বর্জনীয় আদবসমূহ

Author Topic: বর্জনীয় আদবসমূহ  (Read 655 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
বর্জনীয় আদবসমূহ
« on: September 27, 2021, 12:23:43 PM »
বর্জনীয় আদবসমূহ

১. অনর্থক কথা বলা পরিহার করা : অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক কথা পরিহার করতে হবে। কেননা এতে কোন উপকারিতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ

মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা’। এছাড়া মানুষের ব্যক্ত করা কথাবার্তার কারণে তাকে শাস্তি পেতে হ’তে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ، لَا يَرَى بِهَا بَأْسًا، فَيَهْوِيْ بِهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا

মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে এবং তাকে দূষণীয় মনে করে না। অথচ এই কথার দরুন সত্তর বছর ধরে সে জাহান্নামে পতিত হ’তে থাকবে’।

২. গালিগালাজ ও অশ্লীল বাক্য পরিহার করা : কোন মুসলমান ভাইকে গালি দেওয়া বা তার সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوْقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ،

মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী’। হাদীছে গালি দেওয়ার মন্দ পরিণতি সম্পর্কে এসেছে, মা‘রূর (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহ’লে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে’। মন্দ কথা বলা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَا يُحِبُّ اللهُ الْجَهْرَ بِالسُّوْءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلاَّ مَنْ ظُلِمَ وَكَانَ اللهُ سَمِيْعًا عَلِيْمًا

আল্লাহ কোন মন্দ কথা প্রকাশ করা পসন্দ করেন না। তবে কেউ অত্যাচারিত হ’লে সেটা স্বতন্ত্র। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (নিসা ৪/১৪৮)।
অনুরূপভাবে কোন মুসলমানকে অযথা কষ্ট দেওয়া গোনাহের কাজ। আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِيْنًا

অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ (আহযাব ৩৩/৫৮)।

৩. কানাকানি বর্জন করা : কোথাও তিনজন লোক থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানাকানি করা ইসলামে নিষেধ। কেননা এতে তৃতীয় ব্যক্তি মনে কষ্ট পায়। ফলে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। আল্লাহ বলেন,

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ نُهُوْا عَنِ النَّجْوَى ثُمَّ يَعُوْدُوْنَ لِمَا نُهُوْا عَنْهُ،

তুমি কি তাদের দেখ না যাদেরকে কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। অতঃপর তারা সেই নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে’(মুজাদালাহ ৫৮/৮)।

তিনি আরো বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُوْلِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ، إِنَّمَا النَّجْوَى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللهِ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

হে মুমিনগণ! তোমরা যখন গোপন পরামর্শ কর, তখন পাপাচার সীমালংঘন ও রাসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে শলা পরামর্শ করো না। বরং তোমরা কল্যাণকর কাজে ও আল্লাহভীরুতার কাজে পরামর্শ কর। আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নিকটেই তোমরা সমবেত হবে। ঐ কানাঘুষা শয়তানের কাজ বৈ তো নয়, যা মুমিনদের দুঃখ দেওয়ার জন্য করা হয়। অথচ তা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত। অতএব মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা’ (মুজাদালাহ ৫৮/১০)।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَلاَ يَتَنَاجَى رَجُلاَنِ دُوْنَ الآخَرِ، حَتَّى تَخْتَلِطُوْا بِالنَّاسِ، أَجْلَ أَنْ يُحْزِنَهُ،

যখন তোমরা তিনজন থাকবে, তখন দুইজনে পৃথকভাবে গোপন পরামর্শ কর না। যতক্ষণ না তোমরা অন্যদের সাথে মিশে যাও। কেননা এটি তৃতীয় জনকে দুঃখিত করবে’।তবে তার অনুমতি সাপেক্ষে করা যাবে। যেমন আবুর বরী‘ ও আবু কাসেম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً فَلاَ يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُوْنَ الثَّالِثِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ فَإِنَّ ذَلِكَ يُحْزِنُهُ،

যখন তোমরা তিনজন থাকবে, তখন তৃতীয় জনকে ছেড়ে তোমরা গোপনে পরামর্শ করো না তার অনুমতি ব্যতীত। কেননা সেটি তাকে দুঃখিত করবে’।

৪. উপহাস না করা এবং মন্দ নামে না ডাকা : কোন মানুষকে উপহাস করা কিংবা মন্দ নামে ডাকা ইসলামে নিষিদ্ধ। এ করণে পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট হয়, সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। তাই এসব মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُوْنُوْا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوْا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ

হে বিশ্বাসীগণ! কোন সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। তোমরা পরস্পরের দোষ বর্ণনা করো না এবং একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেক্বী কাজ। যারা এ থেকে তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।

৫. গীবত ও চোগলখুরী না করা : পরনিন্দা, দোষচর্চা বা গীবত-তোহমত সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার। এ কাজ সমাজে হানাহানির পরিবেশ বৃদ্ধি করে। তাই এই ঘৃণ্য কর্ম থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ আদশে দিয়েছেন। তিনি বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوْا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيْهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيْمٌ،

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অধিক ধারণা হ’তে বিরত থাক। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ। আর তোমরা ছিদ্রান্বেষণ করো না এবং একে অপরের পিছনে গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করে? বস্ত্ততঃ তোমরা সেটি অপসন্দ করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,

يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيْمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِيْنَ وَلاَ تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِىْ بَيْتِهِ.

হে ঐসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে, কিন্তুঅন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলমানদের গীবত করবে না ও দোষ-ত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্ত করে ছাড়বেন’।চোগলখুরীর পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ،

চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। অন্যত্র তিনি বলেন,

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ
 
চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। তিনি আরো বলেন,

تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ، الَّذِىْ يَأْتِىْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ،

ক্বিয়ামতের দিন তুমি আল্লাহর কাছে ঐ লোককে সব থেকে খারাপ পাবে, যে দু‘মুখো। সে এদের সম্মুখে এক রূপ নিয়ে আসতো, আর ওদের সম্মুখে অন্য রূপে আসত’।

৬. অন্যের সম্পর্কে কু-ধারণা না করা : অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে। তার প্রতি অযথা কু-ধারণা পোষণ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ،

হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা কোন কোন ধারণা পাপ’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوْا، وَلاَ تَجَسَّسُوْا، وَلاَ تَحَاسَدُوْا، وَلاَ تَدَابَرُوْا، وَلاَ تَبَاغَضُوْا، وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا-

তোমরা অনুমান করা থেকে সাবধান হও। কেননা  অনুমান অবশ্যই সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যা। আর তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করো না, গুপ্তচরবৃত্তি করো না, পরস্পরের সাথে ঝগড়া-বিবাদ করো না এবং পরস্পরের সাথে হিংসা করো না। পরস্পরের ক্ষতি করার জন্য পেছনে লেগে থেকো না। আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে যাও’। অতএব মানুষের সাথে চলাফেরার ক্ষেত্রে উপরোক্ত আদব বা শিষ্টাচার সমূহ মেনে চলা যরূরী। এর ফলে সমাজের অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এবং পরকালে অশেষ ছওয়াব হাছিল হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!

Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka