কেমন হবে যদি ইন্টারনেটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন মানুষের হাতে থাকে?

Author Topic: কেমন হবে যদি ইন্টারনেটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন মানুষের হাতে থাকে?  (Read 637 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
কেমন হবে যদি ইন্টারনেটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন মানুষের হাতে থাকে?

একটা সময় ছিলো যখন আমরা ইন্টারনেটকে শুধু দেখতে পেতাম কিন্তু নিজের মত করে ব্যবহার করতে পারতাম না, একে বলা হতো Read Only Web। যে ওয়েবসাইটের মালিক থাকতো একমাত্র সে ই তার কনটেন্ট গুলো পরিবর্তন করতে পারতো আবার সে সময়ের ওয়েব সাইট গুলোও এতটা ডায়নামিক ছিলো না কনটেন্টের পরিমানও ছিলো সীমিত এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও ছিলো সীমিত। কথা বলছি প্রথম জেনারেশনের ইন্টারনেটের বা ওয়েব ১.০। ১৯৮৯ সালে টিম বার্নাস-লি WWW বা World Wide Web লঞ্চ করার পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়কে বলা হয় ওয়েব ১.০ যদিও তখন এটির নাম ওয়েব ১.০ ছিলো না বোঝার সুবিধার্থে বলা হয়। এর পর ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয় আমাদের ওয়েব ২.০ এর যুগ যেখানে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যেতে পারি তথ্য গুলো আপলোড বা ডাউনলোড করতে পারি তাও ফ্রিতে।

এখন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক, আমরা সে সব কিছু ফ্রিতে ব্যবহার করি কিন্তু গুগোল, ফেসবুকের মত বড় বড় কম্পানি গুলো কিভাবে এত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলায় আয় করে তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? আমরা যে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখি তা থেকেই মূলত তারা আয় করে থাকে কিন্তু আমরা তার বাহক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছি। অবাক করার বিষয় হলো ২০২১ সালে ফেসবুক প্রত্যেকের থেকে $৪০.৯৬ ডলার আয় করেছে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৫০০+ টাকা অন্য দিকে গুগল ২০২১ সালে প্রত্যেকের থেকে আয় করেছে $৩১.৭০ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় (২৫০০+ টাকা)। ব্যপারটা কি আসলেই মেনে নেওয়ার মত? কোন কিছু শেয়ার করছি আমি, ছবি আপলোড করলাম আমি আর টাকা ইনকাম করবে ফেসবুক, গুগল?

আবার ধরুন আপনি কোন কিছু নিয়ে সার্চ দিলেন একটু পরেই দেখবেন সে সব সার্চ করা জিনিস গুলোই আমাদের সামনে বার বার বিজ্ঞাপন আকারে আসছে ব্যপারটা কি বিরক্তকর না? আসলে তারা আমাদের ব্যবহার করা ডেটা দিয়েই এসব বিজ্ঞাপন দেখিয়ে থাকে। পৃথিবীতে যত ডেটা সেন্টার আছে তার প্রায় ৫০% এর বেশি আম্যাজন, গুগোল, মাইক্রোসফট গুটি্ কয়েক ডেটা সেন্টারে আমাদের ব্যক্তিগত ডেটা সংরক্ষিত আছে। তারা চাইলেই আমাদের ডেটা দিয়েই যখন খুশি যা ইচ্ছা করতে পারে। কিন্তু এসব ডেটা গুলো আমরাই কিন্তু তাদের দিচ্ছি। ফলে ভুক্তভূগি কিন্তু আমরাই হচ্ছি অর্থাৎ ওয়েব ২.০ তথা আমাদের বর্তমান ইন্টারনেট কোন ভাবেই নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা প্রতিনিয়ত আমাদের ট্র্যাকিং করে থাকে। অর্থাৎ ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশে ওয়েব ২.০ পরিচালিত হচ্ছে আর তার মাধ্যম হচ্ছি আমরা।

ওয়েব ২.০ এবং ওয়েব ১.০ এর মধ্য একটি পার্থক্য হলো ওয়েব ১.০ তে আমরা শুধু পড়তে পারতাম কিন্তু কোন কিছু আপলোড করতে পারতাম না অর্থাৎ ওয়েব ১.০ ছিলো স্ট্যাটিক ওয়েব, অন্যদিকে ওয়েব ২.০ তে আমরা খুব সহজেই কোন কিছু আপলোড করতে পারি, কোন কিছু শেয়ার করতে পারি নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারি কিন্তু সেখানে কিন্তু তারা কিছু আপলোড করছে না সব কিছু কিন্তু আমরাই করছি এটাকে বলা হয় User generate content বা UGC। কিন্তু ওয়েব ২.০ তে আমরাও তাদের কাছে সীমাবদ্ধ কারন আমরা না চাইলেও তারা আমাদের ডেটা মুছে ফেলতে পারে ফলে তারা প্রধান ভূমিকা পালন করে আর আমাদের টোপ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছি।

ওয়েব ৩.০ হবে একটি ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা আমাদের ডেটা আমরাই শতভাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারবো সেখানে ফেসবুক, টুইটার, গুগোল, ইউটিউবের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। যেখানে আমরা আমাদের ডেটা বিক্রি করে ইনকাম করতে পারবো বা নিরাপদ করতে পারবো, সেখানে থার্ড পার্টি কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না। মূলত ওয়েব ৩.০ হবে Mechine Learning এবং Artificial intelligence এর উপর ভিত্তি করে অর্থাৎ এসবের সংমিশ্রনে কম্পিউটারের তথ্যকে কিভাবে মানুষের মত করে প্রসেস করতে পারে সে বিষয়ও থাকবে ওয়েব ৩.০ তে। ওয়েব ২.০ তে যেখানে আমরা আমাদের কনটেন্ট শেয়ার করি বা আপলোড করি সেখানে ওয়েব ৩.০ তে আমাদের জন্য কনটেন্ট নিয়ে আসবে যে আমরা কি চাই বা আমাদের কি কি দরকার। যেমন আমরা যে Google assistant, Serri, Alexa ব্যবহার করি সেটি IoT বা Internet of Things ব্যবহার করে আমাদের সামনে তথ্য উপস্থাপন করে।

ওয়েব ৩.০ মূলত NFT, Blockchain Technology, Cryptography, Metaverse, IoT ইত্যাদি আরো অনেক কিছু নিয়ে গঠিত হবে। বর্তমানে আমরা যে টাকা ট্রান্সফার করি বা কোন লেনদেন করি এটা করার জন্য আমাদের ব্যাংকগুলো সেন্ট্রালাইজড হিসাবে কাজ করে ফলে কোন কারনে যদি হ্যাকার দ্বারা আমাদের লেনদেন হ্যাক হয়ে যায় তাহলে সেটা সনাক্ত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে টাকা তো পাবোই না উল্টো আমাদের অনেক লোকশান হবে। ওয়েব ৩.০ তে আমরা ডিসেন্ট্রালাইজড ভাবে ব্লকচেইন টেকনোলজির মাধ্যমে আমাদের লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবো অর্থাৎ এ ক্ষেতে কোন ব্যাংকের সাহায্যের প্রয়োজন পরবে না এখন আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে তাহলে কি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না? এর উত্তর হচ্ছে না হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই সামান্য এই লেনদেন এর জন্য ব্যবহার করা হবে ব্লকচেইন টেকনোলজি যেমন বর্তমানে ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত Bitcoin, Ethereum Coin ইত্যাদি লেনদেন হচ্ছে কিন্তু অবাক করার বিষয় এখন পর্যন্ত বিটকয়েন হ্যাক করা সম্ভব হয় নি।

ব্লকচেইন টেকনোলজিতে একটি বা কয়েকটি সার্ভারে সীমাবদ্ধ নয় হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকে শুধু সংযুক্ই থাকে না নিরাপত্তার জন্য হ্যাশিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয় ফলে কোন হ্যাকার একটি সার্ভারে হ্যাক করলেও পরবর্তী সার্ভারের হ্যাশিং অ্যালগরিদমও হ্যাক করতে হয় যা অনেক সময় সাপেক্ষ এবং যেখানে একটি হ্যাশিং অ্যালগরিদম ব্রেক করতে অনেক সময় লাগে সেখানে সব সার্ভারের হ্যাশিং অ্যালগরিদম ব্রেক করা প্রায় অসম্ভব যার ফলে ডাটা চুরি হওয়ার ভয় থাকেনা এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিসেন্ট্রালাইজেশন প্রসেস। আবার কোন কারনে যদি একটা সার্ভার ডাউন হয়ে যায় তাহলে বাকি সার্ভার গুলো সচল থাকে ফলে ডেটা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অর্থাৎ ডেটা গুলো সব সার্ভারেই থাকে বা সব সার্ভারে বিভক্ত করা থাকে হ্যাশিং অ্যালগরিদম এর ফলে ডাটা হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা একদম অসম্ভব। ব্লকচেইন টেকনোলজি তে সবাই সোর্স কোড বা ডেটা এর কপি দেখতে পারবে কিন্তু পরিবর্তন করতে পারবে না কারন ডেটা বা সোর্স কোড ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে এনক্রিপ্টেড অবস্থায় থাকবে ফলে ডাটা দেখতে পারবে ঠিকই, কিন্তু পড়তে পারবে না। অর্থাৎ, End to End Encryption থাকবে।

ওয়েব ৩.০ তে মেটাভার্স টেকনলজি ব্যবহার করা হবে। বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো মেটাভার্স ধারনা করা হয় মেটাভার্স পুরোপুরি কার্যকর হলে আমাদের পুরো পৃথিবী বদলে যাবে। মেটাভার্স শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিলো ১৯৯২ সালে নীল স্টিফেন্স নামে একজন কল্পকাহিনী লেখক তার Snow Crash নামক উপন্যাসে এই মেটাভার্সের এর ধারনা দেন কিন্তু অনেক বছর কেটে গেলেও মেটাভার্স নিয়ে তেমন কোন গবেষণা করা হয় নি। বর্তমানে ইন্টারনেটের উন্নতির ফলে বর্তমান বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুলো মেটাভার্স নিয়ে কাজ শুরু করছে। যেমন ফেসবুকের নাম দিয়েছে Meta, Nvidia নাম দিয়েছে Omniverse, Microsoft নাম দিয়েছে MESH ইত্যাদি আরো অনেক।

মেটাভার্স ব্যবহার করে ইন্টারনেটে 3D ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করা যাবে মূলত যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল ভাবে বাস্তবের মত মিলিত হয়ে কাজ করতে পারবে এরজন্য অবশ্যই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ডিভাইস প্রয়োজন। বর্তমানে যেমন আমরা একটি ওয়েবসাইট থেকে আরেকটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করি, তেমনি অদূর ভবিষ্যতেও মেটাভার্স এর একটি ভার্চুয়াল জগত থেকে অন্য একটি ভার্চুয়াল জগতে যেতে পারবো। আর মেটাভার্স হলো ইন্টারনেটের পরবর্তী অধ্যায়।
ওয়েব ৩.০ তে অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধাও আছে যেমন বর্তমানে ওয়েব ২.০ তে আমরা যেহেতু ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করি সেক্ষেত্রে কে কি অর্থ লেনদেন করলো তা সহজে সনাক্ত করা যায় কিন্তু ওয়েব ৩.০ তে তা সনাক্ত করা সম্ভব হবে না। আবার এর ফলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সনাক্ত করাও কঠিন হয়ে যাবে।

Source:
https://www.facebook.com/groups/sciencebeegroup/permalink/857867318507692/
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd