কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মনের সুস্থতার সঙ্গেও মুখের সুস্বাস্থ্যের যোগসূত্র আছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সীর ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, নানা ধরনের মানসিক সমস্যার সঙ্গে মুখ ও দাঁতের সম্পর্ক রয়েছে।
দাঁতে ক্যারিজ বা গর্ত শিশুদের খুব পরিচিত একটি সমস্যা। স্কুলগামী শিশুদের প্রিয় খাবার যেমন: আইসক্রিম, চকলেট, কোমল পানীয়,
কৃত্রিম জুস, আলুর চিপস, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি দাঁতের গর্ত তৈরি করে। এ সমস্যার চিকিৎসা না করালে একপর্যায়ে তা দাঁতের মজ্জাকে আক্রান্ত করে। তখন ব্যথা শুরু হয়। পরবর্তীকালে দাঁতের গোড়া ফুলে যায়, দাঁত ভেঙ্গে যায়। যেসব শিশুর মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তাদের লেখাপড়ায় আগ্রহ, নিজের ওপর আস্থা ও স্মরণশক্তি স্বাভাবিক থাকে। শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত পুষ্টি, প্রাণচঞ্চলতাসহ মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকে।
অসুস্থ দাঁত দিয়ে খাবার গ্রহণে কষ্টের কারণে অপুষ্টি, স্কুলের প্রতি অনিহা, লেখাপড়ায় অমনযোগিতা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। শিশুর দুধদাঁত সঠিক সময়ে না পড়ে আগে বা পরে পড়লে স্থায়ী দাঁত এলোমেলো হয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে। তখন সৌন্দর্যের ঘাটতি থেকে মানসিক কষ্টের সূচনা হয়। হাসি ও বাক্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্যতম জরুরি কার্যকর মাধ্যম, ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম হাতিয়ার। আর এর জন্য দরকার সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন দাঁত।
যেকোনো বয়সের যে কেউ এলোমেলো ও বিবর্ণ দাঁত নিয়ে মনঃকষ্টে ভুগতে পারে। বিবর্ণ দাঁতের অন্যতম কারণ সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ না করা, ধূমপান, পান, জর্দা, আঘাত, দাঁত ক্ষয়, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
ওদিকে ডিমেনশিয়া এমন একটি সিনড্রোম, যেখানে স্মৃতিশক্তি, চিন্তা–ভাবনা, আচরণ এবং প্রতিদিনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। অযত্ন বা অবহেলার কারণে দাঁতকে রক্ষা করতে না পারলে ডিমেনশিয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। যথাযথ চর্বণ মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করে, ফলে মস্তিষ্ক সতেজ থাকে। অন্যদিকে, দাঁতহীন মুখ সৌন্দর্য নষ্ট করে। দীর্ঘমেয়াদি মাড়ির রোগ ও মুখের দুর্গন্ধের
কারণে অনেক সময় রোগীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মুখের সুস্থতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে সঠিক নিয়মে মুখের যত্নের কোনো বিকল্প নেই। মনগড়া পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ না করে নিয়মিত ও নিয়ম অনুযায়ী মুখ পরিষ্কারের অভ্যাস সিংহভাগ রোগপ্রতিরোধ করতে পারে।