Educational > You need to know

"পৃথিবীর সবচে ইনোভেটিভ দেশগুলো!

(1/1)

Badshah Mamun:
"পৃথিবীর সবচে ইনোভেটিভ দেশগুলো! জাকারিয়া স্বপন
গতকাল একটা রিপোর্ট পড়ছিলাম, যেখানে এই পৃথিবীর সবচে ইনোভেটিভ দেশগুলোর ইনডেক্স প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের একটি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টিজ ওর্গানাইজেশন এটা তৈরী করেছে। রিপোর্টটি খুব ইন্টারেস্টিং। তাই কিছুটা লিখে রাখছি।

[https://www.wipo.int/edocs/pubdocs/en/wipo-pub-2000-2022-en-main-report-global-innovation-index-2022-15th-edition.pdf]

মূলত ৭টা বড় দাগের ক্যাটাগরিতে ৮১টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এই ইন্ডেক্স তৈরী করা হয়েছে। সেগুলো হলো- 
১). ব্যবসা আধুনিকতা (গবেষণায় বিনিয়োগ কেমন, কতটা বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে ইত্যাদি)
২). বাজার আধুনিকতা (দেশের জিডিপি কেমন, স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা কেমন ইত্যাদি)
৩). ভৌত অবকাঠামো (রাস্তাঘাট, স্কুল, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইত্যাদি)
৪). মানব সম্পদ ও গবেষণা (জনপ্রতি সরকারের বিনিয়োগ, সায়েন্টিফিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান ইত্যাদি)
৫). প্রাতিষ্ঠানিক সবলতা (রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, একটা ব্যবসা শুরু করতে কতটা সহজ ইত্যাদি)
৬). ক্রিয়েটিভ আউটপুট (সবচে দামী ব্র্যান্ড, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যাপলিকেশন, ট্রেডমার্ক অ্যাপলিকেশন ইত্যাদি)
৭). জ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার (প্যাটেন্ট, শ্রমিকের দক্ষতা, সফটওয়্যারের ব্যবহার ইত্যাদি)

রিপোর্টটির মতে, ২০০০ সালের পর থেকে গত ২০ বছরে এই পৃথিবীতে গবেষণায় খরচ ৩ গুণ বেড়ে দাড়িয়েছে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র তার বাজেটের শতকরা ৭০% ব্যয় করতো গবেষণায়। কিন্তু সেটা কমে এখন শতকরা ৩০% নেমে গেছে। সেই দিক থেকে আমেরিকা অনেক কিছুতেই পিছিয়ে গেছে কিংবা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো এগিয়ে এসেছে। তবে গবেষণা ব্যয়ের পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ও প্রভাব ফেলে যেমন প্রযুক্তির ব্যবহার (সকল স্তরে), সায়েন্টিফিক রিসার্চ, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ফ্লো ইত্যাদি।

দুই.
যখনি এই ধরণের কোনও বিপোর্ট বের হয়, তখন নিশ্চই আমরা সবাই দেখতে চাই, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়! যেমন বাংলাদেশ দূর্নীতে কত নাম্বার, পরিবেশ দূষণে কত নাম্বার, ইন্টারনেট ব্যবহারে কত নাম্বার, সুখী দেশ হিসেবে কত নাম্বার - এমন অনেক রিপোর্ট বছরের বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াতে আসে। দূর্নীতিতে আমরা উপরের দিকে থাকি, আর অন্যান্যগুলোতে আমাদেরকে নীচ থেকে শুরু করতে হয়। অনেকেই বলে থাকেন, এটা হয়তো এক ধরনের নেগেটিভ প্রচারণা কিংবা শত্রুতা থেকেই করা হয়ে থাকে। সেই আলাপে না গিয়ে চট করে দেখে ফেলি, আমরা কোথায় আছি - এবং সেটা মোটামুটি গ্রহনযোগ্য কি না?

গত ১২ বছর একটানা সবচে ইনোভেটিভ দেশ হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড। তারা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল কিংবা জাপানের চেয়েও ভালো করছে। তার মূল কারনটি হিসেবে বলা হয়েছে, ওই দেশটির ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি আইন এবং তার প্রয়োগ সবচে ভালো। পাশাপাশি তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো একসাথে কাজ করে থাকে। তাদের স্কোর হলো ৬৪.৬।

এরপর ৬১.৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র। তবে গবেষণায় তাদের বিনিয়োগ এখনও সবচে বেশি - বছরে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার। তাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলো সবচে বেশি ব্যয় করে থাকে এই খাতে। যেমন অ্যামাজন (৪২.৭ বিলিয়ন ডলার), আলফাবেট (২৭.৬ বিলিয়ন ডলার), মাইক্রোসফট (১৯.৩ বিলিয়ন ডলার) এবং অ্যাপল (১৮.৮ বিলিয়ন ডলার)। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণার বাজেট আমাদের পুরো দেশের বাজেটের চেয়ে বেশি।

আমেরিকার পরের স্থানের দেশগুলো হলো ৩. সুইডেন (৬১.৬) ৪. যুক্তরাজ্য (৫৯.৭) ৫. হল্যান্ড (৫৮.০) ৬). দক্ষিণ কোরিয়া (৫৭.৮) ৭. সিঙ্গাপুর (৫৭.৩) ৮. জার্মানী (৫৭.২) ৯. ফিনল্যান্ড (৫৬.৯) এবং ১০. ডেনমার্ক (৫৫.৯)।

বাংলাদেশের স্কোর হলো ১৯.৭, যা আমাদেরকে ১০২ অবস্থান দিয়েছে। আমাদের আগের দেশটি হলো ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো (১০১), আর পরের দেশটি হলো তানজানিয়া (১০৩)। ভৌগলিকভাবে আমাদের আশেপাশের দেশগুলোর ভেতর ১১তম স্থানে আছে চীন (স্কোর ৫৫.৩), ৪০তম স্থানে ভারত (৩৬.৬), ৪৮তম স্থানে ভিয়েতনাম, ৮৭তম স্থানে পাকিস্তান (২৩.০) এবং ১১১তম স্থানে নেপাল (১৭.৬)।

তিন.
উপরের যে ৭টি ক্যাটাগরিকে ভিত্তি ধরা হয়েছে, সেগুলোতে বাংলাদেশ কেমন করছে?

- ব্যবসা আধুনিকতা (গবেষণায় বিনিয়োগ কেমন, কতটা বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে ইত্যাদি): বাংলাদেশ গবেষণায় বাজেট বাড়িয়েছে, কিংবা আদৌ গবেষণা হয় - সেটা বলা যাবে না। উপরন্তু সরকারের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বাজেট খরচ করা যায়নি বলে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট আসে। আমাদের অবশ্য তত টাকাও নেই যে খরচ করবো। তবে যেটুকু আছে, সেটাও সুষ্ঠভাবে হচ্ছে, কেউ বলতে পারবেন না। সেই হিসেবে এই ক্যাটাগরিতে আমরা নম্বর কম পেতেই পারি।

- বাজার আধুনিকতা (দেশের জিডিপি কেমন, স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা কেমন ইত্যাদি): বাংলাদেশের জিডিপির আকার বড় হচ্ছে। এটা ইতিবাচক। তবে প্রতিযোগিতা যে খুবই অসুস্থ্য সেটা বোধ করি সবাই মেনে নিবেন। এখানে যারা ব্যবসা করেন, তারা মুনাফা করেন সরকারকে ফাঁকি দিয়ে, আর ব্যাংক খালি করে - প্রকৃত ব্যবসা করে নয়। এটাই বাস্তবতা। ব্যাংকে রাখা পাবলিকের টাকা ফাও নিয়ে ফেলতে পারলে তো আর ব্যবসা করার দরকার নাই। ওই টাকার কিছু অংশ দিয়ে কিছু মানুষকে বছরের পর বছর পালার নামই হলো ব্যবসা। ব্যাংক খালি করার যে ইনোভেশন, সেটা নিশ্চই এখানে ধরা হয়নি। তাহলে অনেক পয়েন্ট যোগ হতো। আর সিন্ডিকেটের কথা নাই-বা বললাম। সেই হিসেবে এখানে জিডিপি'র জন্য কিছু পয়েন্ট পাওয়া যেতে পারে।

- ভৌত অবকাঠামো (রাস্তাঘাট, স্কুল, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইত্যাদি): বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে এই ধরণের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কি না, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে বৈকি! পয়েন্টের দিক থেকে এখানে বাংলাদেশ ভালো নম্বর পেয়ে থাকবে হয়তো।

- মানব সম্পদ ও গবেষণা (জনপ্রতি সরকারের বিনিয়োগ, সায়েন্টিফিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান ইত্যাদি): এই খাতে আমরা খুব বেশি পয়েন্ট পেয়েছি বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে সায়েন্টিফিক গবেষণা করে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। আইসিডিডিআরবি, এবং কৃষি গবেষণা ছাড়া আর কোনও খাতে তেমন সংবাদ চোখে পড়েনি। তবে কারো জানা থাকলে, সেগুলো এখানে যুক্ত করতে পারেন।

- প্রাতিষ্ঠানিক সবলতা (রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, একটা ব্যবসা শুরু করতে কতটা সহজ ইত্যাদি): রাজনীতি নিয়ে কথা বলাটা নিরাপদ হবে না। তবে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করা, কিংবা ব্যবসা পরিচালনা করা যে সহজ নয় - সেটা নিশ্চই সবাই জানেন। একটা ট্রেড লাইসেন্স বের করতেই অনেকের জুতার তলা শেষ হয়ে যেতে পারে।

- ক্রিয়েটিভ আউটপুট (সবচে দামী ব্র্যান্ড, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যাপলিকেশন, ট্রেডমার্ক অ্যাপলিকেশন ইত্যাদি): বাংলাদেশের তেমন কোনও দামী ব্র্যান্ড নাই। বাংলাদেশ এখনও নিজের ব্র্যান্ড প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে তৈরী করতে পারেনি। আমাদের তো নিজেদের কোনও পণ্য নেই। তবে হয়তো একসময় হবে। তখন আমরা এই খাতে আরো নম্বর পাবো।

- জ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার (প্যাটেন্ট, শ্রমিকের দক্ষতা, সফটওয়্যারের ব্যবহার ইত্যাদি): বাংলাদেশের প্রযুক্তি মানেই হলো মোবাইল। এখানে স্থানীয় সফটওয়্যারের কোনও ব্যবহার এবং বাজার নেই। তবে বাংলাদেশের সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা বিদেশের কাজ করে। সেটা ওই দেশের কাজে লাগে। আর বাংলাদেশে মোবাইলের ব্যবহার বেড়েছে। তবে সেটাকে পুরোপুরি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বলা যাবে না। কারণ মোবাইল দিয়ে কথা বলা, টাকা পাঠানো আর ইন্টারনেটে পর্ন দেখা ছাড়া আর তেমন কিছুই এই দেশের মানুষ করে না। তাদেরকে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে বুঝা যাবে, ওদের সাথে আমাদের পার্থক্য কতটুকু।

চার.
সাদামাটা চোখে আমার কাছে মনে হয়েছে, রিপোর্টটি ঠিকই আছে। বিজযের ৫১ বছরে আমরা এইটুকুই অর্জন করতে পেরেছি। পাশাপাশি বুঝতে পারছি, আমাদেরকে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এবং দেশের প্রতিটি খাতে আধুনিক মানুষ দিতে হবে, যারা দেশকে ওই জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন।

আর যদি সেটা না পারি, তাহলে আজ থেকে আরো ৫০ বছর পর কেউ  হয়তো এমন আরেকটি রিপোর্ট নিয়ে লিখতে বসবে! ৫০ বছরেও একটি জাতি ঘুরে দাড়াতে পারে - এমন উদাহরণ এই গ্রহে অনেক আছে। আমাদের হয়তো আরো বেশি সময় লাগছে, এই যা! এর একটি বড় দায়িত্ব গিয়ে পড়বে পরের প্রজন্মের হাতে। তবে তাদেরকে যেভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেখছি, তাতে সময়টি আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে!

ঢাকা / ১৭ ডিসেম্বর ২০২২"
Collected.

Navigation

[0] Message Index

Go to full version