যে সকল খা’বারে শি’শুর শরীর আর বু’দ্ধি বাড়তে পা’রে

Author Topic: যে সকল খা’বারে শি’শুর শরীর আর বু’দ্ধি বাড়তে পা’রে  (Read 730 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
টিভি পর্দায় বাহারি খাবারের বিজ্ঞাপনে কারও খিদে বাড়ুক আর না বাড়ুক, শিশুরা কিন্তু তাদের মগজে চিপস, চকলেট আর পিৎজার মজাদার প্রলোভনটি জমিয়ে রাখে। তাইতো রাস্তায় বের হলে তারা বলে ওঠে চকলেট দাও, বার্গার দাও, কুড়কুড়ে অথবা পটেটো চিপস দাও।

তাদের এই আবদারে না করলে পরের দৃশ্য যে কী হতে পারে তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। তাই হরহামেশাই শিশুদের এই ইমোশনাল আবদারের নির্মম শিকার হতে হয়। নির্মম এ কারণে যে, শিশুর নাছোড়বান্দা অনুরোধে ওর হাতে যা তুলে দেয়া হয় তার পরিণতি অনেক ভয়াবহ। কেননা বিজ্ঞাপনে অনেক চটকদার কথা থাকলেও প্যাকেটজাত এসব পণ্যে কোন পুষ্টি থাকে না। এসব পুষ্টিহীন ‘জাঙ্ক ফুড’ শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে এক বড় অন্তরায়।

শিশুর প্রথম পাঁচ বছরে প্রায় ৮৫ ভাগ বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটে। ফলে শিশু বাড়ন্ত অবস্থায় ভাষা, রঙ, শব্দ, সংখ্যা সহজে বুঝতে পারে। শুধু তাই না, শিশু সামাজিক মেলামেশা ও ছোটখাটো দক্ষতাও শিখতে শুরু করে। শিশুর এই বুদ্ধিবিকাশে অনেকগুলো কারণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। পুষ্টিকর খাবার তার মধ্যে অন্যতম।

সুষম খাবার শিশুর শারীরিক ও মানসিক গড়নে অনিবার্য বিষয়। শিশুর জন্য অনিবার্য এই খাদ্য দর্শন আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু বাস্তবায়ন যে কত কঠিন তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে। তাই বলে কি হাল ছাড়া যাবে? কখনোই না। কেননা খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্লান্তিহীনভাবে চটকদার বিজ্ঞাপনের অজুহাতে যদি আপনার শিশুর হাতে অস্বাস্থ্যকর খাবার তুলে দিতে সফল হয়, তাহলে আপনি সন্তানের স্বাস্থ্যময় জীবনের জন্য ধৈর্যহারা হবেন কেন?

ড. সামিরা আরাফাত বলেন, শিশুর বাড়ন্ত অবস্থায় শরীর আর ব্রেইন দুটোর জন্য যথাযথ খাবার দরকার। বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলসবজি, মাছ কিংবা আঁশ জাতীয় খাবার শিশুর শরীর গঠনতো বটেই বুদ্ধিও বাড়ায়। আমাদের হাতের কাছে সহজেই অনেক খাবার পাওয়া যায়। অভিভাবকদের জানা দরকার কোন খাবারগুলোর পুষ্টিমান অনেক বেশি শিশুবান্ধব।

❏ শস্য জাতীয় খাবার: ব্রেইনকে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে শস্য জাতীয় খাবার। আটা বা কিংবা ছাতু দিয়ে তৈরি খাবার দিতে পারেন আপনার শিশুকে। রুটি, বিস্কুট বানিয়ে বৈচিত্র্য যোগ করলে শিশু আগ্রহী হতে পারে। তবে প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

❏ স্ট্রবেরি: আজকাল দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে ভিনদেশি ফল স্ট্রবেরি। আর কালো জামতো আছেই। এই ফলগুলোতে আছে উঁচু মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি, যা শিশুর স্মরণশক্তি এবং মেধা বাড়াতে সাহায্য করে। সরাসরি খেতে না চাইলে জুস বানিয়ে দিতে পারেন অথবা সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।

❏ ডিমের নানা পদ: শিশুদের কাছে ডিম খুবই পছন্দের খাবার। ডিমে আছে প্রোটিন। সেইসঙ্গে আছে ভিটামিন বি টু, জিঙ্ক, আয়রন, মিনারেল আর কপার। সেদ্ধ এবং মামলেটসহ নানা পদে আর ঢঙে শিশুর খাবারে ডিম যুক্ত করুন।

❏ দই-লাচ্ছি: দইয়ে আছে প্রবায়োটিক নামে এক অসামান্য উপাদান যা হজমে ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক পুষ্টিগুণ। যেসব শিশু জুস খেতে পছন্দ করে তাদের দইয়ের লাচ্ছি বানিয়ে দিতে পারেন। দইয়ের সাথে কয়েক টুকরো ফল যোগ করতে পারেন।

❏ কাঁটাবিহীন মাছ: মাছে আছে ভিটামিন ডি এবং ওমেগা থ্রি। শিশুর অন্যতম ব্রেইন ফুড, কিন্তু শিশুরা সহজে মাছ খেতে চায় না। কাঁটা কম এরকম মাছ দিয়ে শিশুর অভ্যাস তৈরি করুন। সামুদ্রিক মাছে কাঁটা কম এবং পুষ্টিগুণ অনেক। তবে ভাঁজা মাছে পুষ্টিগুণ অনেকটা হারিয়ে যায়।

❏ বাদাম: বুদ্ধিবিকাশে ভালমানের ফ্যাট খুবই দরকারী। বিভিন্ন জাতের বাদামে আছে ভালো মানের ফ্যাট। সেইসাথে প্রোটিন, পটাসিয়াম, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম। শরীরের সাথে এই উপাদানগুলো শিশুর বুদ্ধিও বাড়ায়। এছাড়া পিনাট বাটার বাজারে পাওয়া যায়। রুটি বা পাউরুটির সাথে যোগ দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।

❏ সবুজ শাক: শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সবুজ শাক সবজির বিকল্প নেই। ভিটামিন এবং ফলিক এসিড সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি নিয়মিত রাখুন খাবার টেবিলে। খেয়াল করুন কী ধরনের সবজি আপনার শিশু পছন্দ করে। অনেক সবজি না চাপিয়ে প্রতিদিন অল্প অল্প করে শিশুকে সবজি খেতে দিন। সবজিতে আরও আছে ফাইবার যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ব্লাড পেশার ও কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে ব্রকলি, ফুলকপিতে আছে নানা উপকারী উপাদান। শসা-টমেটো শিশুরা পছন্দ করলে তাই এগিয়ে দিন।

❏ ওটমিল: ওটমিলে আছে শক্তিশালী ফাইবার যা নিয়মিত খেলে রক্তপ্রবাহ সচল থাকে। চিন্তায় গতি আনতে যা খুব জরুরি। ওটমিলের সাথে লো-ফ্যাট মিল্ক, কলা যোগ করতে পারেন। বৈচিত্র্য আনতে কয়েক টুকরো ফল যোগ করতে পারেন। তবে মিষ্টি আনতে চিনির বদলে মধু মেশাতে পারেন।

❏ পর্যাপ্ত পানি পান: শিশুর পানি পানে আমাদের অবহেলার অন্ত নেই। অথচ পর্যাপ্ত পানি পানের অভাবে শিশুর ইউরিন কিংবা পানিশূন্যতা সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে ক্লান্তিতে শিশু আলসে হয়ে পড়ে। নিয়মিত পানি পানে শিশুর মধ্যে গতি আসবে। পানি শরীর থেকে নানারকম বাজে টক্সিক বের করে দেয়।

❏ চর্বিবিহীন মাংস: মাংস খেতে শিশুরা অনেক আগ্রহী। কিন্তু ফার্মের মুরগির বদলে শিশুকে দেশি মুরগি দিন। গরুর মাংস থেকে চর্বি ছেঁটে রান্না করুন। মাংসে আছে প্রোটিনসহ কয়েকধরনের ভিটামিন যা শিশুর হাড় গঠনেও সাহায্য করে।

❏ ডার্ক চকলেট: চকলেট পছন্দ করে না এমন শিশু পাওয়া যাবে না। শিশুর এই পছন্দকে কাজে লাগিয়ে ডার্ক চকলেট খেতে দিন। এই চকলেটে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেনট উপাদান যা শিশুর মস্তিষ্ক ও শরীরের ধমনির রক্ত প্রবাহ বাড়ায়।

আলোচিত খাবার ছাড়াও শিশুকে দুধের সাথে কাচা হলুদ মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া বাজারের সয়াবিন না খাইয়ে সরিষা বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে রান্না করতে পারেন।

সব যে একইসঙ্গে বা প্রতিদিন খাওয়াতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। সময় সুযোগ আর শিশুর মুড বুঝে পরিবেশন করুন। তবে এখন থেকেই আপনাকে ভাবতে হবে শিশু কী খাবে এবং কেন খাবে?