বুরাক : মি’রাজের পথে নবীজির (সা.) বাহন

Author Topic: বুরাক : মি’রাজের পথে নবীজির (সা.) বাহন  (Read 734 times)

Online Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 460
  • Test
    • View Profile
‘বুরাক’ এমন একটি প্রাণী যার ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) মি’রাজ রজনীতে আরোহণ করেছিলেন। আরবি ‘বুরাক’ শব্দটি ‘বারক’ শব্দ হতে উদ্ভূত। যার অর্থ বিদ্যুৎ, বিজলি। সে বিদ্যুৎ মেঘের মাঝে পরিদৃষ্ট হয়। যেমন পুলসিরাত অতিক্রমকারীদের ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা বিদ্যুতের গতির ন্যায় পুলসিরাত অতিক্রম করবেন। আবার কেউ দ্রুতগামী বাহনের ন্যায় পার হবেন। আবার কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার মতো পার হয়ে যাবেন। আল-কোরআনে ‘বারক’ শব্দটি পাঁচবার এসেছে।

(ক) সূরা বাকারাহ-এর ১৯ ও ২০ নং আয়াতে, (খ) সূরা রায়াদ-এর ১২ নং আয়াতে, (গ) সূরা রূম-এর ২৪ নং আয়াতে, (ঘ) সূরা নূর-এর ৪৩ নং আয়াতে। সুবহানাল্লাহ! বোরাকে আরোহনণকারী মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর সত্তাবাচক নাম ‘মোহাম্মদ’-এ পাঁচটি বর্ণই রয়েছে। এ নাম মোবারকের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই হয়ত আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ‘বারক; শব্দটি আল কোরআনে পাঁচ বার উল্লেখ করেছেন। এরই প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে সূরা ইনশিরাহে স্পষ্টতঃ ঘোষণা করা হয়েছে : ‘আমি আপনার যিকিরকে সমুন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছি’।

বোরাকের আকার-আকৃতি ও গতি প্রকৃতি সম্পর্কে বিজ্ঞ পন্ডিতগণের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আসলে ইহা কী? বিশুদ্ধ ও সর্বজন গ্রাহ্য মতানুসারে বলা হয়েছে যে, ‘বুরাক’ হলো একটি প্রাণী যা আকারে খচ্চর হতে ছোট। গাধা হতে বড়। শ্বেত রঙের প্রাণী। ইহা এতই দ্রুতগামী যে, তার কদম সেখানেই পড়ে যেখানে তার দৃষ্টি পতিত হয়। একারণে প্রসদ্ধি লাভ করেছে যে, ‘বুরাক আকাশ হতে যমীন পর্যন্ত যে দূরত্ব তা’ মাত্র এক কদমেই অতিক্রম করতে পারে। সুতরাং মী’রাজের প্রাক্কালে বুরাক সাত কদমে সাত আসমান অতিক্রম করেছিল।
কোনো কোনো আলেম ব্যক্তিত্ব বলেন, বুরাক কোনো প্রাণী নয়। প্রথমে তা ছিল অস্তিত্বহীন। শুধুমাত্র মী’রাজ রজনীতেই তা’ অস্তিত্বে আনয়ন করা হয়েছিল। যাতে করে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদাকে বুলন্দ হতে বুলন্দতর করা যায়। ইমাম সুহায়লী (রহ:) বলেন, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন বুরাকে আরোহণ করছিলেন, তখন বুরাক লজ্জায় নড়াচড়া করছিল। তখন জিব্রাঈল (আ.) বুরাককে ডাক দিয়ে বলেছিলেন : ‘হে বুরাক! তুমি এমনভাবে লজ্জাবোধ করছ কেন? আল্লাহ জাল্লা শানুহুর নিকট মুহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর চাইতে অধিক কোনো মর্যাদাশীল ব্যক্তি আছেন কী? যিনি তোমার ওপর আরোহণ করবেন? এতে ‘বুরাক’ শান্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে গেল।

তবে, বুরাকের সাদৃশ্য বুঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, বুরাক হলো এমন প্রাণী যা খচ্চর হতে ছোট, গাধা হতে বড়। এতে স্পষ্টতঃই বুঝা যায় যে, বুরাক খচ্চরও না, গাধাও না। বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী আকারের একটি প্রাণী যা মীরাজের ঘটনার সাথেই সংশ্লিষ্ট। অন্য কোনো নবী ও রাসূলের সাথে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা কল্পনা করা বাতুলতা মাত্র। কারণ, অন্যান্য নবী ও রাসূলগণের জীবনে মীরাজের মতো ঘটনার অবতারণা ঘটেছিল বলে জানা যায় না।

হাদীস শরীফে উক্ত হয়েছে যে, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) মী’রাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন : ‘উরিজাবী’ অর্থাৎ আমাকে ঊর্ধ্বমন্ডলে উপনীত করা হলো। লক্ষ করলে দেখা যায় যে, মীরাজ ঘটনাটির এই বিবরণেও পাঁচটি বর্ণই স্থান পেয়েছে। আর এ জন্যই মীরাজের ঘটনাটির আদ্যোপান্ত পাঁচটি স্তরেই আল কোরআন ও আহাদিসে সহীহায় বিবৃত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরবি মী’রাজ শব্দেও পাঁচটি বর্ণের সমাহার লক্ষ্য করা যায়। আর এই মীরাজ রজনীতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছিল। যা অন্য কোনো নবী ও রাসূলের আমলে ফরজ করা হয়নি। এতে অতি সহজেই অনুভব করা যায় যে, মীরাজ সংঘটনের জন্য যে বুরাকের প্রয়োজন ছিল, তাকে প্রকৃতই ‘বুরাক’ বলে মেনে নেয়া সকল বুদ্ধিমানেরই উচিত।


Source:https://www.dailyinqilab.com/article/461547/
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34