« on: July 16, 2021, 09:16:14 PM »
শিশুদের-নৈতিক শিক্ষা ও অনুশীলনে করণীয়
আজকের শিশুরাই যেহেতু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, কাজেই তাদের সুস্থ-সবল প্রাণবন্ত দেহ ও ফুলের মতো পবিত্র জীবন গঠনে নৈতিক শিক্ষা ও অনুশীলন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান লাভ করা অতীব জরুরি।
আমরা জানি, শিক্ষা মূলত দুই প্রকার- ১. সাধারণ শিক্ষা ও ২. ধর্মীয় শিক্ষা। যে শিক্ষা অর্জনে মানুষের জাগতিক উন্নতি ও কল্যাণ সাধিত হয়- তাকে সাধারণ শিক্ষা বলে।
আর ধর্মীয় মানুষের মাঝে উন্নত নৈতিকতা ও মানবতাবোধ জাগ্রত করে। সেই সঙ্গে জাগতিক এবং পারলৌকিক জীবনে শান্তি আনয়ন করে।
সুতরাং মানুষের মতো মানুষ হতে হলে, উভয় জ্ঞানের প্রয়োজন। যাবতীয় পরিস্থিতি আর প্রশ্নের জবাব দিতে পারে জ্ঞানীরাই। জীবন সায়াহ্নে পুরস্কৃত হয় জ্ঞানীরা। প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে জ্ঞানীরা। তাইতো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জ্ঞানীর ঘুম মুর্খের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ’
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মুসলমানকে অর্জিত জ্ঞান ও আমল এবং অর্জিত জ্ঞানের অনুশীলন বিষয়ক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। সবাইকেই এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, যেহেতু দুনিয়ার কৃতকর্মের ভিত্তিতে আখেরাতের ফলাফল নিশ্চিত করা হবে, কাজেই প্রতিটি শিশুর-সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ উভয় শিক্ষার্জনের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করলে নিজে যেমন উপকৃত হওয়া যায়- তেমনি পরিবার, বংশ, জাতি ও দেশের এমনকি বিশ্বের মানুষ লাভবান হন।
শিশুদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে এর অন্যতম হলো-
সালাম বিনিময়, সম্বোধন, কুশলাদি বিনিময় করে কথা বলা।
দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া মুখস্থকরণ ও অনুশীলন। বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার ও আদবের অনুশীলন।
তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানার্জন। অপবিত্রতা থেকে নিরাপদে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পবিত্রতা অর্জন করা। কথা বলা, বসা, চলাফেরার আদব রক্ষা করা। পিতা-মাতা, শিক্ষক-গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা। কোমল ব্যবহার ও হাসিমুখে কথা বলার অভ্যাস। সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও কাজের লোকের সঙ্গে ভালো আচরণ করা।
নিয়মিত ক্লাসের পাঠ সম্পন্ন করা। নিয়মিত নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে তোলা। বিশেষকরে মসজিদে যেয়ে জামাতে নামাজের বিষয়ে উৎসাহী করা। নামাজে পাঠকৃত আয়াতসমূহ মুখস্থ করা। নিয়মিত খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা।
সম্ভব হলে প্রতিদিন কোরআনে কারিম অর্থসহ পাঠ করা, টিভিতে ভালো অনুষ্ঠান দেখা ও পত্র-পত্রিকা পাঠ করা। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক জ্ঞানার্জন করা।
শিশুদের যেসব মন্দ অভ্যাস সম্পর্কে জানাতে হবে সেগুলো হলো- মিথ্যা বলা, অহংকার করা, রাগ করা, অহেতুক বায়না ধরা, ঘৃণা করা, হিংসা করা, সন্দেহ করা, গীবত করা, চোগলখুরি করা, অশ্লীল কথা ও গালি-গালাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, প্রতারণা করা, উপহাস করা, অন্যকে মন্দ নামে ডাকা, ছোটদের সঙ্গে খেলার ছলে মিথ্যা বলা ও ভয় দেখানো, অশ্লীল ছবি দেখা, অশ্লীল বই বা ম্যাগাজিন পড়া, খারাপ বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে থাকা।
যাবতীয় নেশাদ্রব্য পরিহার করা। খোলা ছাদে খেলাধুলা করা বা ঘুড়ি উড়ানো। তাড়াহুড়া করা। ক্লাসে বিলম্বে উপস্থিত হওয়া ও নামাজে উদাসীনতা দেখানো।
এছাড়াও শিশুদের যা জানা প্রয়োজন, সেগুলো হলো- তওবা- গোনাহ ধ্বংস করে। শিরক-ঈমান ধ্বংস করে। দীন- গোমরাহি ধ্বংস করে। রাগ-বুদ্ধি ধ্বংস করে। অহংকার- জ্ঞান ধ্বংস করে। মিথ্যা-আস্থা ধ্বংস করে। চিন্তা- জীবন ধ্বংস করে। পরনিন্দা- আমল ধ্বংস করে। ন্যায় বিচার- জুলুম ধ্বংস করে। সদকা- বালা মসিবত ধ্বংস করে। নেশা- শরীর ধ্বংস করে। অশ্লীলতা- চরিত্র ধ্বংস করে।
শিশুদের মনে শিক্ষা জীবনের শুরু এ বিষয়গুলো শিখিয়ে দিতে পারলে তার জীবন সুন্দরের পথে পরিচালিত হবে। তার মেধা-মনন গড়ে উঠবে শালীনভাবে।
« Last Edit: September 15, 2021, 02:31:31 PM by ashraful.diss »

Logged
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Sr. Ethics Education Teacher
Daffodil Institute of Social Sciences - DISS