নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের উন্নয়নে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব

Author Topic: নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের উন্নয়নে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব  (Read 774 times)

Offline Badshah Mamun

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2001
    • View Profile
    • Daffodil International University
নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের উন্নয়নে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব

স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত দেশে নির্মাণ বলতে বোঝানো হতো মূলত ভবন নির্মাণকে।

তখন ইট-পাথর-সিমেন্টের তৈরি পাকা ভবনের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, তিনটি বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা এবং ১৭টি জেলা শহরের বাইরে অন্যত্র এ ধরনের ভবনের সংখ্যা ছিল অনেক কম।

সে অবস্থা থেকে বিগত ৫১ বছরে দেশে এ ধরনের ভবনের সংখ্যাই যে শুধু বেড়েছে তা নয়, ভবনের উচ্চতা, স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণ উপকরণের বহুমুখিনতা, নির্মাণকৌশল, ভবনের মালিকানা কাঠামো ও ব্যবহারের ধরন, নির্মাণ খাতের পরিধি, নির্মাণ ব্যবস্থাপনা, সাধারণ মানুষের আবাসন দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদিও ব্যাপকভাবে বদলে গেছে।

কিন্তু এসব পরিবর্তনের ফলে দ্রুত সম্প্রসারমাণ এ খাতে যেসব নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে, সেসব মোকাবিলা বা পরিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে খুবই সামান্য। এ কারণে এই খাত বর্তমানে কী কী ধরনের সমস্যায় ভুগছে এবং তা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় কী হতে পারে, সেসব নিয়েই এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

গত অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে দেশের নির্মাণ খাতে যেসব পরিবর্তন হওয়ার কথা উল্লেখ করেছি, তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হলো, পাকা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ৫০ বছর আগের রাজমিস্ত্রিনির্ভর নির্মাণ ব্যবস্থাপনা কাঠামো আমূল পালটে যাওয়া।

এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য, স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে তো বটেই, এমনকি ১৯৮০-র দশকের আগ পর্যন্তও দেশের অধিকাংশ ভবনের স্থাপত্য নকশা ও উপকরণ ব্যবস্থাপনার কাজটি মূলত রাজমিস্ত্রিরাই করতেন।

কিন্তু উপরোল্লিখিত পরিবর্তনগুলো হওয়ার ফলে এ কাজটি কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা রক্ষা করে সম্পাদনের জন্য রাজমিস্ত্রির স্থলে উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীর সংশ্লিষ্টতা এখন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আর নির্মাণ খাত যেহেতু অত্যন্ত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, সেহেতু এ চাহিদাও বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। কিন্তু দেশের চলমান শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় সে চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা না থাকায় কাজটি প্রায়ই জোড়াতালি দিয়ে যেনতেনভাবে করা হচ্ছে বা করতে হচ্ছে কিংবা তা করার জন্য ব্যাপক সংখ্যায় বিদেশি জনবলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অনুসৃত এ দুই কৌশলের কোনোটিই এ খাতের গতিশীল ও মানসম্মত বিকাশের জন্য কাম্য নয়। এ অবস্থায় এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান শুধু জরুরিই নয়, অপরিহার্যও বটে।

দেশের নির্মাণ খাতের আওতায় বর্তমানে বৃহৎ সারির নানা কর্মকাণ্ড চলছে। অদূরভবিষ্যতে এসবের সঙ্গে আরও যেসব নতুন কর্মকাণ্ড যুক্ত হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, একাধিক সুপ্রশস্থ ও সুগভীর নদীর উপর দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, মহাসড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণ, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, নৌ স্থল ও বিমানবন্দরের জন্য টার্মিনাল নির্মাণ, বৃহদাকার বিদ্যুৎ ও অন্যান্য শিল্প প্ল্যান্ট স্থাপন, তেল ও বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন, স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম ও মিলনায়তন স্থাপন ইত্যাদি।

এসব বহুমাত্রিক নির্মাণযজ্ঞ সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে হলে নির্মাণ খাতসংশ্লিষ্ট কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন যে ধরনের এবং যে বিপুলসংখ্যক জনবল প্রয়োজন, বাস্তবতা হচ্ছে, সে ধরনের ও সে সংখ্যায় প্রয়োজনমাফিক জনবল আমাদের নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পুরকৌশল, স্থাপত্য এবং এ ধরনের বিষয়ে পড়াশোনা করে যেসব স্নাতক বেরুচ্ছেন, তারা দেশের এ সংক্রান্ত মোট চাহিদার খুব সামান্য অংশই পূরণ করতে পারছেন। দ্বিতীয়ত, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা স্নাতকদের একটি বড় অংশই চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। ফলে যে সংখ্যায় তারা বেরুচ্ছেন, দেশের বহুমাত্রিক নির্মাণ কাজে সে সংখ্যায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।

এটি গেল নির্মাণ তথা পূর্ত কাজসংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় কারিগরি দক্ষতা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর কথা-যার মধ্যে রয়েছে স্থাপত্য নকশা, কাঠামোগত নকশা, উপকরণ ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানের মতো সীমিতসংখ্যক বিষয়। কিন্তু এর বাইরে নির্মাণ খাতের জন্য আধা-কারিগরি তত্ত্বাবধান, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিপণন ইত্যাদি কার্যক্রমসংশ্লিষ্ট যে বিপুলসংখ্যক জনবলের প্রয়োজন রয়েছে, তা পূরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা দেশে এ মুহূর্তে নেই বললেই চলে। শেষোক্ত শ্রেণির চাহিদার আওতায় যে বিপুলসংখ্যক জনবলের প্রয়োজন, তার বিপরীতে খুব সামান্যসংখ্যকই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তৈরি করতে পারছে। আর এই না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কর্তৃক নির্মাণ ও আবাসনকে স্বতন্ত্র একাডেমিক বিষয় হিসাবে গ্রহণ করে উঠতে না পারা। এমনকি স্বতন্ত্র বিষয় না হোক, অন্তত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের আওতায় স্বতন্ত্র কোর্স হিসাবে পড়ানোর কাজটিও অদ্যাবধি সেখানে চালু হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) স্থায়ী নির্দেশনা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তত তিন বছর পরপর প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস ও হালনাগাদ করবে। সে নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে নির্মাণ ও আবাসন ব্যবস্থাপনা বহু আগেই উল্লিখিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্য অনুষদের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাতেগোনা দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এ বিষয়টির প্রতি প্রায় কেউই তেমন কোনো আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানা যায় না। তবে দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এরকম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সালে ‘রিয়েল এস্টেট’ নামে স্বতন্ত্র বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকে গত এক যুগে সেখান থেকে প্রায় হাজারখানেক স্নাতক পাশ করে বেরিয়ে দক্ষ পেশাজীবী হিসাবে এ খাতকে আধুনিক জ্ঞান, ধ্যান-ধারণা ও কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে যথেষ্ট উন্নত মানের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। কিন্তু এ রকম একটি-দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিতসংখ্যক স্নাতককে দিয়ে এ পুরো খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো যাবে কি?

এক্ষেত্রে তাই প্রস্তাব করব, দেশের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন রিয়েল এস্টেট বিষয়টির পঠন-পাঠন ও অধ্যয়নে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসে। তবে এটি যেহেতু বেশ কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, সেহেতু ইউজিসিরই উচিত হবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রিয়েল এস্টেট বিভাগ চালু আছে, সেগুলোকে আর্থিক ও নীতিগত প্রণোদনা দিয়ে সেখানকার এ সংক্রান্ত বিভাগকে অধিকতর দক্ষ হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করা। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব কর্তব্য হবে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান কার্যক্রম জোরদারকরণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর সঙ্গে অধিকতর নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলা, যাতে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও মতামত নিয়ে এ বিষয়ের পাঠ্যক্রমকে শিল্পের সর্বশেষ চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ঢেলে সাজানো সম্ভব হয়। তাছাড়া ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের অধ্যয়নকালে শ্রেণিকক্ষের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি নির্মাণ ও আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করে নিজেদের সত্যিকার পেশাজীবী হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন, সেজন্যও এ সংযোগকে কাজে লাগাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা রূঢ় শোনালেও বলা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিপদ্ধতির জটিলতা ও অন্য নানাবিধ কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা পেশা পরিকল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিষয় নির্বাচনে প্রায়ই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হন। কোন বিষয়ের সঙ্গে কোন ধরনের ক্যারিয়ার সম্পর্কিত অধিকাংশেরই সে বিষয়ে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণা নেই। আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার পরিকল্পনা সফল করার জন্য রিয়েল এস্টেটই হয়তো সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক বিষয়, কিন্তু সেটি তারা জানেন না। এমনকি এটাও হয়তো জানেন না যে এ নামে একটি বিভাগ আছে। আর তা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যায়, সেটি তো পরের প্রশ্ন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত হবে এ বিষয়ক আধ্যয়নিক কার্যক্রমের বিষয়টি জনসমক্ষে আরও বেশি করে তুলে ধরা। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, বিদেশেও নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট স্নাতকদের ক্যারিয়ার গড়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

তথ্য ও চলমান ঘটনা হিসাবে এখানে যোগ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে, বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট যেসব নির্মাণ প্রকল্প চালু আছে, শ্রমিক ছাড়া এর বেশির ভাগ কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা জনবলই বিদেশি, বিশেষত সহায়তাদানকারী দেশের। অথচ দেশে পর্যাপ্ত নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট স্নাতক তৈরি করতে পারলে তারাই হয়তো এ পদগুলো দখল করে থাকতে পারতেন। এখনো তা করতে না পারায় ওইসব বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের আওতাধীন অর্থের একটি বড় অংশ আবার ওইসব দেশেই ফেরত চলে যাচ্ছে, যা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, ঋণের বোঝা স্ফীত হওয়ায় উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো ঘটনাও।

প্রসঙ্গত আরও উল্লেখ্য, দেশের প্রায় সব খাতেই শিল্পের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক যথেষ্ট নিবিড় নয়। শিল্প ও শিক্ষায়তনের মধ্যকার এ সম্পর্কহীনতা উভয়পক্ষকেই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এতে করে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষা খাত উভয়ের কেউই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। এ অবস্থায় এগিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত হবে শিল্প-শিক্ষায়তন সংযোগ কার্যক্রমকে অধিকতর জোরদারকরণে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাওয়া, যা রিয়েল এস্টেট শিল্পের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। আর তা করা গেলে দেশের সামগ্রিক উচ্চশিক্ষা খাতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আশা করা যায়।

পরিশেষে দেশের দ্রুত বিকাশমান নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের সর্বশেষ প্রবণতা ও বাজার চাহিদা পূরণে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ও মানসম্মত ভূমিকা রাখতে নিজেদের বর্তমান ভূমিকাকে আরও জোরদার করে তুলতে উদ্যোগী হবে-এটাই প্রত্যাশা। আর সে ভূমিকা পালনে সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতও সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখবে এবং উভয়পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগের আওতায় দেশের নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট খাত ৫০ বছর আগের রাজমিস্ত্রিনির্ভরতা থেকে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের শিক্ষা, জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীল নান্দনিকতার ওপর ভর করে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

আবু তাহের খান
সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
atkhan56@gmail.com

Source: Daily Jugantor, 21.12.22
Md. Abdullah-Al-Mamun (Badshah)
Senior Assistant Director
Daffodil International University
01811-458850
cmoffice@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd

www.fb.com/badshahmamun.ju
www.linkedin.com/in/badshahmamun
www.twitter.com/badshahmamun