অন্তরের শুদ্ধতা মানুষের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহমুক্ত রাখে

Author Topic: অন্তরের শুদ্ধতা মানুষের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহমুক্ত রাখে  (Read 1223 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile

মানুষ ভালো-মন্দে পরিচালিত হয় অন্তরের মাধ্যমে। যার অন্তর যত বেশি শুদ্ধ ও সুস্থ, তার চালচলন, আমল-আখলাক তত বেশি উন্নত। মানুষ অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচেতন থাকলেও অদৃশ্যমান এই অঙ্গের সুস্থতা ও শুদ্ধতার বিষয়ে খুব উদাসীন থাকে। অথচ পরকালে আল্লাহর কাছে সুস্থ অন্তরই প্রাধান্য পাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো উপকারে আসবে না; কিন্তু যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে (সে এর ব্যতিক্রম)।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)

অন্তরের শুদ্ধতা মানুষের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহমুক্ত রাখে। অন্তর অসুস্থ হয়ে পড়লে মানুষ যেকোনো অপকর্মে জড়িয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করে না।
নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীর ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন ত্রুটিযুক্ত হয়ে পড়ে, গোটা শরীর ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। জেনে রেখো, ওই গোশতের টুকরা হলো কলব (অন্তর)।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২)

মানুষের অন্তরের শুদ্ধতা-অশুদ্ধতা নিয়ে আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে নানা উপায় ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই লেখায় অন্তর কলুষিত হয় এমন কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো—

অসৎ সঙ্গ

অসৎ লোকের প্রভাব মানুষের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস করে দেয়। এ কারণে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অসৎ লোকদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি দৃঢ়চিত্তে তাদের সঙ্গে থাকুন, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ডাকে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ২৮)

বিলাসিতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা

বিলাসিতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অতি ভোগে অন্তর আল্লাহভোলা হয়ে যায়। সীমাতিরিক্ত বিলাসী জীবন মুমিনের অন্তর কলুষিত করে দেয়। ইবাদতের আগ্রহ নষ্ট করে ফেলে। মানুষকে চরম হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। তাই অন্তরের শুদ্ধতার জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসিতা দূর করে অল্পতে তুষ্ট থাকার মনোভাব লালন করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৩৮)


ভোজনবিলাস

স্বাস্থ্যের সুস্থতার জন্য পরিমিত খাবারের বিকল্প নেই। বেশি খাবার শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি অন্তরকেও অসুস্থ করে তোলে। ইবাদত-বন্দেগিতে আলস্য ও অমনোযোগিতা চলে আসে। তাই শারীরিক ও আত্মিক সুস্থতার জন্য খাবার গ্রহণে সতর্কতা জরুরি। তা ছাড়া যারা হরেক রকম বিলাসী খাবারে অভ্যস্ত হয়ে আমলবিমুখ থাকবে, তাদের নিকৃষ্ট লোক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্য থেকে এমন লোকদের আবির্ভাব ঘটবে, যারা খাবে রকমারি খাবার, পান করবে রকমারি পানীয়, পরিধান করবে রকমারি পোশাক এবং তারা আবোলতাবোল বকবে। এরাই হবে আমার উম্মতের নিকৃষ্টতম লোক।’ (সিললাতুল আহাদিসিস সহিহা, হাদিস : ৩৬৬৩)

তাই অন্তর ও দেহকে সুস্থ রাখতে অনিয়ন্ত্রিত, বিলাসী ও হারাম খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।


মাত্রাতিরিক্ত ঘুম

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অন্যতম একটি নিয়ামত। তবে অসময় ও বেশি ঘুম শারীরিকভাবে যেমন ক্ষতি করে, অন্তরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে বেশি ঘুম প্রতিবন্ধক হয়। তা ছাড়া বেশি ঘুমে পরোক্ষভাবে শয়তানকেও খুশি করা হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদাংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এটা বলে চাপড়ায় যে তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত। অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, একটি গিঁট খুলে যায়। অজু করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর নামাজ আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উদ্যম ও আনন্দের। অন্যথায় সে প্রভাত করে অলস ও মনমরা হয়ে। (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)

 
বেশি হাসাহাসি

পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে সৌজন্যমূলক হাসি সওয়াবের কাজ। কথাবার্তায়ও স্বাভাবিক হাসি দোষণীয় নয়। প্রিয় নবী (সা.) সর্বদা সবার সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু বেশি হাসাহাসি করা, অট্টহাসি দৃষ্টিকটু ও নিন্দনীয়। তা ছাড়া এ অভ্যাস হৃদয়কে কঠিন ও নির্জীব করে দেয়। এ জন্য রাসুল (সা.) বেশি হাসতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা বেশি পরিমাণে হাসবে না। কেননা বেশি হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে এবং মৃত্যুর কথা ভুলিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৫)

তাই অন্তরকে স্বপ্রাণ ও শুদ্ধ রাখতে হলে বেশি হাসি থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের আত্মশুদ্ধি অর্জন করার তাওফিক দান করুক।

বিডি-প্রতিদিন/
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34