নেতিবাচক মূল্যায়নে প্রভাব পরেনা যেন মনে!

Author Topic: নেতিবাচক মূল্যায়নে প্রভাব পরেনা যেন মনে!  (Read 1581 times)

Offline Fahmi Hasan

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 136
  • Test
    • View Profile
তুমি আসলেই ভাল মানুষ না, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না, তুমি এই কাজ করতে পারবে না এর চেয়ে বরং অন্য কিছু কর, এটা তোমার দ্বারা সম্ভব না, তোমার ভবিষ্যৎ খুব খারাপ দেখতে পাচ্ছি, তুমি এমন হলে কেন? এধরণের নেতিবাচক কথার সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত।

 বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য আমাদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। তখন আমরা মনের অজান্তেই এসব নেতিবাচক মন্তব্যগুলো বিশ্বাস করি এবং এর প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকি। আমরা হয়তো এসব মন্তব্যের সাথে নিজেদেরকে কখনোই মিলিয়ে দেখি না যে, আসলেই কি আমি তাই? যেমন: কেউ আমাদেরকে অপবাদ দিলে আমরা কষ্ট পাই। আমরা কষ্ট পাব কেন? অন্যের মিথ্যা অপবাদের জন্য আমাদের তো কষ্ট পাওয়ার কথা না! যেখানে সে মিথ্যাচার করছে! আমরা কষ্ট পাই কারণ আমরা বিষয়টি বিশ্বাস করি তাই। আবার তখন সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা হয়তো কোন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রমান করার চেষ্টা করি যে আমরা এমন না।

 ছোটবেলা থেকেই আমাদের পরিবার থেকে বা আমাদের সমাজ থেকে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে আমাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। তারপর আস্তে আস্তে আমাদের নিজেদের সক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস, নিজের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা এবং আত্মবিশ্বাস কমে যেতে থাকে। যার ফলে তৈরি হয় নিজের প্রতি বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা। যেমন আমি তো ভালো স্টুডেন্ট না, আমার দ্বারা কোন কিছু সম্ভব না,আমি তো পারি না,আমি অন্যদের মত না, আমার সক্ষমতা কম, আমি কালো, আমি বেটে, আমি শুকনো, আমি অসুন্দর, অন্যের কাছে আমার গুরুত্ব নেই, সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে ইত্যাদি। যখন আমাদের মধ্যে এ ধরনের নেতিবাচক বিশ্বাস তৈরি হয় তখন আমরা অন্যের সমালোচনা বা আচরণ দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকি। আবার আমরা যদি আমাদেরকে নেতিবাচক ভাবে মূল্যায়ন করি তাহলে তা আমাদের আচরণে ফুটে ওঠে যা আমাদেরকে অন্যদের দ্বারা নেতিবাচকভাবে মূল্যায়নের সুযোগ করে দেয়।

 তাই প্রথমে আমরা আমাদের রিসোর্স সম্পর্কে সচেতন হবো। এর একটি লিস্ট করে নিজেকে অবগত করবো যে, যেকোন সময় আমি এই রিসোর্সগুলো আমার কাজে লাগাতে পারি। রিসোর্স বলতে আমাদের নিজেদের সক্ষমতা, আমাদের ভালো কোন গুণাবলী, আমাদের দক্ষতা ইত্যাদি । এছাড়া রয়েছে আমাদের পরিচিত অনেকেই যাদের মধ্যে কেউ আমাকে পরিশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কেউ আমাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কেউ আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কেউ আমাকে কোন জিনিস দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কোন নেতিবাচক আবেগের সময় কেউ আমার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে পারে, আবার কেউ আমাকে সু-পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারে, তারাও আমার রিসোর্স।

আমার রিসোর্স সম্পর্কে সচেতনতার পাশাপাশি, আমি আমাকেই কোন প্রকার শর্ত ছাড়া গ্রহণ করতে পারি অর্থাৎ আমি স্বীকৃতি দিতে পারি, আমি ঠিক আমার মতোই, আমি ঠিক আমার আঙুলের ছাপের মতো অনন্য। কোন প্রকার নেতিবাচক মূল্যায়ন ছাড়াই আমি আমাকে ভালোবাসতে পারি। আমি যেমন, ঠিক সেভাবেই যেন আমাকে গ্রহণ করতে পারি। অন্যের কাছ থেকে নেতিবাচক মূল্যায়ন আসবেই, তাদের মুখ বন্ধ করার ক্ষমতা আমার নেই । আমার ক্ষমতা আছে, আমি তাদের কথা গ্রহণ করবো কি করবোনা তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার। আমি নিজের প্রতি এবং অন্যের প্রতি সদয় এবং ন্যায়নিষ্ঠ থাকতে পারি। আমি আমার ভুলের স্বীকৃতি দিতে পারি। আমি আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারি। আর যদি কোন নেতিবাচক কিছু আমার মধ্যে থেকেই থাকে তাহলে তা আমি আমার “উন্নয়নের ক্ষেত্র” (Areas of Improvement) হিসাবে দেখতে পারি।


 

লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
« Last Edit: May 25, 2022, 01:33:15 PM by Fahmi Hasan »
Fahmi Hasan
Senior Administrative Officer,
Office of the Director of Students' Affairs
Daffodil International University.