  (Read 1555 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile
একবিংশ শতকে সারাবিশ্বের দুই শতাধিক দেশে নির্মম তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষ এত ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ পর্যন্ত শুধুমাত্র বাংলাদেশে ৮,৬৬,৮৪৭ জন মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে এবং ১৩,৭৮৭ জন মানুষ মারা গেছে (২৩ জুন, ২০২১)। সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সারাবিশ্বের সকল মানুষ আতঙ্কিত। বিশ্বের শক্তিশালী, প্রযুক্তিতে উন্নত এবং ধনাঢ্য দেশগুলোও এই ভাইরাসের হানায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভিন্ন জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের ট্রেন, বাস, লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হওয়া এই ভাইরাসের ভয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ সারাবিশ্বের ‌অধিকাংশ দেশে লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সমূহ শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে পাড়ামহল্লা, অলিগলিতে প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন অফিস-আদালত, সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বারে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার‘ এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যত্রতত্র স্টিকার লাগানো রয়েছে "মাস্ক পরিধান করুন, সেবা নিন"। সারাবিশ্বের গবেষকগণ টিকা আবিষ্কার করেছেন এবং করছেন। দেশের প্রতিজন নাগরিকের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোতে করোনার টিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। করোনার সংক্রমণ রোধে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য কাবাঘর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ তাগিদ দিচ্ছেন। এমনি পরিস্থিতিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জ্ঞানের স্বল্পতায় বা ‌অসচেতনতাবশতঃ আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করছিনা, মাস্ক ব্যবহারে অবহেলা করছি। বৃটেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ সারাবিশ্বে ছোট বড়, ধনী গরীব, আস্তিক নাস্তিক নির্বিশেষে সকলেই প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিপুল জনগোষ্ঠী অধ্যূষিত বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস হলেও মুসলমানদের সংখ্যা সর্বোচ্চ। আমরা লক্ষ্য করে থাকবো কতিপয় রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানীরা বিভিন্ন সময়ে ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মুসলমানদের উত্তেজিত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করেন, সরকারকে বিব্রত করার পায়তারা করেন। ঠিক তেমনিভাবে এই করোনা মহামারী কালেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠি করোনা মহামারীকালে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন, বিপদগ্রস্ত করছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছেন। উল্লেখ্য যে, পবিত্র কোরআন ও হাদীসে মহামারীকালে করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন অনুশাসন রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
একটি স্বভাব ও স্বাভাবিকতার ওপর মহাবিশ্ব পরিচালিত হয়। পবিত্র কোরআনে সূরা আর-রূম এ বর্ণিত আছে ,"তোমরা একনিষ্ঠ ভাবে স্ব স্ব লক্ষ্য এই ধর্মের প্রতি রাখ; আল্লাহ প্রদত্ত (সত্যোপলব্ধির) সেই যোগ্যতা অনুসরণ করিয়া চলো, যাহার ওপর আল্লাহ মানবকে সৃষ্টি করিয়াছেন; আল্লাহর সৃষ্ট সেই বস্তুকে পরিবর্তন করা উচিত নহে, যাহার উপর আল্লাহ তায়ালা মানবকে সৃষ্টি করিয়াছেন; ইহাই হইতেছে সরল ধর্ম, কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না"। প্রকৃতির স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধাচারণ করলে মহান আল্লাহ যা চান তাই করেন (সূরা আল বুরূজ ১৬ নং আয়াত)। তখন মহান আল্লাহ কখনও কখনও প্রকৃতির স্বাভাবিকতা বদলে দেন। পবিত্র কোরআনের সূরা আনফাল এর ২৫ নং আয়াতে বর্নিত আছে, "তোমরা এমন ফেতনার হইতে বাঁচিয়া (নিরাপদ) থাকো, যাহা কেবল তাহাদের উপরেই পতিত হইবে না যাহারা তোমাদের মধ্য হইতে পাপসমূহে লিপ্ত রহিয়াছে"। যেমন বন্যায় মসজিদ ডুবে যায়, আগুনে ধর্ম গ্রন্থের পাতাও পুড়ে যায় তদ্রুপ সুনামী, ভূমিকম্প, মহামারী ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিরপরাধ মানুষও মারা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "যদি তোমরা শোন যে কোন এলাকায় মহামারী চলছে তবে সেখানে প্রবেশ করবে না। তোমরা যেখানে আছো সেখানে মহামারী দেখা দেয় তাহলে সেখান থেকে বের হবে না" (সহীহ আল বুখারী, হাদিস নং ৫২২৮: মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২১৮১১)। অর্থাৎ মহামারীকালে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে না যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। অর্থ্যাৎ লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনের মত বিধান রাখা হয়েছে। সুতরাং মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। পবিত্র কোরআনে সূরা তালাক এর ৩ নং আয়াতে বর্ণিত আছে, "যে আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তিনিই (আল্লাহ) তার জন্য যথেষ্ট"।

সুতরাং চলমান করোনা সংক্রমণ রোধে মহামারীকালে কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুসরণ করি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করি, অপ্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে ঘোরাঘুরি পরিহার করি। নিরাপদ থাকি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।

Google News
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34

Offline Anta

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 593
  • Never lose hope
    • View Profile
Anta Afsana
Lecturer
Department of English
Daffodil International University
email id: anta.eng@diu.edu.bd
Contact number: 07134195331