Psychological Disorder (সব রিপোর্ট নরমাল, রোগ ধরা পড়ছে না এমন কথা কি শুনেছেন?)

Author Topic: Psychological Disorder (সব রিপোর্ট নরমাল, রোগ ধরা পড়ছে না এমন কথা কি শুনেছেন?)  (Read 2301 times)

Offline Abu Tareque

  • Newbie
  • *
  • Posts: 18
    • View Profile
"সব রিপোর্ট নরমাল, রোগ ধরা পড়ছে না" এমন কথা কি আপনিও শুনেছেন?




কেস-১: রোগীর বয়স ৩২। মহিলা। সমস্যা সারা শরীর জ্বালা পোড়া করে। বিশেষ করে রান্না করতে গেলে সমস্যা বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এখন আর রান্না করতে পারেন না। তাই বাবার বাড়িতে থাকছেন।  স্বামী মিনি ট্রাক ড্রাইভার। ইতিমধ্যে তিনি তাদের মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য জমানো ২ লক্ষ টাকা চিকিৎসার পিছনে খরচ করেছেন। মেডিসিন, হার্ট এবং চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা এবং  বিভিন্ন মেডিকেল টেস্ট করেছেন। রোগ ধরা পড়েনি। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য ভারতে চিকিৎসা করতে চাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়নি । ডাক্তারী চিকিৎসার প্রতি হতাশ হয়ে কবিরাজের কাছেও গিয়েছেন। রোগ ধরা পড়েনি।  সর্বশেষ একজন মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ঢাকা মেডিকেলের  মানসিক রোগ বিভাগে আসেন।   

কেস-২: ৭ম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সময় জেসি চেতনা হারিয়ে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তার চেতনা ফিরে আসে কিন্তু সে আর কথা বলতে পারেনি । সে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু তার দ্বারা কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাড়াতাড়ি করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে  নিয়ে আসা হলে অনেকগুলো টেস্ট করা হয়।  এই ক্ষেত্রেও রিপোর্ট নরমাল। পরে তাকে  মানসিক রোগ বিভাগে রেফার করা হয়।

কেস-৩: মেয়ের বয়স ১৪।  খুব মেধাবী ছাত্রী।  সমস্যা হলো বাম হাত-বাম পা প্রায় অনুভূতিহীন। মাথা  বাম দিকে হেলানো।  মায়ের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। বিভিন্ন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও টেস্ট এর মোটা ফাইল নিয়ে ঢাকা  মেডিকেলের  মানসিক রোগ বিভাগে আসে। এই ক্ষেত্রেও সব রিপোর্ট নরমাল।

উপরের তিনটি কেসের ক্ষেত্রেই রোগী এবং রোগীর অভিভাবক প্রথমে বিশ্বাস করেননি যে লক্ষণগুলো  মানসিক রোগের। কিন্তু তারপরও মানসিক রোগ বিভাগে আসেন, যদি রোগ ভাল হয় তাই। এরকম অনেক কেস আমাদের আশেপাশে আছে যারা নিউরোলজিস্ট , কার্ডিওলজিস্ট , মেডিসিন ডাক্তারের  চেম্বারে ঘুরতে ঘুরতে বিরক্ত। এক ডাক্তারের কাছে রোগ ধরা না পড়লে অন্য ডাক্তার। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরে মোটা একটা ফাইল তৈরী করেন। তবুও রোগ ধরা পড়েনা।

উপরের তিনটি কেসে যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তার নাম কনভার্সন ডিজঅর্ডার।পূর্বে এই মানসিক রোগ হিস্টেরিয়া  নামে পরিচিত ছিল। DSM-5 অনুসারে এর নাম Conversion Disorder (Functional Neurological Symptom Disorder)। এ রোগের লক্ষণগুলো মূলত শারীরিক বা নিউরোলজিক্যাল লক্ষণ আকারে প্রকাশ পায়।  অর্থাৎ  রোগের লক্ষণগুলো দেখে শারীরিক বা নিউরোলজিক্যাল লক্ষণ মনে হবে  কিন্তু এই রোগের  পিছনে কোন ধরনের শারীরিক কারণ থাকে না। কনভার্সন ডিজঅর্ডার সম্পূর্ণই মানসিক রোগ ।

কনভার্সন ডিজঅর্ডারের সাধারণ লক্ষণগুলো হল: ব্যক্তির শারীরিক দুর্বলতা অথবা  প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে।  কেউ আবার হঠাৎ করে কোন বিশেষ ঘটনার আগে বা পরে  অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শরীরের কোন অংশে সংবেদনহীনতা অনুভব করতে পারে  বা ব্যথার অনুভূতি অনুপস্থিত থাকতে পারে। ব্যক্তি শরীরের বিভিন্ন অংশে পিন ফুটানোর মত বা সুড়সুড়ির  মত অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। কেউ কেউ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয় করতে পারে না বা অস্বাভাবিক ভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন করে অথবা  হাঁটতে পারে না। কারো কারো ঢোক গিলতে সমস্যা হয়। কেউ আবার জোরে  কথা বলতে পারে না। কারো ক্ষেত্রে কথা বলা বন্ধ হতে পারে অথবা কেউ  কথা বলতে সমস্যা বোধ করতে পারে। মুখ বাঁকা হয়ে যেতে পারে । ব্যক্তির শরীরে  খিঁচুনি বা কাঁপুনি থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তির  শ্রবণ, দর্শন অথবা  ঘ্রাণ সংবেদন সম্পূর্ণ বা আংশিক  ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দর্শন সংবেদনের ক্ষেত্রে কারো সংকীর্ণ দৃষ্টি দেখা দিতে পারে যেন তারা একটি নলের মধ্য দিয়ে দৃশ্যবস্তুকে দেখছে। এসব লক্ষণের পিছনে কোন শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন যে ব্যক্তি  নিজের  ইচ্ছাই  এসব লক্ষণ সৃষ্টি করছে। যেহেতু কোন মেডিকেল টেস্টে এই রোগ ধরা পড়েনা তাই অনেকেই এটিকে জিন ভুতের প্রভাবে সৃষ্ট রোগ মনে করেন। এই রোগের লক্ষণগুলো আসলে কোন পীড়নমূলুক ঘটনার আগে বা পরে   হঠাৎ করেই শুরু হয়। 

কনভার্সন ডিজঅর্ডার এর লক্ষণ গুলো শারীরিক বা স্নায়ুবিক মনে হলেও আসলে এটি ব্যক্তির মানসিক দ্বন্দ্ব বা মানসিক চাপ থেকে হয়ে থাকে। ব্যক্তি যখন কোন মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে পারেনা অথবা কোন দ্বন্দ্ব নিরসনে ব্যর্থ হয় তখন তার মধ্যে এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। যার ফলে ব্যক্তি সাময়িক ভাবে মানসিক চাপ বা দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পায়। লক্ষগুলো ব্যক্তির অনিচ্ছায় সৃষ্টি হয়, এবং এর পিছে তার করণীয় কিছুই থাকে না।
উল্লেখ্য যে কনভার্সন ডিজঅর্ডার আছে কিনা তা  নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রথমেই একজনের মেডিকেল টেস্ট করা জরুরি। মেডিকেল রিপোর্ট যদি নরমাল আসে এবং রোগের  লক্ষণগুলো যদি ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত এবং সামাজিক জীবনে অসুবিধার সৃষ্টি করে তাহলে যে কেউ একজন পেশাগত সাইকোলজিস্টের কাছ থেকে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন। সাইকোলজিস্টরা সাধারণত কনভার্সন ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির  মানসিক চাপ এবং দ্বন্দ্ব গুলো খুঁজে বের করেন এবং তা  নিরসনে ব্যক্তিকে কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপির মাধ্যমে সহায়তা করেন। কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপির  মাধ্যমে কনভার্সন ডিজঅর্ডার থেকে একজন ব্যক্তি সুম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে পারেন। তাই যদি কারো মধ্যে উপরে যে লক্ষণগুলো উল্ল্যেখ করা হয়েছে সেগুলোর কোনটি থাকে এবং বার বার মেডিকেল টেস্টের  রিপোর্ট নরমাল আসে তাহলে রোগটি মানসিক কিনা তা জানার  জন্য কোন মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া যেতে পারে।


লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।








References:
Davison, Gerald C., and John M. Neale. 2001. Abnormal psychology. 8th ed. New York: John Wiley &  Sons, Inc.   
        pp: 161-163
American Psychiatric Association. (2013). Diagnostic and statistical manual of mental disorders: DSM-5™ (5th
        ed.). Arlington, VA: Author. pp: 318 -324
অধ্যাপক নীহাররঞ্জন সরকার,ডাঃ তনুজা সরকার (২০১৩),অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞান : মানসিক ব্যাধির লক্ষণ কারণ ও
            আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, তৃতীয় সংস্করণ ,জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, ঢাকা-১১০০, পৃ: ২৭৫-২৭৮
« Last Edit: July 18, 2021, 01:41:01 PM by Abu Tareque »
Psychologist