« on: January 18, 2022, 04:05:52 PM »
নিষিদ্ধ গাছ
আদম (আঃ) এবং হাওয়া (রাঃ) কে জান্নাতে বসবাস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তারা সকল মানব জাতির প্রত্যাশিত জায়গায় জীবন যাপন করছিলো। তবে, আল্লাহ তা’আলা তাদের দুজনকে সেখানের সবকিছু উপভোগ করার অনুমতি দিয়েছিল শুধুমাত্র একটি গাছ ব্যতীত। আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা তাদেরকে সেই গাছটির নিকটবর্তী হতেও সতর্কসরুপ নিষেধ করেছিল।
وَلَا تَقۡرَبَا ہٰذِہِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
“কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।” {সূরা আল-বাকারা: আয়াত ৩৫; সূরা আল-আরাফ: আয়াত ১৯}
আদম (আঃ) এবং হাওয়া দুর্বল হয়ে থাকে। একটি মানুষের মধ্যে কিছুটা ভুলে যাবার প্রবণতাও থাকে, হৃদয়ে পরিবর্তন আসে আর দৃঢ়তা বাড়ে ও কমে। ইবলিস প্রচণ্ড ঈর্ষার মধ্যে নিমজ্জিত থেকে আদম আ সা কে তার মানব দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। সে প্রতিদিন তার মনে ফিসফিস করে প্ররোচণা দিতে থাকে, “আমি কি তোমাকে অমরত্বের পথনির্দশনা দিবো? যাতে তুমি চিরন্তন এই রাজ্যে বসবাস করে এর সবকিছু উপভোগ করতে পারো।আমি কি তোমাদের সেই গাছটার কাছে নিয়ে যাবো?”সে আরো বলে গেলো “তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এই জন্যই এই ফল খেতে নিষেধ করেছে যেন তোমরা চিরস্থায়ী ফেরেশতা না হয়ে যাও। ইবলিস তাদেরকে ভরসা দিয়ে বলল যে আমি তোমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী।
فَوَسۡوَسَ لَہُمَا الشَّیۡطٰنُ لِیُبۡدِیَ لَہُمَا مَا وٗرِیَ عَنۡہُمَا مِنۡ سَوۡاٰتِہِمَا وَقَالَ مَا نَہٰکُمَا رَبُّکُمَا عَنۡ ہٰذِہِ الشَّجَرَۃِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَا مَلَکَیۡنِ اَوۡ تَکُوۡنَا مِنَ الۡخٰلِدِیۡنَ وَقَاسَمَہُمَاۤ اِنِّیۡ لَکُمَا لَمِنَ النّٰصِحِیۡنَ ۙ
সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২০-২১}
আদম (আঃ) নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করতো, “কি হবে যদি এই গাছের ফল খাই আমি? এমনও তো হতে পারে যে এইটাই অমরত্বের বৃক্ষ।” তার স্বপ্ন ছিল বেহেশতের নিখাদ পবিত্রতায় অনন্তকাল বেঁচে থাকার।
ইবলিস একটি লম্বা সময় ধরে তাদেরকে বোঝাতে থাকলো এবং শেষ পর্যন্ত, একদিন তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে, সেই গাছের ফল খাবে। ইবলিস যে তাদের পরম শত্রু যে, তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে, তারা দুজনেই তা ভুলে গিয়েছিল। আদম আঃ সাঃ হয়তো একথাও ভুলে গিয়েছিলো যে তিনি আল্লাহর কাছে শপথ নিয়েছিলেন যে সে গাছটি থেকে খাবেন না।
وَلَقَدۡ عَہِدۡنَاۤ اِلٰۤی اٰدَمَ مِنۡ قَبۡلُ فَنَسِیَ وَلَمۡ نَجِدۡ لَہٗ عَزۡمًا
আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি। {সূরা ত্বোহা: আয়াত ১১৫}
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নিষেধাজ্ঞা সত্বেও আদম (আঃ) গাছটির নিকটবর্তী হলো এবং তারা দুজনেই সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেল।
فَدَلّٰىہُمَا بِغُرُوۡرٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَہُمَا سَوۡاٰتُہُمَا وَطَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡہِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ؕ وَنَادٰىہُمَا رَبُّہُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡہَکُمَا عَنۡ تِلۡکُمَا الشَّجَرَۃِ وَاَقُلۡ لَّکُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর যখন তারা বৃক্ষ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজের উপর বেহেশতের পাতা জড়াতে লাগল। তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২২}
فَاَکَلَا مِنۡہَا فَبَدَتۡ لَہُمَا سَوۡاٰتُہُمَا وَطَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡہِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ۫ وَعَصٰۤی اٰدَمُ رَبَّہٗ فَغَوٰی ۪ۖ
অতঃপর তারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান খুলে গেল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল। আদম তার পালনকর্তার অবাধ্যতা করল, ফলে সে পথ ভ্রষ্ঠ হয়ে গেল। {সূরা ত্বোহা: আয়াত ১২১}
আদম (আঃ) এর খাওয়ার পর, তিনি আবিষ্কার করলেন যে, তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনেই বিবস্ত্র। তাই, তারা লজ্জা নিবারণ করতে আশেপাশের গাছের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকতে শুরু করলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে এসব কথা জানিয়েছেন।
হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২৭}
মহান আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে খেতে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। আল্লাহ বললেনঃ তোমরা পৃথিবীতে নেমে গিয়ে সেখানে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বসোবাস করে মৃত্যুবরন করবে এবং সেখান থেকেই পুনরুত্থিত হবে।
আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। আল্লাহ বললেনঃ তোমরা নেমে যাও। তোমরা এক অপরের শত্রু। তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে বাসস্থান আছে এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ফল ভোগ আছে। বললেনঃ তোমরা সেখানেই জীবিত থাকবে, সেখানেই মৃত্যুবরন করবে এবং সেখান থেকেই পুনরুত্থিত হবে। {সূরা আল-আরাফ: আয়াত ২২-২৫}
তারা জান্নাত ত্যাগ করলো এবং পৃথিবীতে অবতরণ করলো। তারা দুইজন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন। আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করলেন।
Logged
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka