শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকের করণীয়

Author Topic: শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকের করণীয়  (Read 1572 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS

শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকের করণীয়

ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আনয়ন, পাঠদান আকর্ষণীয় করণ, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়ির কাজ আদায় এবং ভালো মানুষ হওয়ার জন্য তাদের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা কর হয়েছে

১. শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করেই কুশল বিনিময় করতে হবে। তারপর ক্লাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রয়োজনে ক্লাস ক্যাপ্টেনের সাহায্য নিতে পারেন।

২. শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগ আনার জন্য শিক্ষক বিশেষ কোনো মজার ঘটনা/সহজ পড়া (পাঠ্য থেকে) বলে বা লিখে মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থী অমনোযোগী থাকলে শিক্ষক সতর্ক করে দেবেন। বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অভয় দেবেন যাতে তারা সহজে প্রশ্ন করতে শেখে।

৩. বিগত ক্লাসের পাঠ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্য আলোচনা করতে পারেন। ক্লাস ক্যাপ্টেনের মাধ্যমে বাড়ির কাজের কপি সংগ্রহ করবেন (যদি কাজ দেওয়া থাকে)। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পড়া আদায় করবেন। পড়া আদায় লিখিতভাবে অথবা মৌখিকভাবে হতে পারে। তবে লিখিত হলেই ভালো। প্রয়োজন হলে ডায়েরি মার্ক করবেন। বাড়ির কাজ থাকলে ক্লাস ক্যাপ্টেনের সহায়তায় বাড়ির কাজ সংগ্রহ করতে হবে। প্রথমেই দুর্বল শিক্ষার্থীদের পড়া ধরা উচিত। দুর্বলদের মধ্যে যারা ঠিকমতো পড়া দিতে পারবে না তাদের আগের দিনের পড়া ক্লাসেই শিখতে দিতে হবে। এরপর অন্যদের পড়া ধরতে হবে।

৪. দিনের পাঠের শিরোনাম উপস্থাপন এবং বিশ্লেষণ করতে হবে।

৫. দিনের পাঠের বিষয়বস্তু বিস্তারিত আলোচনা করা।

৬. দিনের পাঠের কোন অংশটি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেনি তা খুঁজে বের করা।

৭. না বোঝা বিষয়টুকু আরও পরিচ্ছন্ন ও পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেওয়া।

৮. পরবর্তী দিনের জন্য শিক্ষার্থীদের যে বাড়ির কাজ দেওয়া হবে সেই পাঠ বা পড়ার ওপর শিক্ষক আলোচনা করবেন।

৯. প্রতিটি অনুশীলনী/ অধ্যায়/ বিষয়ভিত্তিক অংশ পড়ানো শেষে ওই অনুশীলনী/ অধ্যায়/ বিষয় থেকে কি কি সম্ভাব্য প্রশ্ন থাকতে পারে (অনুশীলনীগুলো বাদে) তা শিক্ষার্থীদের প্রদান করা। প্রদত্ত প্রশ্নগুলো তৈরি করার জন্য সাধারণ আলোচনা করা।

১০. পরবর্তী দিনের জন্য বাড়ির কাজ ও পড়া শেখার উৎসাহ দান করে শ্রেণীকক্ষ থেকে বিদায় নেওয়া।

১১. কোনো বিষয় পাঠদানের ক্ষেত্রে নতুন কোনো সমস্যার সম্মখীন হলে তা নিজের উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে সমাধান করা। সাথে সাথে সমাধান দিতে না পারলে তা পরবর্তী দিনে বুঝিয়ে দেওয়া হবে, তা বলে দেওয়া। শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয় বোঝানোর সময় একাধিক উদাহরণ দিতে হবে। যাতে তারা পরিষ্কারভাবে ওই বিষয়ের ওপর ধারণা পেতে পারে।

১২. পাঠদানের সময় কোথাও কোনো অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়লে তা অল্প কথায় সমাধান দেওয়া।

১৩. আলোচনার মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের পাঠদানরত বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করতে হবে। বিশেষ করে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলে জানা যাবে তারা ওই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে কিনা বা বুঝতে পারছে কিনা।

১৪. শিক্ষকরা ক্লাসের মধ্যেই বোর্ড ব্যবহার করবেন। আরবী, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকরা বেশি করে বোর্ড ব্যবহার করবেন। বিজ্ঞান বিষয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিত্র এঁকে বোঝাবেন। প্রয়োজনে প্রাকটিক্যাল ক্লাস করাবেন।

১৫. দুর্বল শিক্ষার্থীদের হেয় করা যাবে না। তারাও যে ভালো করার ক্ষমতা রাখে এ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে।

১৬. ডি আই এসএস এর শিশুদের জন্য কম সময়ের মধ্যেও কিভাবে ক্লাসকে অধিকতর ফলপ্রসূ করা যায় সেজন্য শিক্ষকগণের আগে থেকেই পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।

১৭. শিক্ষার্থীদেরকে পঠিত বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাতে তারা নির্ভয়ে না বোঝা বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে।

১৮. যেসব শিক্ষার্থীর বানান বেশি ভুল হয় তাদের কঠিন শব্দগুলো সহজ করে বানান শিখতে দেওয়া যেতে পারে।

১৯. প্রাকটিক্যাল এবং চিত্রাঙ্কনে শিক্ষার্থীদের দলগতভাবে কাজ দেবেন। আবার কোনো বিষয়ে দলগত প্রতিযোগিতা করতে দেওয়া যেতে পারে এবং দলগত প্রতিযোগিতা করাবেন।

২০. শিক্ষার্থীদের মাঝে মধ্যে বোর্ডে লিখতে দিতে হবে।

২১. যেসব শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা খারাপ তাদের লেখা উন্নত করার জন্য রোল করা খাতায় নিয়মিত লেখা চেক করতে হবে এবং অক্ষর, শব্দ বা বাক্যগুলো কিভাবে লিখলে সুন্দর হতে পারে এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন।

২২. এ ছাড়া ক্লাসে অতিরিক্ত সময় পেলে শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার জন্য উপদেশ দিতে হবে।

ভালো মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন:

১.ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।

২.নিজের আচরণ ও কর্মে যাতে অন্য কেউ মনোকষ্ট না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৩.কারও আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার ক্ষতি করা যাবে না।

৪.সম্ভব হলে অন্যের উপকার করতে হবে।

৫.মিথ্যা বলবে না, সৎ পথে চলবে।

৬.অন্যায়কে ঘৃণা করবে।

৭.অহঙ্কারি হবে না।

৮.গরিব বা ছোট পেশার মানুষকে অবজ্ঞা করবে না, সম্ভব হলে সহযোগিতা করবে।

আল্লাহ আমাদের আদর্শবান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka