আমি যেন কে স্যার !!!

Author Topic: আমি যেন কে স্যার !!!  (Read 929 times)

Offline Mohammad Nazrul Islam

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 178
  • Test
    • View Profile
আমি যেন কে স্যার !!!
« on: December 07, 2021, 01:43:40 PM »
জীবনের হিসাব বড়ই কঠিন। কারও কারও জীবন, সময়ে মানদন্ডে-বায়ুবিক। আবার কারও জীবন এ ভব-সাগরে সোনার তরী। জীবন গঠণ-পঠনে ভাবের প্রয়োজন আছে বৈকি! ভাবনা মানুষকে ভাবায়, আদি-অন্তের প্রশ্ন জিজ্ঞায়। এ কারণে জগতের অধিকাংশ মানুষই ভাবতে ভালবাসে। তবে, কথায় কথায় আমরা ভাববাদী উদাহরণ তুলে ধরলেও সুবিধা বুঝে-স্রোতে চলা শ্যাওলা আমরা
 
সুফিষ্টরা বলেছেন- ভাবনার সাথে মনের সংযোগ আর বস্তুর সাথে দেহের সংযোগ। বস্তুনিষ্ঠ ভাবনা  সকলেরই ভাবতে ভাল লাগে। কিন্তু বাস্তবতা সর্ম্পন-তরলার্থতায় ভরপুর। যত তেল তত গেল.. অবস্থা।

আমার কেবলি মনে হয়েছে সমাজে বস্তুবাদি মানুষের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ –পতিতা শ্রেণী।  কিন্তু তারা সমাজে ঘৃনিত । এর কারণ তারা আধুনা- সমাজকে চিনে এবং জানে।
ছোট বেলা থেকেই আমার খুব আগ্রহ ছিল বস্তুবাদি মানুষের সাথে সঙ্গ পাতানো। কিন্তু কেন জানি হয়ে উঠেনি। একবার আমি, পতিতাদের সাথে সঙ্গ করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু  সামাজিক বাধাঁ-বিপত্তির কারণে তা হয়ে উঠেনি। এই জন্য  আক্ষেপের সীমা ছিলনা.....।

কিন্ত পরক্ষণে তথাকথিত ভদ্র সমাজে বাস করে আমার মনে হয়েছে- আধুনিক ভদ্র সমাজে অঘোষিত পতিতাদের নিবৃত্ত-পদচারণা রয়েছে যার সংখ্যা অগনণিয়। কিন্তু তারা সর্বক্ষেত্রেই বিনিময়ে-সমাজ শুদ্ধ

হিসাব করে দেখেছি আমার ৪০ বছর জীবনের প্রাপ্তি; শুধু বিনিময়ের হিসাব মাত্র। পদে পদে ধাঁক্কা খাওয়া মানুষগুলো অবশ্যই বুঝেছেন সমাজে- কেউ কাউরে ভালবাসতে চায় না যদি সেখানে লোকসানের চেয়ে লাভের পাল্লা ভারি না হয়। এখন অতিমাত্রার তরলার্থিকতায় সমাজে  স্বার্থহীণ প্রাণীরা পানশে-অটুস, বিষন্ন প্রায়

একটু খেয়াল করে দেখবেন- সংসারে সবচেয়ে ছোট অবুঝ ছেলেটি দৌড়িঁয়ে এসে তার বাবার কাছে আবদার ধরে - বাবা আমার জন্য কি এনেছো ? সুন্দরী ষোড়শী নব-যৌবনা তরুনীটি জীবনের হিসাব গড়-মিলে হীনমান্য পুরুষের শস্য সঙ্গী হয়-দেনা-পওনার দায়ে। এ গুলো আমাদের সমাজের বাস্তব ধারাপদ।

আমার কর্মজীবনের মোট ১৮ বছরে খুব কম মানুষকেই দেখেছি যারা মানবিক। চিরা-চরিৎ ধরা বাধাঁ নিয়ম ভেঙ্গে জীবনের কথা বলেছেন। তবে ব্যতিক্রম যে হয়নি তা নয়। অনেকেই আবার গায়ে পড়ে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মানুষের কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন। সর্বতো ভাবে বিশ্বাস করেছেন মানবতাই পরম-ধর্ম

চেখের সামনে দেখেছি –অমানবিক মানুষ গুলো সমাজের চোখ ফাকিঁ দিয়ে তরল-গড়ল কাজে- তর তর করে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করছেআত্ম-জ্ঞানী- চোখ বুঝা মানুষ গুলো, মাথা নিচু করে তাদেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছে

আপনি একটু খেয়াল করে দেখবেন,  আমরা সারা জীবন যে ইমামের পিছনে নামাজ পড়ছি-ভাল ভাল কথা শুনছি, সেই ইমাম অন্যে বাড়ীর খাবারে অবস্থ্য । যাকে নিয়ে ঘরে করছি, জীবনের অর্ধাঙ্গীনি ভাবছি সেই কথায় কথায় বলছে- ‘শুধু আমি দেখে তোমার সংসার করে গেলাম…….।

নদীর মাছ সাগরে খৈই হারায় তার অভিযোজনিক সমস্যার কারণে। অবস্থার বিচারে আমরা ও আপনারা হয়তো তাই। কিন্তু বেচেঁ থাকার ইচ্ছা সবারই আছে? আর ভাল ভাবে বাচাঁর ইচ্ছা তো সার্বজনীন।

ছোট ঘরের সন্তানদের বড় হবার দূরন্ত ইচ্ছা থাকে। কিন্তু আমাদের সমাজ অভি-তান্ত্রিক। এখানে রাজার ছেলে রাজা হয়, মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হয়, এমপির ছেলে এমপি হয়। এই অভি-তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিপরিতে অবস্থান নিতে চাওয়া সত্যিকার অর্থেই চ্যালেন্ঞ্জিং।

আমাদের কেবলই মনে হতে পারে- আবুল মিয়া কেরানীর চাকুরী করে বাড়ী-গাড়ী করলো? আমি কি করলাম? একটা কথা মরে রাখা প্রয়োজন- দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের সৎ পথে বড় হাবার ভাবনার চাদেরঁ বুড়িমার সূতাকাটাঁ গল্প..। দুই একজন বড় হতে পারে তা কদাচিৎ…..!

আমাদের ভাবনা হওয়া উচিৎ- পাশের বাড়ীর দরিদ্র কলিমুদ্দীনের একমাত্র মেধাবী ছেলে সলিমুদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে হতাশায় ভোগে এখন গাজাঁ টানেছে কেন ?

মনে রাখবেন, আপনি যেটা/যাকে বেশী কাঙ্গিত মনে করেন আসলে সে/সেটা অত-সহজলভ্য নয়। আপনাকে বুঝতে হবে- এখন সমাজের মানুষ অনেক চালাক –তারা কিলিয়ে কাঠালঁ পাঁকাতে জানে। গাছ পাকিয়ে কাঁঠাল খওয়ার দিন শেষ। তাই বলে ‘প্রকৃত রস-আহরণে কাঁঠাল খাবার আশা ত্যাগ করা উচিৎ কি?

২০০১ সালের অক্টোম্বর মাসের ঘটনা, তারিখ মনে নাই। আমাদের এম.এ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনার দিন। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক জনাব প্রফেসর ড. মন্জুর মোরশেদ (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) ক্লাসে এসে নাম ডাকলেন-আরশেদ আলী। আরশেদ আলী বুক টান টান করে উত্তর দিল- ইউয়েস স্যার। স্যার পকেট হতে দুইটা পাচঁ টাকার নোট বাহির করে বললেন-তুমি বিভাগে প্রথম হয়েছ নাও এটি তুমার পুরষ্কার।

পরে নাম ডাকলেন-মোহাম্মদ নজরূল ইসলাম ? আমি অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে উত্তর দিয়ে ছিলাম- আমি যেন কে স্যার?? ক্লাস সমবেত সকলেই উচ্চ স্বরে হাসাঁহাসি করে উঠলে স্যার সকলকে থামিয়ে দিয়ে পকেট হতে পাচঁশত টাকার একটা নোট বাহির করে বললেন-এটি তোমার দ্বিতীয় হবার পুরষ্কার নয়‘ আমি যেন কে স্যার? এই  উত্তরে পুরস্কার।

সেই দিন মাথায় হাত রেখে তিনি বলেছিলেন-যেখানেই থাক, যে অবস্থায় থাক; দিনে একবার হলেও নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করিও –আমি যেন কে স্যার???



« Last Edit: December 07, 2021, 03:23:00 PM by Mohammad Nazrul Islam »