Bangladesh > Politics

Student Policy in Private University

(1/1)

Khan Ehsanul Hoque:
Student Policy in Private University
ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক কালে এটি ক্ষমতাচর্চা ও জবরদস্তির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। অন্তত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হালচাল দেখে সেই ধারণাই দিবালোকের মতো স্পষ্ট।খুব কম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই আছে, যেখানে ছাত্ররাজনীতির নামে হানাহানি হয় না। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ প্রায়ই ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ৬ জন নিহত ও ২২০ জন আহত এবং অন্য ছাত্রসংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে ৩ জন নিহত এবং ৫২০ জন আহত হয়েছেন।

সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্ররাজনীতির নামে চলা এসব অনাচার বন্ধ করতে পারছে না। এই প্রেক্ষাপটে ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে আমরা কীভাবে দেখব? এই প্রচেষ্টা অর্থ কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া আদায়ে ভূমিকা রাখা, নাকি সেখানেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হানাহানি ছড়িয়ে দেওয়া? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির সমর্থক ছাত্রদলের এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি না থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নামের একটি ইউনিট আছে। তারাও শিগগিরই সেখানে আলাদা কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে ইতিমধ্যে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগ জানিয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও।

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত বলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান যুক্তি দেখিয়েছেন। তাঁর এ যুক্তি স্বীকার করেও যে প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই তা হলো তাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া আদায়ে কী ভূমিকা রেখেছেন? ছাত্ররাজনীতির নামে হল দখল, সিট-বাণিজ্য, ভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের ক্যাম্পাসছাড়া করার লজ্জাজনক মহড়া চলে আসছে বহু বছর ধরে। ছাত্রলীগ যদি ছাত্রদের অধিকার নিয়ে এতই বিচলিত থাকে, কেন তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে না? ২৮ বছর পর একবার ডাকসু নির্বাচন করেও দলীয় আধিপত্য বজায় রাখতে সেই সংসদকে কেন তারা অকার্যকর করে রেখেছিল? ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বহু বছর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের স্মরণীয় উক্তি স্মরণ না করে পারছি না। নব্বই দশকের শেষার্ধে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে হানাহানির প্রেক্ষাপটে তিনি ছাত্ররাজনীতি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখার কথা বলেছিলেন। তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবন না করে সে সময় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা রইরই করে উঠেছিলেন।

ছাত্ররাজনীতি মানে কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি নয়। ছাত্ররাজনীতির মূল কথা হলো শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু বর্তমানে যে ছাত্ররাজনীতি চলছে, তা এসবের ধারেকাছে নেই। বরং ছাত্ররাজনীতির নামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

নীতিগতভাবে আমরাও সুষ্ঠু ও সুস্থ ছাত্ররাজনীতি চর্চার বিপক্ষে নই। কিন্তু বর্তমানে কিংবা নিকট অতীতে দেশে ছাত্ররাজনীতির নামে যে হানাহানি ও জবরদস্তি চলছে, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাই এই মুহূর্তে ছাত্ররাজনীতির নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনাচার চলছে, তা কোনোভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রপ্তানি করা যাবে না। হানাহানি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়, বরং জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ ঘটুক। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।
Source: https://www.prothomalo.com/opinion/editorial/w4xw1ppix4

Navigation

[0] Message Index

Go to full version