কারুনের ধন-সম্পদ

Author Topic: কারুনের ধন-সম্পদ  (Read 498 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
কারুনের ধন-সম্পদ
« on: July 23, 2022, 10:45:02 PM »

কারুনের ধন-সম্পদ

কারুন ছিল মস্ত বড়ো এক ধনী লোক। তার সময়ে সবচেয়ে বড়ো ধনী ছিল সে। কারুনের ধন-সম্পদ যেসব ঘরে ও সিন্দুকে রাখা হতো, সেসব ঘর আর সিন্দুকের চাবি বহন করতে সত্তরজনেরও বেশি শক্তিশালী লোকের প্রয়োজন হতো। তাহলে টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ জমা করে রাখার জন্য কারুনের কত হাজার হাজার ঘরবাড়ি, সিন্দুক থাকতে পারে-তা কি কল্পনা করা যায়?

কারুন ছিল ইসরাইল বংশীয়দের একজন। সে ছিল আল্লাহর প্রিয়নবি মুসা আলাইহিস সালামের চাচাতো ভাই। ধন-সম্পদের মোহে সে হয়ে উঠেছিল চরম অহংকারী ও অবাধ্য। আর ছিল একদম হাড়কিপটে। এক কানি পয়সাও কাউকে সে দান করতে চাইত না। কেউ কিছু চাইতে এলে ধাক্কা দিয়ে প্রাসাদ থেকে বের করে দিত।

কারুনের এ অবস্থা তার বংশের সবাইকে ভাবিয়ে তুলল। কিভাবে তাকে ভালো পথে আনা যায়, কিভাবে ভালো মানুষ করা যায়? ভাবতে লাগল সবাই।

একদিন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও বনি ইসরাইলের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে নসিহত করতে গেলেন। তারা বললেন-’হে কারুন! তুমি এমন গর্ব-অহংকার করো না। কারণ, আল্লাহ অহংকারকারীদের একদম পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাকে যে ধন-সম্পদ দান করেছেন, তা দিয়ে তুমি আখিরাতের জন্য স্থায়ী ঘর বানানোর চেষ্টা করো। তোমার প্রতি আল্লাহ যেমন অনুগ্রহ করেছেন, তেমনি তুমিও মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। দুনিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।’

কিন্তু কারুন তার অহংকারকে চরমভাবে প্রকাশ করল। সে বলল-’এ সম্পদ তো আমি আমার জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে অর্জন করেছি। এখানে আল্লাহর অনুগ্রহের কী আছে???!

আল্লাহ তায়ালা যে কারুনকে জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়েছেন, তাকে সৌভাগ্য দান করেছেন, বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে তার সম্পদকে রক্ষা করেছেন-এ সবকিছুই সে বেমালুম ভুলে গেল।

কারুন অহংকারে অন্ধ হয়ে আল্লাহর ক্ষমতার কথা একদম ভুলে গিয়েছিল। শুধু গর্ব, অহংকার ও পাপাচারের কারণে আল্লাহ তায়ালা এর আগেও কারুনের চেয়ে অনেক সম্পদশালী, শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর জাতিকে নিমিষেই ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।

এদিকে কারুনের অহংকার দিনে দিনে বেড়ে যেতে লাগল। সে সবাইকে অবজ্ঞা করতে লাগল। একদিন সে খুব জাঁকজমকের সাথে তার বিশাল লাটবহর নিয়ে জাতির সামনে এক চোখ ধাঁধানো শোভাযাত্রা বের করল। সে যে খুব ধনী এবং কাউকে যে সে পরওয়া করে না, তা দেখানোর জন্যই এমন করল।

খুব অবাক চোখে লোকেরা দেখতে লাগল। যারা দুনিয়ার জীবনে ধন-সম্পদের জন্য লালায়িত ছিল, তারা বলাবলি করতে লাগল-’ইস! কত সৌভাগ্যবান কারুন! কত বড়ো ধনী সে! আহ! আমরাও যদি কারুনের মতো ধনী হতে পারতাম!’

কিন্তু যারা ভালো লোক ছিল, তারা এসব লোকদের বলতে লাগল-’হায়! তোমাদের  মনের এমন অবস্থা দেখে খুব আফসোস হয়! যে ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে, তার জন্য তো আল্লাহর কাছে মহা পুরুস্কার রয়েছে; এগুলো তো সবই ঠুনকো জিনিস।’

কারুনের বহর সমস্ত রাজপথ ঘুরতে লাগল। তার হাবভাব যেন রাজ-রাজাদেরও হার মানায়। অহংকারে গদগদ হয়ে চলতে চলতে সমস্ত বহর নিয়ে সে তার ভবনে প্রবেশ করল। খুব পরিতৃপ্তির সাথে ঘুমাতে গেল।

কী আশ্চর্য! ভোর হতে না হতেই কারুনের পুরো আস্তানা, বিশাল বিশাল প্রাসাদ আর সমস্ত সম্পদ মাটির নিচে তলিয়ে যেতে লাগল। এমনকী কারুনও তলিয়ে যেতে লাগল! ভয়ে-আতঙ্কে কারুন চিৎকার করে বলতে লাগল-’ বাঁচাও বাঁচাও।’

তার চিৎকারে কেউ-ই একটুও এগিয়ে এলো না। ভয়ে সবাই পালাতে লাগল। দেখতে দেখতে সে মাটির নিচে তলিয়ে গেল। তার সমস্ত ধন-সম্পদও তলিয়ে গেল। চিরতরেই মাটিতে বিলীন হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ালার মোকাবিলায় সে কিছুই করতে পারল না, কোনো সাহায্যকারীও পেল না।

আগের দিন কারুনের শান-শওকত দেখে যারা লোভ করেছিল, এবার তাদের ভুল ভাংল। তারা বলতে লাগল-’ আফসোস! আমরা ভুলে গিয়েছিলাম, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তার রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং যাকে যান তার রিজিক কমিয়ে দেন। যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি দয়া না করতেন, তাহলে আমাদেরও মাটিতে পুঁতে ফেলতেন।’

আসলে প্রকৃত সফলতা তো পরকালের সফলতা। তারাই সেখানে সফল হয়, যারা আল্লাহর পথে চলে, দুনিয়ায় বড়াই করে না, অহংকার দেখিয়ে চলে না এবং মারামারি-হানাহানি করে না। এরাই মুত্তাকি। এদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।

সূরা আল কাসাসের ৭৬ থেকে ৮৩ নম্বর আয়াত পড়লে তোমরা সরাসরি কুরআনের মধ্যেই এ ঘটনা খুঁজে পাবে।

 إِنَّ قَارُونَ كَانَ مِن قَوْمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيْهِمْ ۖ وَآتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوزِ مَا إِنَّ مَفَاتِحَهُ لَتَنُوءُ بِالْعُصْبَةِ أُولِي الْقُوَّةِ إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا ۖ وَأَحْسِن كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ قَالَ إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَىٰ عِلْمٍ عِندِي ۚ أَوَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَهْلَكَ مِن قَبْلِهِ مِنَ الْقُرُونِ مَنْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَأَكْثَرُ جَمْعًا ۚ وَلَا يُسْأَلُ عَن ذُنُوبِهِمُ الْمُجْرِمُونَ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوْمِهِ فِي زِينَتِهِ ۖ قَالَ الَّذِينَ يُرِيدُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا مِثْلَ مَا أُوتِيَ قَارُونُ إِنَّهُ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٍ وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللَّهِ خَيْرٌ لِّمَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا وَلَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الصَّابِرُونَ فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِن فِئَةٍ يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنتَصِرِينَ وَأَصْبَحَ الَّذِينَ تَمَنَّوْا مَكَانَهُ بِالْأَمْسِ يَقُولُونَ وَيْكَأَنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ ۖ لَوْلَا أَن مَّنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَا ۖ وَيْكَأَنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا ۚ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ

 
৭৬) একথা সত্য , কারূণ ছিল মূসার সম্প্রদায়ের লোক, তারপর সে নিজের সম্প্রদায়ে বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠলো৷ আর আমি তাকে এতটা ধনরত্ন দিয়ে রেখেছিলাম যে, তাদের চাবিগুলো বলবান লোকদের একটি দল বড় কষ্টে বহন করতে পারতো৷ একবার যখন এ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে বললো, “অহংকার করো না, আল্লাহ অহংকারকারীদেরকে পছন্দ করেন না ৷

৭৭) আল্লাহ তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা দিয়ে আখেরাতের ঘর তৈরি করার কথা চিন্তা করো এবং দুনিয়া থেকেও নিজের অংশ ভুলে যেয়ো না৷ অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেস্টা করো না৷ আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না ৷”

৭৮) এতে সে বললো, “এসব কিছু তো আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি তার ভিত্তিতে আমাকে দেয়া হয়েছে৷” –সে কি এ কথা জানতো না যে, আল্লাহ এর পূর্বে এমন বহু লোককে ধ্বংস করে দিয়েছেন যারা এর চেয়ে বেশী বাহুবল ও জনবলের অধিকারী ছিল? অপরাধীদেরকে তো তাদের গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় না ৷

৭৯) একদিন সে সম্প্রদায়ের সামনে বের হলো পূর্ণ জাঁকজমক সহকারে৷ যারা দুনিয়ার জীবনের ঐশ্বর্যের জন্য লালায়িত ছিল তারা তাকে দেখে বললো, “আহা! কারূনকে যা দেয়া হয়েছে তা যদি আমরাও পেতাম! সে তো বড়ই সৌভাগ্যবান ৷”

৮০) কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলতে লাগলো, “তোমাদের ভাবগতিক দেখে আফসোস হয়৷ আল্লাহর সওয়াব তার জন্য ভালো যে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আর এ সম্পদ সবরকারীরা ছাড়া আর কেউ লাভ করে না ৷”

৮১) শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ও তার গৃহকে ভূগর্ভে পুতে ফেললাম৷ তখন আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো সাহায্যকারীদের কোন দল ছিল না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে পারলো না ৷

৮২) যারা আগের দিন তার মতো মর্যাদালাভের আকাংখা পোষণ করছিল তারা বলতে লাগলো, “আফসোস, আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার রিযিক প্রসারিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সীমিত রিযিক দেন৷ যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করতেন, তাহলে আমাদেরও ভূগর্ভে পুতে ফেলতেন৷ আফসোস, আমাদের মনে ছিল না, কাফেররা সফলকাম হয় না”

৮৩) সে আখেরাতের গৃহ তো আমি তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেবো যারা পৃথিবীতে নিজেদের বড়াই চায় না এবং চায় না বিপর্যয় সৃষ্টি করতে৷ আর শুভ পরিণাম রয়েছে মুত্তাকীদের জন্যই ৷ (সূরা আল কাসাসের ৭৬ থেকে ৮৩ নম্বর আয়াত)

Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka