চাঁদার টাকায় পিকনিক আয়োজন: ইসলাম কী বলে?

Author Topic: চাঁদার টাকায় পিকনিক আয়োজন: ইসলাম কী বলে?  (Read 331 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
চাঁদার টাকায় পিকনিক আয়োজন: ইসলাম কী বলে?

চাঁদাবাজি আমাদের দেশে এক ব্যাপক রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সারা বছরেই কোনো না কোনো দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বা কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে চাঁদা উঠানো হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে চাঁদা দাতার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতির কোনো পরোয়া করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে সামর্থ্যের ও বিবেচনা করা হয় না। অনেকেই সামাজিক অবস্থান বা চক্ষুলজ্জায় কিংবা নিজের জান, মাল, ইজ্জত-আবরু রক্ষার্থে চাঁদা দিতে বাধ্য হন। একাধিক জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত  খবরে দেখা গেছে, খুদে ব্যবসায়ী থেকে থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের সামনে  অসহায় ও জিম্মি হয়ে পড়েছে। চাঁদা দেওয়ার ভয়ে অনেকে নিজের দোকানপাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সেখানেও তাদের রক্ষা নেই। কিশোর গ্যাং তাদের নাম্বার কালেক্ট করে বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছে। অনেকেই নিজের জান-মালের ভয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রশ্ন হলো এভাবে মানুষ থেকে জোরপূর্বক চাঁদ উঠিয়ে নববর্ষ বা কোনো দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা কিংবা কোন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কি ইসলাম সমর্থন করে?
 
ইসলাম ইনসাফের ধর্ম। ইসলাম সর্বক্ষেত্রে ইনসাফ-ন্যায়নীতি, সাম্য-সমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। জুলুম-অবিচার, সীমালংঘন-বাড়াবাড়ি কঠোর হস্তে দমন করেছে। প্রতিটি মানুষের জান, মাল, ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অন্যায়ভাবে অপরের মাল আত্মসাৎ করাকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যের মালিকানায় বেআইনি হস্তক্ষেপকে নিষিদ্ধ  করেছে। কারো স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া তার সম্পদ ভক্ষণকে হারাম  করেছে। পরকালে এর জন্য কঠিন জবাবদিহিতাও শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। 

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। আর মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।  (সূরা বাকারা-১৮৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানের সম্পদ তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৬৭৫৬)

চাঁদা দেওয়া বা নেওয়া বৈধ হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে দুটি  বিষয় লক্ষ্যণীয়-

এক.  যে উপলক্ষ্যে চাঁদা আদান-প্রদান করা হবে সেই সে উপলক্ষ্য শরীয়ত সমর্থিত হতে হবে। সুতরাং সেই উপলক্ষ্যটা যদি শরীয়ত বিরোধী হয় তাহলে সেক্ষেত্রে চাঁদা দেওয়া কিংবা নেওয়া কোনোটাই জায়েজ হবে না।

মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। (সূরা মায়িদাহ - ২)

দুই.  চাঁদাদাতার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি থাকা। চাঁদা দিতে বাধ্য না করা। সুতরাং কেউ যদি জোরপূর্বক চাঁদা উঠায় তাহলে চাঁদা উত্তোলনকারী এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা গুনাহগার হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শুধু তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ আচরণ করে বেড়ায়। বস্তুত তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৪২)

জালিমরা পরকালে নিঃস্ব হয়ে যাবে। পরিণামে তারা জাহান্নামের ইন্ধন হবে।

একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) তার পাশে উপবিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-কে বললেন, তোমরা কি জানো, নিঃস্ব ও অসহায়  কে?

সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বললেন- আমাদের মধ্যে তো নিঃস্ব ও অসহায় তাদের বলা হয়, যাদের কাছে ধন-সম্পদ,টাকা-পয়সা না থাকে। তখন রাসুলূল্লাহ (সা.) বললেন- প্রকৃতপক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিঃস্ব অসহায় সে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা, জাকাত, সবকিছু নিয়ে উঠবে, কিন্তু সে দুনিয়াতে কারো সঙ্গে মন্দ আচরণ করেছে, কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে আঘাত করেছে, কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি অপকর্ম সংঘটিত করেছে, তাই এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কিছু নেকি একে দিবে, কিছু নেকি ওকে দিবে! এভাবে দিতে দিতে বান্দার হক আদায়ের পূর্বে যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে! (সহীহ মুসলিম: ৬৪৭৩)

তাই আসুন আমরা বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার পরিত্যাগ করি। জুলুম ও চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকি। কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করি এবং উভয় জাহানের সফলতা অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন।

Source: https://www.jugantor.com/islam-life/631638/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%86%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd