প্রতিটি মানুষের একটি নিজস্ব জগত থাকে যা তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে নিয়ে গড়ে ওঠে। তার হাসি-আনন্দ ও দুঃখ বেদনা তাদের সাথে খুব নীবিড়ভাবে শেয়ার করতে পারে। কিন্তু তার পড়াশুনা শেষ করার পর ক্যারিয়ার গঠনের জন্য আরেকটি জগত সৃষ্টি হয়, যেখানে শুধু কাজ ও পেশাদারিত্বের সম্পর্ক নিয়েই পথ চলতে হয়, নিজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার জন্য সহকর্মী বা লীডারদের আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন করতে হয় এবং সকলের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে নিজের গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে হয়। এজন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা খুবই আবশ্যক হয়ে পড়ে, যা আমি আমার কর্মস্থলের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পেরেছি। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ
১. ইতিবাচক ভাবনাঃইতিবাচক বা পজিটিভ চিন্তাভাবনা একজন মানুষকে আরেকজন মানুষ থেকে সহজেই আলাদা করতে পারে। যে সকল মানুষ পজিটিভ চিন্তাভাবনা করে, মানুষের মাঝে সব সময় আশার আলো সঞ্চার করে উৎসাহ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় যোগায়, কর্মক্ষেত্রে এই সকল মানুষদের খুব তাড়াতাড়ি গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয়। প্রতিষ্ঠানে নিজকে লিডার হিসেবে গড়তে চাইলে এই ইতিবাচক মনোভাবের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু পজিটিভিটি জিনিসটা একদিনে তৈরি হয়না। পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা, কিছু জায়গায় কন্ট্রোল আর প্রাক্টিসের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সঞ্চার হয়। যারা পজিটিভিটি সম্পর্কে জানতে আর শিখতে চান, তারা ড. মোঃ সবুর খান স্যারের পজিটিভিটির উপর
https://goedu.ac/ তে এই দুর্দান্ত কোর্সটি করে ফেলতে পারেন। কেউ যদি চায় সে তার নেগেটিভ মাইন্ডকে পজিটিভে রুপান্তর করবে, এই কোর্সটি হতে পারে তার জন্য বড় নিয়ামক।
কোর্স লিঙ্কঃ
https://goedu.ac/courses/general/positivity-how-to-build-positive-mentality/২. সংযত আচরণ, বিনয় আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃআচরন একটা মানুষের জন্য বড় মাপ কাঠি হিসেবে কাজ করে। এই জন্য কর্মক্ষেত্রে সংযত আচরন খুবই গুরত্বপূর্ণ। কোন মানুষের সাথে কেমন আচরন করতে হবে তা সব সময় স্থান, কাল, পাত্র ভেদে নির্নয় করে চলাই শ্রেয়। কর্মক্ষেত্রে যে সকল মানুষ তাদের সংযত আচরন দ্বারা মন জয় করতে পারে তাদের গ্রহনযোগ্যতা থাকে অনেক উপরে । মানুষের এই সংযত আচরনে বিনয় অনেক বড় অলংকার হিসেবে গন্য হয়ে থাকে। তাই “আমি দুঃখিত” বলার চাইতে আমাকে মাফ করবেন বলাটা অধিক বিনয় প্রকাশ করে থাকে।
৩. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং কৃতিত্ব দেওয়াঃকর্মক্ষেত্রে কারো দ্বারা উপকৃত হলে, কোন সমস্যার সমাধান হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাটা জরুরী। অকৃতজ্ঞ মানুষ যেমন সৃষ্টিকর্তার দয়া থেকে বঞ্চিত হয় তেমনি কর্মক্ষেত্রে মানুষের গ্রহনযোগ্যতাও হারায়। অপর দিকে একই টিমে কাজ করার দরুন যদি কোন সাফাল্য আসে তার কৃতিত্ব টিমের সকলকেই দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র তার জুনিয়র, এক সহকর্মী আরেক সহকর্মীকে, জুনিয়র তার সিনিয়রকে কাজের ক্রেডিট দিলে টিমের ব্যালেন্স ঠিক থাকে আর আউটপুট নিশ্চিত হয়।
৪. অন্যের কাজকে সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে করাঃআমরা সবাই কম বেশি টিমে অথবা অন্য কোন বিভাগের সাথে মিলিত হয়ে কাজ করি। দেখা গেলো একজন টিম মেম্বারের অংশের কাজটা শেষ হয়ার পর আরেকজন টীম মেম্বারের কাজ শুরু হবে। এখন সে যদি কাজটা সঠিক সময়ে শুরু না করে অথবা ডেইডলাইনের আগে শেষ করতে না পারে তাহলে অন্য টিম মেম্বার তারটা শুরু করতে পারছেনা এবং ডিপার্টমেন্ট/ম্যানেজমেন্টের প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হচ্ছে। আর কেও যদি নিজের কাজটা শেষ করে তার সময় আর স্কিল অনুযায়ী পরের অংশে নিজেকে ট্যাগ করতে পারে, টিমে তার একটা বড় গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হয় খুব সহজেই। অনুরুপভাবে কারো কোন কাজ পড়ে থাকতে দেখলে যা প্রাতিষ্ঠানিক মঙ্গল বয়ে আনতে পারে, তাকে কাজটার গুরুত্ব বুঝিয়ে মনে করিয়ে দিয়ে, গাইড করে যদি ভালো ফলাফল আনা যায় তারও একটা বড় প্রভাব পরে যিনি সাহায্য করেন এই বিষয়ে।
৫. স্কিল শেয়ার করাঃএকজন মানুষ কর্মক্ষেত্রে অন্যদের কাছে তার আলাদা জায়গা করে নিতে পারে স্কিল শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে। ডিপার্টমেন্টে খুব কম সদস্যই সর্বোচ্চ স্কিলের অধিকারী হয়ে থাকে। তাই কেই যদি নতুন কিছু শেখে, বিশেষ করে যা অফিসের দৈনন্দিন কাজে বেশি ব্যবহার হয় আর তা শেয়ারের মাধ্যমে অন্যরা উপকৃত হয় তাহলে যিনি শিখিয়ে থাকেন তার আলাদা একটা গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয় অন্যদের কাছে এবং ম্যানেজমেন্টের কাছেও।
৬. সমালোচনা, পরনিন্দা আর অফিস পলিটিক্স থেকে দূরে থাকাঃমানুষের কম বেশি অন্যের সমালোচনা, পরনিন্দা করার প্রবনতা থাকে। অনেক মানুষই আবার ধর্মীয় মনোভাবের কারনে নিজেকে এই জায়গা থেকে দূরে রাখেন। তেমনি অফিস পলিটিক্স একটা কাজের পরিবেশকে দূষিত করে সেই বিভাগের অথবা পুরো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতায় কমিয়ে দিতে পারে। কারন এই তিনটা জিনিসের কারনে টিমওয়ার্কে মারাত্তক প্রভাব ফেলে এবং মানুষ তার কর্মোদ্যম হারিয়ে অন্যের পেছনে লেগে থাকে। সচরাচর অফিসে এই শ্রেনীর মানুষকে সবাই এড়িয়ে চলে এবং এদের গ্রহনযোগ্যতা থাকে একদম তলানিতে।
৭. বিপদে পাশে দাড়ানোঃশুধু একজন প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী হিসেবে নয়, অন্যের বিপদে যে কোন সময়, যে কোন জায়গা থেকে মানুষ হিসেবে পাশে দাড়ানোটা ব্যক্তির মহত্বকে তুলে ধরে। তাই অফিস কিংবা অফিসের বাইরে কারো কোন প্রয়োজনে অথবা বিপদে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে পাশে থাকা উচিত। আপনার সাহায্য ছাড়াই হয়তো সে তার সমস্যাটা সমাধান করতে পারবে কিন্তু আপনার একটু ফোন কল, একটা বাক্য “পাশে আছি” তার এবং তার পরিবারের কাছে আপনার গ্রহনযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলবে শতগুন। এর বাইরেও প্রতিটা মানুষের ছোট ছোট বিষয় গুলোও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। সরাসরি সাহায্যের সুযোগ না থাকলেও ভালো পরামর্শ দিয়ে সমাধানের সুযোগ তৈরীর মাধ্যমেও অন্যের মন জয় করা যায়।
৮. অন্যের অর্জনকে উৎযাপন করাঃযাদের মন সংকীর্ণতায় ভরা তারা অন্যের অর্জনে ঈর্ষান্বিত হয় সবসময়। আর এই মনভাব সম্পন্ন ব্যক্তিরা আস্তে আস্তে দূরে সরে যায় সবার থেকে। আর ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক অর্জনে যে ব্যক্তি এগিয়ে এসে স্ব উদ্যোগে সবাইকে সাথে নিয়ে অর্জনটা উৎযাপন করতে পারে তার সহজেই একটা গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয় কর্মস্থলে। পাশাপাশি যার সাফল্যে এই আনন্দ তারও উচিত সবাইকে এই সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যদি তা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে অর্জন হয়ে থাকে।
৯. কর্মক্ষেত্রে নিজের ষোল আনাই ঢেলে দেওয়াঃকর্মক্ষেত্রে একজন মানুষ তার সবটাই ঢেলে দেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। অযথা সোস্যাল মিডিয়ায় সময় কাটিয়ে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট না করে অফিসের বরাদ্দ সময়টা যদি যথাযথ ব্যবহার করে কার্যকরী ফলাফল নিশ্চিত করা যায় তাহলে ম্যানেজমেন্টের কাছে তার আলাদা একটা গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হয়। সমসাময়িক দায়িত্বের পাশাপাশি নতুন কিছু উদ্ভাবন করে তা বাস্তবায়ন করে ফলাফল নিয়ে আসলেই একজন দক্ষ কর্মীর তকমা পাওয়া যায়।
১০ঃ সম্মানের আর অগ্রাধিকারে যার যতটুকু প্রাপ্য তাকে ততটুকুই দেওয়াঃপ্রথমে একজন মানুষ পরে একজন কর্মী হিসেবে যার যতটুকু সম্মান আর অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে তাকে তার প্রাপ্য অনুযায়ী দেওয়া উচিত।অনেক ক্ষেত্রে একটু বেশি দিলেও কোন ক্ষতি নেই। কেও হয়তো আমাকে সম্মান নাই করতে পারে কিন্তু তাকে তো আমার সম্মান দিতে বাধা নেই। এইভাবেই একজন আরেকজনকে সম্মান আর অগ্রাধিকার দিলে আস্তে আস্তে অন্যেরও ওই ব্যক্তির প্রতি আলাদা একটা জায়গা তৈরি হয়। আমি থেকে যদি তুমি, তোমরা, আপনি, আমরা এই শব্দতে প্রাধান্য দিতে পারি তাহলে অন্যেদের কাছে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই একটা অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্মান আর অগ্রাধিকার না পেয়েও কেন অন্যকে সম্মানিত করা উচিত তা বুঝার জন্য দেখে নিতে পারেন চমৎকার এই ভিডিওটা।
ইউটিউব লিংকঃ
কর্মক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্যতার উপকারিতা;কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষের গ্রহনযোগ্যতা তৈরী যে সুবিদা;
প্রথমত, যাদের কর্মক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয়, তারা খুব দ্রুত মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে। যেকোন বিষয়ে সবার তাৎক্ষনিক সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটা দিয়ে দ্রুত সময়ে ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্জনকে তরান্বিত করা যায়।
দ্বিতীয়ত, মানুষের সমালোচনা, পরনিন্দা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং অফিস পলিটিক্সের মত বেড়াজাল থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা যায়।
তৃতীয়ত, ম্যানেজমেন্টের একটা ভরসা তৈরী হয় এই সকল মানুষদের প্রতি। তাৎক্ষণিক অথবা বাৎসরিক মুল্যায়নের ভিত্তিতে ক্যারিয়ারে বড় বড় পালক যোগ হতে পারে বর্তমান অবস্থান, অর্থ আর অন্যান্য সুবিদার সমন্বয়ে।
লিখেছেন;
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান
অফিসার
মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি