দুনিয়াতে তাদের পরিচয়

Author Topic: দুনিয়াতে তাদের পরিচয়  (Read 586 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS

দুনিয়াতে তাদের পরিচয়

সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগাদের এই বিভাজন তো হবে আখিরাতে। কিন্তু দুনিয়াতে তাদের পরিচয় ও পরিচিতি কী হবে? কেমন হবে তাদের চিন্তা ও কর্মনীতি? সে প্রসঙ্গেও কুরআন মাজীদে একাধিক আয়াত রয়েছে। তন্মধ্যে মৌলিক বক্তব্যসম্পন্ন একটি আয়াত রয়েছে সূরা ত্ব-হায়। তাতে সর্বপ্রথম মানব ও নবী হযরত আদম আ. এবং তাঁর জীবনসঙ্গিনী ‘হাওয়া’ রাযিয়াল্লাহু আনহাকে দুনিয়াতে পাঠানোর সময় যে নসীহত করা হয়েছিল সেই প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন—

قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِیْعًۢا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّفَاِمَّا یَاْتِیَنَّكُمْ مِّنِّیْ هُدًی فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَایَ فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشْقٰی.

তোমরা উভয়ে এখান থেকে নিচে নেমে যাও। তোমরা একে-অন্যের শত্রু।

পরবর্তীতে যদি তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে কোনো হেদায়েত পৌঁছে, তখন যে ব্যক্তি আমার হেদায়েত অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না। —সূরা ত্ব-হা (২০) : ১২৩

এখান থেকে বোঝা যায়, সৌভাগ্যবান তারাই, যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত হেদায়েতের অনুসরণ করে। আর দুর্ভাগা তারা, যারা সেই হেদায়েতের অনুসরণ করে না। হেদায়েত মানে নির্দেশনা। সঠিক পথের দিশা। সঠিক গন্তব্য ও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যাভিমুখী পথনির্দেশ।

স্পষ্ট কথা যে, প্রত্যেক মুমিনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য হল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি; গন্তব্য— জান্নাত। এই লক্ষ্য ও গন্তব্যের সঠিক নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা নবী রাসূলগণের মাধ্যমে নাযিল করেছেন। এরপর নির্দেশ করেছেন সেই হেদায়েতের পূর্ণ অনুসরণ করতে। যারা অনুসরণ করেছে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে— فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشْقٰی  ‘তারা বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না।’

নসীহত বিমুখতা

উক্ত আয়াতের পরেই আল্লাহ তাআলার হেদায়েত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِیْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِیْشَةً ضَنْكًا وَّ نَحْشُرُهٗ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ اَعْمٰی


যে ব্যক্তি আমার উপদেশ (ও পথনির্দেশ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাব অন্ধ করে। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে উঠালেন কেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম।

তিনি বলবেন, এভাবেই তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ তাই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে। —সূরা ত্ব-হা (২০) : ১২৪-২৫

কিয়ামতের দিন যাকে অন্ধ করে উঠানো হবে এবং যাকে আল্লাহ তাঁর রহমত ও দয়া থেকে সরিয়ে রাখবেন তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে আছে?

সংকটময় জীবন

লক্ষ করার বিষয় হল, আল্লাহ তাআলার ঘোষণায় আছে— তার দুনিয়ার জীবনও হবে সংকীর্ণ। আর যে ব্যক্তি সংকীর্ণ ও সংকটময় জীবনের অধিকারী হবে, সে তো দুনিয়াবী দৃষ্টিতেও হবে দুর্ভাগা।

তার দুনিয়ার জীবন সংকটময় কীভাবে হবে— সে বিষয়ে আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী রাহ. লেখেন—

বাহ্যিকভাবে যদিও তার কাছে বিপুল ধন-সম্পদ ও ভোগ-বিলাসের সামগ্রী থাকে, তবে তার অন্তরে অল্পেতুষ্টি ও তাওয়াক্কুলের গুণ না থাকার কারণে সর্বাবস্থায় কেবল দুনিয়ার লোভ, অধিক সম্মান, সম্পদ ও উন্নতি লাভের চিন্তা এবং যে কোনো সময় অভাবে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কায় সে থাকে উৎকণ্ঠিত। সে কখনোই অর্থার্জনের লোভ-লালসা থেকে বের হতে পারে না। উপরন্তু বয়সের আধিক্য, শারীরিক দুর্বলতা ও  নিশ্চিত মৃত্যুর চিন্তা এবং যে কোনো প্রেক্ষাপটে সকল ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় তার জন্য স্বতন্ত্র অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্য তাদের অনেককেই দেখা যায়, রাতদিনে মাত্র দুয়েক ঘণ্টা কিংবা সর্বোচ্চ তিন চার ঘণ্টা ঘুমাতে পারে। অনেকে নানা দুশ্চিন্তায় অসহ্য হয়ে জীবনের উপর মৃত্যুকে প্রাধান্য দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য এবং বাস্তব জীবনের বহু অভিজ্ঞতা এ সত্যের সাক্ষ্য দেয় যে, দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর যিকির ও তাঁর নির্দেশ পালন ছাড়া কিছুতেই কারো অন্তরে সুখ ও শান্তি অর্জন হয় না। —তাফসীরে উসমানী, পৃষ্ঠা : ৪২৭ [ঈষৎ পরিবর্তিত]

এখানে সংকীর্ণ জীবনের যে ব্যাখ্যা উল্লেখিত হয়েছে তা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখার মতো। একটু খেয়াল করলেই বুঝে আসবে— আমাদের জীবনও তেমনই সংকীর্ণ কি না, যে সংকীর্ণতার কারণ হল আল্লাহর স্মরণ ও নসীহত-বিমুখতা!

আরেক আয়াতে প্রকৃত দুর্ভাগার কর্ম ও পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন—

سَیَذَّكَّرُ مَنْ یَّخْشٰی، وَ یَتَجَنَّبُهَا الْاَشْقَی، الَّذِیْ یَصْلَی النَّارَ الْكُبْرٰی، ثُمَّ لَا یَمُوْتُ فِیْهَا وَ لَا یَحْیٰی.

যে ব্যক্তি (আল্লাহকে) ভয় করে সে অবশ্যই উপদেশ গ্রহণ করবে। আর তা থেকে দূরে থাকবে কেবল সেই ব্যক্তি, যে চরম দুর্ভাগা। যে প্রবেশ করবে মহাঅগ্নিতে। তারপর সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না। —সূরা আ‘লা (৮৭) : ৯-১৩

এখানেও দুর্ভাগা বলা হয়েছে এমন ব্যক্তিকে, যে আল্লাহর হেদায়েত ও নির্দেশনা মোতাবেক জীবন যাপন করে না। দ্বীনী উপদেশ ও নসীহত থেকে দূরে থাকে। ঈমান, আমল, ইবাদত ও আখেরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সবশেষে তার পরিণতি বলা হয়েছে, মহাঅগ্নি অর্থাৎ জাহান্নাম।
Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka