জাহান্নামের আজাবের ভয়ে জমিনের ক্রন্দন
তাফসীরে জালালাইন শরীফের হাশিয়ার মধ্যে লেখা রয়েছে, রাব্বুল আলামীন একদিন জমিনকে ডেকে বললেন, হে জমিন! আমি তোর বুক থেকে মাটি নিয়ে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করব আর ঐ আদমের সন্তানের মধ্যে যারা আমার আনুগত্য করে চলবে তাদেরকে আমি জান্নাত দান করব। পক্ষান্তরে যারা আমার নাফরমানী করবে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে জ্বালাব। একথা শুনে জমিন আফসোস করে ক্রন্দন করতে লাগল যে, হে দয়াময় মাবুদ! আমার বুক থেকে মাটি নিয়ে আপনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করবেন আর তারা জাহান্নাম-এর আগুনে জ্বলে পুড়ে ভষ্ম-ভষ্ম হবে তা আমি কি করে সহ্য করব? ঐ দিন হতে জমিন জাহান্নামের ভয়ে কান্না শুরু করল আর জমিনের চোখের পানি গিয়ে খাল-বিল, নদী-সমুদ্রের পানির সাথে মিলতে থাকল। অন্যথায় পৃথিবীর বুকে এতদিন পানি থাকত না। নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যেত। (তাফসীরে জালালাইন ৮ পৃষ্ঠা)
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ ঘোষণা দিলেন যে, তিনি কাদামাটি থেকে মানুষ গড়বেন। সেই মাটিকে তিনি আকৃতি দিবেন এবং তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দিবেন।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা ফেরেশতাদিগনকে মাটি নিয়ে আসার আদেশ দিলেন ইবনে মাস’উদ এবং অন্যান্য সাহাবীগণ হইতে বর্ণিত আছে যে, পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) কে পৃথিবী মাটি এনে দেয়ার জন্য প্রেরণ করলেন। তখন পৃথিবী বললো, “তোমার হাত থেকে আমার পরিমাণ হ্রাস হওয়া কিংবা বিকৃতি হওয়া থেকে আমি মহান আল্লাহ্ তা’আলার আশ্রয় প্রার্থণা করছি।” তাই জিবরাঈল (আঃ) সঙ্গে কিছু না নিয়েই ফিরে গিয়ে বললেন:“হে আমার পালনকর্তা, পৃথিবী আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করেছে।”এবার আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতা মিকাঈল (আঃ) কে একই উদ্দেশ্যে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠালেন। এবং একইভাবে পৃথিবী আবারও আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করলো।
অতঃপর আল্লাহ্ মৃত্যুর ফেরেশতা বা মৃত্যুদূতকে পাঠালে পুনরায় পৃথিবী একইভাবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করলো। কিন্তু তখন সেই ফেরেশতা বললো: “আমিও তাঁর আদেশ মান্য না করে ফিরে যাবার জন্য আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করছি।” তাই তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের উপরিভাগ থেকে মাটি নিয়ে, সেগুলো মিশিয়ে তা সঙ্গে নিয়ে আরোহণ করলেন আর আল্লাহ্ তা’আলা মাটিগুলোকে ভিজিয়ে আঠালো করলেন। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতাগণকে বললো যে তিনি শুষ্ক ঠনঠনে মাটির কাদা থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে , আল্লাহ পাক বলেন,
اِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ طِیۡنٍ
”আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব।”{সূরা সাদ: আয়াত ৭১}
وَاِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ
”আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব।”{সূরা আল-হিজর: আয়াত ২৮}
প্রতিটি মানুষ কেন ভিন্ন (একই পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও)
আবু মুসা আল-আশয়ারি হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্ আদম (আঃ) কে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার এক মুঠো ধুলোমাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। সেইজন্যই মানবজাতির মধ্যে বিভিন্ন রং; ভালো এবং মন্দ, নরম ও কঠিন, এবং এর মধ্যবর্তীতে যা আসে তার সবকিছুই আছে।”(তাফসীরে ইবনে কাসির)