অশ্লীলতা-শুদ্ধতার অনড় মানদন্ড

Author Topic: অশ্লীলতা-শুদ্ধতার অনড় মানদন্ড  (Read 485 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
অশ্লীলতা-শুদ্ধতার অনড় মানদন্ড

হাদীসে এসেছে পতিত্রতা ও সৌন্দর্যকে আল্লাহ ভালোবাসেন। সেই আল্লাহ তা’আলা বলেন: قُل لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ ۚ فَاتَّقُوا اللَّهَ يٰٓأُولِى الْأَلْبٰبِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
﴾বলে দিন: অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে জ্ঞানীগণ, আল্লাহকে ভয় কর; যাতে তোমরা মুক্তি পাও।﴿ [সূরা মায়েদা: ১০০]
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন- قُل لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ ﴾বল, অপবিত্র ও পবিত্র (মন্দ এবং ভালো) এক সমান নয়।﴿ প্রথমে যেটা আমাদের বুঝতে হবে তাহলো আল্লাহ শুধু এটুকুই বলেননি যে নোংরামি আর ভালো জিনিস এক সমান নয়। বরং তিনি তাঁর ﷺ কে এই ঘোষণা দিতে আদেশ করেন। কারণ ﷺ আল্লাহর নির্বাচিত প্রতিনিধি। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, কোনটা গ্রহণযোগ্য কোনটা অগ্রহণযোগ্য—তিনি এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করে দিবেন। সুতরাং মুসলমানদের মূল কথাটা জানতে হবে এবং বুঝতে হবে যে এক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূল ﷺ হলেন মানদন্ডস্বরূপ।

আমরা প্রায়ই বলি যে সিদ্ধান্ত নিবে সমাজ। সমাজ সিদ্ধান্ত নিবে কোনটা স্বাভাবিক কোনটা অস্বাভাবিক। অথবা কোনটা গ্রহণযোগ্য বা কোনটা বর্জনীয়। কিন্তু আমাদের জানা আছে যে সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সীমা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে বিশ্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে। তাই নয় কি? ফলে দেখা যায় যে কয়েক বছর আগেও যেটা ছিল অগ্রহণযোগ্য, পরবর্তীতে সেটাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

আপনারা জানেন, বিনোদন জগতে অনেক দৃশ্য কয়েক বছর আগেও অশ্লীল হিসেবে গণ্য হতো, কিন্তু সেগুলোও যেন এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখন যে অশ্লীলতা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, যা কিনা ৩০ বছর আগেও ছিলো সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ মানুষের সামাজিক মানদন্ড পরিবর্তনশীল। সুতরাং কতদূর পর্যন্ত আপনি পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন? কোথায় আপনি সীমা নির্ধারণ করবেন? রাসূল ﷺ হলেন আল্লাহর নিকট থেকে সীমা নির্ধারণ করার ব্যাপারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তাঁর আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য এটি—আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত সীমানাগুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া। পবিত্র ও অপবিত্রের মানদন্ড নির্ধারণ করে দেওয়া। সুতরাং তাঁদেরকে বলুন, ভাল এবং মন্দ কখনোই এক জিনিস নয়। وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ ﴾যদি মন্দের বিপুলতা আপনাকে অভিভূত করে ফেলে; এমনকি যদি এটা আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।﴿ এর অর্থ হলো খারাপ জিনিস হবে অগণিত এবং সর্বত্র ছড়িয়ে থাকবে, আর এর বাইরে থাকবে চাকচিক্যে ভরা।

‘আপনি হয়তো বলবেন সবাই তো এটাই করছে, সবাই এভাবেই কথা বলে, আপনি আবার কি বলতে চাইছেন? স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখুন ওসব। আপনি এরকম অদ্ভুত কেন?’ কারণ অদ্ভুত হলো তা-ই যা অপ্রচলিত, অগ্রহণযোগ্য। আর যা সাধারণের কাছে স্বীকৃত তাকে আমরা স্বাভাবিক বলি। তাই আল্লাহ বলেন: মন্দ কাজটি একসময় অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু এটা যতই গ্রহণযোগ্য হোক না কেন, আপনার ভুললে চলবে না যে মন্দ আর ভালো জিনিস কখনোই এক জিনিস নয়। যা নোংরামি ও ভুল—তা আপনার সব বন্ধু-বান্ধব করতে থাকলেও তা ভুলই হবে। এমনকি যদি আমাদের চারপাশে সর্বত্রই এই ভুল কাজটি ঘটতে দেখেন।
এখন কারা বিশুদ্ধতা আর নোংরামির মাঝে পার্থক্য করতে পারবে? فَاتَّقُوا اللَّهَ - ﴾অতএব আল্লাহর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন কর।﴿ يٰٓأُولِى الْأَلْبٰبِ - যারা নেক হৃদয় ও স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী, এমন মানুষ যাদের চিন্তাশক্তি নোংরা ও অপসংস্কৃতির দ্বারা দূষিত হয়নি।

সবাই যেহেতু এটাই করছে তাহলে এটাই ঠিক—এটা আপনার চিন্তার ধরন হতে পারে না। এমনও মানুষ আছে যারা নির্দিষ্ট কিছু অনুষ্ঠান পালন করে, অথচ জানে না কেন তা পালন করে। তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই। যা প্রচলিত তা-ই করে। হুজুগে।
এমন কিছু ছুটির দিন আছে যা উদযাপন করতে মানুষ অধীর থাকে, অথচ কেন তা উদযাপন করতে হবে তা তাদের জানা নেই। অধিকাংশ মানুষই অন্যান্য মানুষকে করতে দেখে বলে তারাও ওটা করে। বোকার মতো আচরণ করবেন না। অন্যদের মাথা দিয়ে আপনি চলবেন না, নিজের বুদ্ধি খাটান। আপনাদের স্বচ্ছ, মুক্ত ও গভীর চিন্তার অধিকারী হতে হবে।
يٰٓأُولِى الْأَلْبٰبِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴾
যাতে আপনারা সাফল্যের ভাগিদার হোন।﴿

এটাই হলো মূল কথা। আপনি সবাইকে একটা কাজ করতে দেখেন আর ভাবেন নিশ্চয়ই এটা সাফল্য লাভের উপায়। কিন্তু আল্লাহ বলেন, না, যত লোকই সেই কাজ করুক না কেন, কিংবা এ কাজের দ্বারা সাফল্য লাভ করেছে বলে যতই আপনার মনে হোক না কেন, আপনার জন্য মঙ্গলজনক ও বুদ্ধিদীপ্ত হলো আপনি আল্লাহ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করুন। যদি আপনি সত্যিকারের সাফল্য লাভ করতে চান তবে আপনার চিন্তাকে কাজে লাগান এবং ভালো কাজের সঙ্গে লেগে থাকুন।
এই আয়াতের শেষে যে শব্দটি প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তাহলো افلاح (ইফলাহ)। আল্লাহ বলেন, لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴾যাতে আপনি সফল হোন।﴿ আরবীতে সাফল্য বোঝাতে একটি ক্রিয়াপদ রয়েছে। হ্যাঁ, তিনি বলেছেন তুফলিহুন। افلاح শব্দটি সেই সাফল্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন, আপনি একটা খামার তৈরি করলেন, বীজ বুনলেন। পোকা-সংক্রমণ রোধে, আগাছা রোধে ব্যবস্থা নিলেন। সারা বছর কঠিন পরিশ্রম করলেন এবং অবশেষে সাফল্য পেলেন। تُفْلِحُونَ মানে হলো যখন আপনি কোনো কাজের পেছনে প্রচুর শ্রম দেন।

অর্থাৎ আল্লাহ ইঙ্গিত করছেন যে, এমন এক দুনিয়ায় পবিত্রতা সন্ধান করা যেখানে পবিত্রতার দৃষ্টান্ত দুষ্প্রাপ্য। সেখানে পবিত্রতার উপর ওপর টিকে থাকতে হলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এই সাফল্যের জন্য মূল্য দিতে হবে। এটা এমনিতেই ঘটবে না। খাঁটি বন্ধু খুঁজে বের করতে হবে। খাঁটি বিনোদন, খাঁটি বই পড়তে হবে। সঠিক উপার্জনের উৎস খুঁজে পেতে হবে। আপনার পক্ষে এসব করা অনেক অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনি বুঝবেন যে এই কাজ পরিশ্রমের যোগ্য। আপনি এতসব কিছু করেছেন কারণ আপনি আল্লাহকে ভয় করেন। আপনি উলিল আল-বাবদের (প্রচণ্ড বুদ্ধিমান) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আপনি স্পষ্ট ও সঠিক চিন্তার অধীকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

Source: https://www.facebook.com/NAKBangla/
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd