শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল

Author Topic: শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল  (Read 367 times)

Offline frahmanshetu

  • Newbie
  • *
  • Posts: 30
  • Test
    • View Profile
শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল

শীতকালের জন্য রয়েছে বেশ কিছু আমল ও স্বতন্ত্র বিধিবিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তিনি দিবারাত্রিকে পরস্পরের অনুগামী করেছেন, যে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায় তার জন্য।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬২) ‘আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।’ (সুরা-২৪ নূর, আয়াত: ৪৪) হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘শীতকাল ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ।’

শীত তো এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা উপভোগ করে।

শীতকাল নফল রোজা পালনের সুবর্ণকাল। কাজা রোজা থাকলে তা আদায় করার জন্যও শীতের দিন অতি উপযোগী। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ)। ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ (বায়হাকি)

শীতের তীব্রতা যদি সহ্যের বাইরে চলে যায়, পানি গরম করে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে এবং ঠান্ডা পানি ব্যবহারে শারীরিকভাবে ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে অজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে পারেন




নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি: ৭৯৫) কোরআনের ভাষায়, ‘তারা রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটায়, আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকে।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮)

শীতকালে সঠিকভাবে অজু করা, অজুর অঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে: সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু।’ (আদ দোয়া লিত তাবরানী: ১৪১৪) রাসুলে আকরাম (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানাব না? কিসে তোমাদের পাপ মোচন করবে! এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবে!’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, অবশ্যই! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! তিনি বললেন, ‘শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ঠিকভাবে অজু করা।’ (মুসলিম: ২৫১; কুরতুবি)

হজরত ওমর (রা.) তাঁর ছেলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘শীতের দিনে ভালোভাবে অজু করা গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না! যা দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়?’


সাহাবিরা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, ‘মন না চাইলেও অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা।’ (মুসলিম)

অজু ও গোসলে গরম পানি ব্যবহার, শুকনো কাপড়ে মোছা ও তায়াম্মুমের বিধান: প্রচণ্ড শীতে কষ্ট হলে গরম পানি দিয়ে অজু করাতে কোনো বাধা নেই। অজুর পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে কোনো বাধা নেই। শীতের তীব্রতা যদি সহ্যের বাইরে চলে যায়, পানি গরম করে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে এবং ঠান্ডা পানি ব্যবহারে শারীরিকভাবে ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে অজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে পারেন। (বায়হাকি, খণ্ড: ১, হাদিস: ২২৬, আল ফিকহুল ইসলামি, আল বাদায়েউস সানায়ে)

শীতকালে গরম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। হজরত ওমর (রা.) তাঁর শাসনামলে গভর্নরের উদ্দেশে শীতের আগমনে লিখতেন, ‘শীত কিন্তু এসে গেল, এ তোমাদের দেহের শত্রু। অতএব এর প্রতিরোধে পশমি বস্ত্র, মোজা, হাতমোজা ইত্যাদির প্রস্তুতি নাও। আর পশম দিয়ে গায়ের চামড়ায় এবং শরীরের পোশাকে শীতের আক্রমণ ঠেকাও। কারণ, শীত খুব দ্রুত প্রবেশ করে, তবে সহজে বিদায়
নেয় না।’

অজুর ক্ষেত্রে পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করার বিধান রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অজু করে মোজা পরতে হয়। ‘মুসাফির’ (ভ্রমণরত) ব্যক্তি তিন দিন তিন রাত (৭২ ঘণ্টা) পর্যন্ত মাসেহ করে যেতে পারবেন এবং ‘মুকিম’ (সবাসে অবস্থানরত) ব্যক্তি এক দিন এক রাত (২৪ ঘণ্টা) মাসেহ করতে পারবেন।

এ সময়সীমার পর অজুর প্রয়োজন হলে মোজা খুলে পা ধুয়ে অজু করতে হবে। অনেক মুজতাহিদ ফকিহ শুধু চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করা অনুমোদন করেন। হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) কাপড়ের মোজা (জাওরাবাইন) এবং জুতার ওপরও মাসেহ করেছেন। (তিরমিজি: ৯৯; আবু দাউদ: ১৫৯) এ হাদিসের ভিত্তিতে অন্যান্য মুজতাহিদ ফকিহ কাপড়ের মোজা ও পুরো পায়ের পাতা আবৃতকারী জুতার ওপর মাসেহ করা অনুমোদন করেন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com

Source:shorturl.at/muzDO