পরামর্শ ও এস্তেখারা : গুরুত্ব ও আদব

Author Topic: পরামর্শ ও এস্তেখারা : গুরুত্ব ও আদব  (Read 1178 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 223
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS

পরামর্শ ও এস্তেখারা : গুরুত্ব ও আদব



যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার পূর্বে শরীয়ত আমাদের দুটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছে :

এক. এস্তেশারা (استشارة) অর্থাৎ পরামর্শ করা।

দুই. এস্তেখারা (استخارة)।

শয়তান সর্বদাই মানুষের পেছনে লেগে থাকে আর শরীয়তের একেবারে সহজ—সরল ও সাধারাণ বিষয়ও বিকৃতরূপে উপস্থাপন করে। শরীয়তের অন্যান্য বিষয়ের মতো পরামর্শ ও এস্তেখারার রূপও বদলে দিয়েছে। একে তো অনেকে পরামর্শ ও এস্তেখারার ধারই ধারে না। আর যারা কিছুটা ধার ধারে তাদের কর্মপদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ। যেহেতু শরীয়তে এস্তেখারার তুলনায় পরামর্শের গুরুত্ব বেশি তাই প্রথমে পরামর্শের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং এতে যে সকল ভুল—ভ্রান্তি হয়ে থাকে সে সম্পর্কে আলোচনা করব। এরপর এস্তেÍখারার আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

পরামর্শের গুরুত্ব

পরামর্শের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণীগুলো শুনুন :

০১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَشَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ      ۚ        فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَکَّلْ عَلَی اللهِ          ؕ اِنَّ اللهَ یُحِبُّ الْمُتَوَکِّلِیْنَ

আর আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহাবীদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যখন ফায়সালা হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করুন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা ভরসাকারীদের ভালোবাসেন।—সূরা আলে ইমরান, ০৩ : ১৫৯

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সর্বদাই আল্লাহ তাআলার হেদায়াত ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ীই কাজ করতেন। তা ছাড়া রাসূলের চেয়ে বুঝ, উপলব্ধি ও দূরদর্শিতা কার বেশি হতে পারে? তা সত্ত্বেও পরামর্শের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্য আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

০২. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَ الَّذِیْنَ اسْتَجَابُوْا لِرَبِّهِمْ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ     ۪ وَ اَمْرُهُمْ شُوْرٰی بَیْنَهُمْ ۪ وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ

আর যারা তাদের রবের নির্দেশ পালন করে, নামায কায়েম করে, পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করে এবং আমি তাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।—সূরা শূরা, ৪২ : ৩৮

আল্লাহ তাআলার রাস্তায় ব্যয় করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ পথ হলো যাকাত। পরামর্শের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নামায ও যাকাতের মতো মহান দুই ইবাদতের মাঝে পরামর্শের কথা আলোচনা করা হয়েছে। আর এ সূরার নামই রাখা হয়েছে ‘সূরা শূরা’ অর্থাৎ পরামর্শের বিধান—সংবলিত সূরা।

নামায ও যাকাত এমন দুই ইবাদত যে, কোরআন ও হাদীসে প্রায় সকল স্থানেই এ দুটি একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য এ দুই ইবাদতকে قرينتان তথা পরস্পরের সঙ্গী বলেই অভিহিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু কোরআনে কারীমে কেবল দুটি স্থানে নামায ও যাকাতের মাঝে তৃতীয় আরেকটি বিষয় উল্লেখ করে ওই বিষয়ের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। একটি হলো সূরা শূরা। এখানে নামায ও যাকাতের মাঝে পরামর্শের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো সূরা মুমিনূন। এ সূরার শুরুতেই বলা হয়েছে,

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ۙ﴿۱﴾  الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ ۙ﴿۲﴾  وَالَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ ﴿ۙ۳﴾  وَالَّذِیْنَ هُمْ لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوْنَ ۙ﴿۴﴾

অবশ্যই ওই সকল মুসলমান সফলতা লাভ করেছে, যারা খুশু—খুযুর সঙ্গে নামায আদায় করে, অনর্থক বিষয় থেকে বিরত থাকে আর যাকাত আদায় করে।—সূরা মুমিনূন, ২৩ : ১—৪

এখানে আল্লাহ তাআলা নামায ও যাকাতের মতো মহান ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত দুটির মাঝে অনর্থক বিষয় থেকে বিরত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপের উদ্দেশ্যেই একে নামায ও যাকাতের মাঝে আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলার সফল বান্দা তারাই, যারা এমন—সব কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকে, যাতে না দুনিয়ার কোনো ফায়দা আছে না আখেরাতের।

চলবে…………………………
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Sr. Ethics Education Teacher
Daffodil Institute of Social Sciences - DISS