Religion & Belief (Alor Pothay) > Allah: My belief

রমজানে শ্রমিকের সম্মান ও অধিকার

(1/1)

Khan Ehsanul Hoque:
রমজানে শ্রমিকের সম্মান ও অধিকার

ইসলাম শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা-অধিকার সম্পর্কে যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর যখন নামাজ পূর্ণ করা হবে, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়ো; আর আল্লাহকে অধিক মাত্রায় স্মরণ করো, আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।’ (সুরা-৬২ জুমুআহ, আয়াত: ১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফরজ ইবাদাতগুলোর পরেই হালাল উপার্জন ফরজ দায়িত্ব।’ (বায়হাকি, শুআবুল ইমান: ৮৩৬৭, মিশকাত: ২৭৮১)

‘হালাল উপার্জনগুলোর মধ্যে তা সর্বোত্তম, যা কায়িক শ্রমে অর্জন করা হয়।’ (মুসলিম)

শ্রমিকের অধিকার ও শ্রমগ্রহীতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস শরিফে আছে, ‘শ্রমিকেরা তোমাদেরই ভাই, আল্লাহ তাদের তোমাদের দায়িত্বে অর্পণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা যার ভাইকে তার দায়িত্বে রেখেছেন; সে যা খাবে, তাকেও তা খাওয়াবে, সে যা পরিধান করবে, তাকেও তা পরিধান করাবে; তাকে এমন কষ্টের কাজ দেবে না, যা তার সাধ্যের বাইরে, কোনো কাজ কঠিন হলে সে কাজে তাকে সাহায্য করবে।’ (মুসলিম, মিশকাত)

হজরত শুয়াইব (আ.) হজরত মুসা (আ.)-কে কাজে নিয়োগ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘আর আমি আপনাকে কষ্টে ফেলতে চাই না, ইনশা আল্লাহ! আপনি আমাকে কল্যাণকামী রূপে পাবেন।’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ২৭)

সব নবী-রাসুল কায়িক পরিশ্রম করেই জীবিকা উপার্জন করেছেন। হজরত নুহ (আ.) কাঠমিস্ত্রি বা ছুতারের কাজ করেছেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) সেলাইয়ের কাজ করতেন। হজরত সুলাইমান (আ.)-এর পিতা নবী ও সম্রাট হজরত দাউদ (আ.) কামারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

এমনকি নবী হজরত শুয়াইব (আ.)-এর খামারে হজরত মুসা (আ.) ৮ থেকে ১০ বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হজরত খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন।

রমজান মাস ইবাদতের জন্য বিশেষায়িত। এ মাসে মালিক বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো শ্রমিকের প্রতি রহম করা, তাঁর কাজের চাপ কমিয়ে দিয়ে তাঁকে ইবাদতে সহায়তা করা।


প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে তার কাজের লোকের কাজ কমিয়ে সহজ করে দিল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার হিসাব সহজ করে দেবেন।’

শ্রমিক বা কর্মচারীর পারিশ্রমিকের ব্যাপারে হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করো তার ঘাম শুকানোর আগেই।’ (ইবনে মাজাহ, সহিহ আলবানি)

যাঁরা শ্রমিকের মজুরি আদায়ে টালবাহানা করেন, তাঁদের ব্যাপারে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সামর্থ্যবান পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম বা অবিচার।’ (বুখারি: ২২৮৭ ও মুসলিম) ‘হাশরের দিনে জুলুম অন্ধকার রূপে আবির্ভূত হবে।’ (বুখারি: ২৩১৫) হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে থাকব, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে, মানুষকে বিক্রি করে এবং ওই ব্যক্তি যে কাউকে কাজে নিয়োগ করল, অতঃপর সে তার কাজ পুরা করল; কিন্তু সে তার ন্যায্য মজুরি দিল না।’ (বুখারি)

রাসুলে করিম (সা.) আরও বলেন, ‘যদি কেউ কারও ন্যায্য পাওনা অস্বীকার করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশত হারাম করে দেন।’ (মুসলিম)

ইসলামি বিধানমতে, শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি হলো তাঁর মৌলিক অধিকারসমূহ তথা ‘খোরপোষ-বাসস্থান এবং শিক্ষা ও চিকিৎসা’।

ক্ষতিগ্রস্ত বা অক্ষম শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা সম্পদ রেখে যাবে, তা তাদের উত্তরাধিকারীরা পাবে; আর যারা অসহায় পরিবার-পরিজন রেখে যাবে, তা আমাদের (সরকার ও মালিকপক্ষের) দায়িত্বে।’ (বুখারি, মুসলিম ও বায়হাকি)

মুসলিম হিসেবে মালিকের দায়িত্ব হলো শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তাসহ তাঁর যাবতীয় মৌলিক অধিকার, চাহিদাগুলো পূরণ করা। তাঁর ইবাদত ও আমলের সুযোগ দেওয়া। বিশেষত রমাদানে রোজা, তারাবিহ, ইফতার ও সাহ্‌রির সুযোগ করে দেওয়া। রমাদান শেষে পরিবার-পরিজনসহ ঈদের আনন্দে শামিল হওয়ার ব্যবস্থা করা। ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ বা প্রদান করা।

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/er16mxyutv

Navigation

[0] Message Index

Go to full version