আল্লাহ যা কিছু বিধান প্রদান করেছেন তা তাঁর নিজের জন্য নয়, সবই মানুষের কল্যাণের জন্য
আল্লাহ যা কিছু বিধান প্রদান করেছেন তা তাঁর নিজের জন্য নয়, সবই মানুষের কল্যাণের জন্য। এ সকল বিধান দু প্রকার। প্রথম প্রকার বিধান মানুষের ব্যক্তিগত কল্যাণ ও উন্নতির জন্য। এগুলোকে সাধারণত হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর অধিকার বলা হয়। দ্বিতীয় প্রকার বিধান মানুষের সামাজিক জীবনের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। এগুলোকে হক্কুল ইবাদ বা সৃষ্টির অধিকার বলা হয়।
প্রথম প্রকার বিধান লঙ্ঘন করলে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার জাগতিক, মানসিক, আত্মিক ও পারলৌকিক উন্নতি ব্যাহত বা ধ্বংস হয়। যেমন, সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যিকর ইত্যাদি নির্দেশিত কর্মে অবহেলা করা অথবা শিরক, মদপান ইত্যাদি নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া।
দ্বিতীয় প্রকার বিধান লঙ্ঘন করলে মানুষ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও তার আশপাশের কোনো মানুষ বা কোনো সৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, কাউকে গালি, গীবত ইত্যাদির মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া, কারো সম্পদ, অর্থ, সম্মান বা জীবনের কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন করা। ফাঁকি, ধোকা, সূদ, ঘুষ, যুলুম, খুন, ধর্ষণ সবই এ জাতীয় পাপ। কেউ যদি অন্য কাউকে কোনো ব্যক্তিগত পাপে প্ররোচিত করে, যেমন সালাত ত্যাগ, মদপান ইত্যাদি কর্মে অন্য কাউকে প্ররোচিত করে তাহলে তাও এ প্রকারের পাপে পরিণত হবে। এছাড়া আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ সমাজের প্রতিটি মানুষের প্রতি অন্য মানুষের কিছু দায়িত্ব নির্ধারণ করেছেন। স্বামীর প্রতি দায়িত্ব, স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব, পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব, সন্তানের প্রতি দায়িত্ব, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব, কর্মদাতার দায়িত্ব, কর্মচারীর দায়িত্ব, সহকর্মীর দায়িত্ব, দরিদ্রের প্রতি দায়িত্ব, অসহায়ের প্রতি দায়িত্ব, বিধবা ও ইয়াতিমদের প্রতি দায়িত্ব, পালিত পশুর প্রতি দায়িত্ব ও অন্যান্য সকল দায়িত্ব। এগুলো পূর্ণভাবে পালন না করলে তা হক্কুল ইবাদ বা সৃষ্টির অধিকার নষ্টের পাপ হবে।
প্রথম প্রকারের পাপের জন্য পূর্ণ তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন বলে কুরআন ও হাদীসে বারংবার সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে দ্বিতীয় প্রকারের পাপের মধ্যে দুটি দিক রয়েছে : প্রথম, আল্লাহর বিধানের অবমাননা এবং দ্বিতীয়, আল্লাহর কোনো সৃষ্টির অধিকার নষ্ট করা। এরূপ পাপে নিজেকে কলুষিত করার পরে বান্দা যখন আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন আল্লাহ তাঁর বিধান অবমাননার দিকটি ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু চূড়ান্ত বিচার দিনের মহান ন্যায়বিচারক তাঁর কোনো সৃষ্টির প্রাপ্য ক্ষমা করেন না। তার পাওনা তিনি বুঝে নেবেন ও তাকে বুঝে দেবেন। এজন্য এ জাতীয় পাপের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ, যাদের অধিকার নষ্ট বা সংকুচিত হয়েছে তাদের অধিকার ফেরত না দিলে বা তাদের নিকট থেকে ক্ষমা না নিলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সালাত-সিয়াম পরিত্যাগকারী, মদ্যপান, শূকরের মাংস ভক্ষণকারী বা এধরনের যে কোনো পাপীর জন্য ক্ষমালাভ সহজ। কিন্তু ভেজালদাতা, ফাঁকিদাতা, ধোঁকাপ্রদানকারী, যৌতুক গ্রহণকারী, ইয়াতিম, দুর্বল ও বিধবাদের সম্পদ দখলকারী, ঘুষ, সুদ ও যুলুম, চাঁদাবাজি ইত্যাদি দুর্নীতির মাধ্যমে কারো সম্পদ গ্রহণ বা অধিকার হরণকারীগণের ক্ষমালাভ খুবই কষ্টকর। এজন্য প্রতিটি যাকিরকে সদা সর্বদা চেষ্টা করতে হবে, দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে সর্বদা দূরে থাকার। যদি কোনো মুসলিমের পূর্ব জীবনে এ ধরনের পাপ সংঘঠিত হয়ে থাকে, তাহলে যথাশীঘ্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির থেকে ক্ষমা গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। সাথে সাথে বেশি করে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি, ক্ষমা ও সাহায্য ভিক্ষা করতে হবে, যেন তিনি এগুলো থেকে ক্ষমা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহ আমাদের সাঠিক বুঝদান করুন। আমীন!