Faculty of Science and Information Technology > Science and Information
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পদধ্বনি
(1/1)
Sultan Mahmud Sujon:
আমাদের বাসায় প্রথম কম্পিউটার এসেছিল ২০০০ সালে। তার হার্ডডিস্ক ছিল ২০ গিগাবাইট, র্যাম ৩২ মেগাবাইট, পেন্টিয়াম থ্রি মডেলের। সেই কম্পিউটার তখন বাজারে সবচেয়ে নতুন। সেই কম্পিউটারে একটা অডিও গান কপি করতে লাগত ৩ থেকে ৪ মিনিট। তখন আমরা নিয়মিত বিরতিতে ওয়ালপেপার মুছতাম জায়গা বের করার জন্য। এখন আমার বাসায় যে ডেস্কটপ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার হার্ডডিস্ক ৬ টেরাবাইট, সঙ্গে ২৫০ গিগাবাইটের একটা এসএসডিও আছে, র্যাম ১৬ গিগাবাইট এবং প্রসেসর কোর-আই-ফাইভ এইটথ জেনারেশন।
মাঝখানের এই ১৮ বছরে কম্পিউটারজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। এখন কম্পিউটার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যারের প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে। সেগুলো সরবরাহ করে কুলানো যাচ্ছে না, বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়ছে, গবেষণা হচ্ছে, অনেক অনেক কাজকর্ম করতে গিয়ে আগের ক্ষমতার কম্পিউটার দিয়ে কুলাচ্ছে না। কাজেই আরও বেশি ক্ষমতার চিপ তৈরি করতে হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে মোটামুটি এলাহি অবস্থা। এই পরিবর্তনের মধ্যেই আমরা প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার সুবিধাটুকু পেয়ে গেছি। আমাদের কাছে কম্পিউটার এখন অনেক সহজলভ্য, আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন।
গুগল, আইবিএম এবং আরও কয়েকটি সিলিকন ভ্যালির স্টার্টআপের মধ্যে বেশ অনেক দিন ধরে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। এটি হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের সুপারকম্পিউটার তৈরির প্রতিযোগিতা। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কম্পিউটার এখন অনেক কিছুই করতে পারে। ১৫ বছর আগের তুলনায় কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতা বহুগুণে বেড়েছে। তারপরও এ যুগের কম্পিউটার দিয়ে আমরা অনেক কাজ করতে পারি না বা বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।
শিগগিরই বাজারে আসছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ঠিক কবে নাগাদ ওটা সাধারণ ক্রেতার হাতের নাগালে আসবে, বলা মুশকিল। কিন্তু নিঃসন্দেহে বলা যায়, সেই কম্পিউটারের ক্ষমতা বর্তমান যেকোনো কম্পিউটারের চেয়ে বহুগুণে বেশি হবে। সে লক্ষ্যেই বেশ কতগুলো প্রতিষ্ঠান দিন-রাত মোটামুটি পাগলের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার তৈরির জন্য।
কোয়ান্টাম কণিকাগুলো মূলত অতিপারমাণবিক কণা। সেগুলো একই সঙ্গে একাধিক অবস্থায় (State) থাকতে পারে। অন্যান্য কম্পিউটারের চেয়ে এর কাজ সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াটাই ভিন্ন। এটাই হবে এই কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় সুবিধা। বর্তমানের সাধারণ কম্পিটারের ক্ষমতা হিসাব করা হয় প্রতি সেকেন্ডে কত বিটের অপারেশন করতে পারে, তার ওপর। সাধারণ কম্পিউটারগুলোয় বিটসংখ্যা হয় দুটি—হয় ০ অথবা ১। এটাকে চাইলে ভোল্টেজ আপ আর ডাউনের সমতুল্য হিসেবে চিন্তা করা যেতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে বিটকে বলে কোয়ান্টাম বিট বা সংক্ষেপে কিউবিট (Qbit)। কোয়ান্টাম কণিকাগুলো একই সঙ্গে একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে। অর্থাৎ কিউবিটের মান চাইলে একই সঙ্গে ০ ও ১ দুটোই হতে পারে। শুধু তা-ই কিন্তু নয়! বরং ১ আর ০ এই দুটি অবস্থার সুপারপজিশনের কারণে কিউবিটের মান আরও অনেক কিছুই হতে পারে। অর্থাৎ আরও অনেক বেশি তথ্য ধারণ করা সম্ভব।
কিউবিটের ধারণাটা কেমন হতে পারে? কাল্পনিক একটা গোলক কল্পনা করুন, ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটারগুলো শুধু এই গোলকের দুই মেরুর দুটি মান গ্রহণ করতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার এই গোলকপৃষ্ঠের ওপর যেকোনো মান গ্রহণ করতে পারবে। ফলে ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটারের তুলনায় এর তথ্য নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা বহুগুণে বেশি হয়। কিন্তু শক্তি খরচ হয় অনেক কম। একটা ফোটন, নিউক্লিয়াস অথবা ইলেকট্রন, এরা সবাই কিউবিট হিসেবে কাজ করতে পারে। এখনকার একদল গবেষক ফসফরাস মৌলের সর্ববহিস্থ কক্ষপথের ইলেকট্রনকে কিউবিট হিসেবে ব্যবহার করছেন।
Source: https://www.bigganchinta.com/technology/quantum-computer
Navigation
[0] Message Index
Go to full version