সময়ের গুরুত্ব ও ব্যবহার
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়; যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে সহায়তা করে।’ (সুরা আসর, আয়াত: ১-৩)।
সময়ের হিসাবের নিমিত্তে আল্লাহ তাআলা চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন। কোরআনের বর্ণনা, ‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের মনজিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’ (সুরা: ১০ ইউনুস, আয়াত: ৫)। ‘আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, ইহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মনজিল; অবশেষে সেটি শুষ্ক বক্র পুরোনো খর্জুর শাখার আকার ধারণ করে।’ (সুরা: ৩৬ ইয়াসিন, আয়াত: ৩৮-৩৯)। ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী-পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস ১২টি।’ (সুরা: ৯ তাওবা, আয়াত: ৩৬)।
ইসলামে মানুষের অনর্থক কাজে সময় ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কাজেই যখনই অবসর পাও ইবাদতের কঠোর শ্রমে লেগে যাও। এবং নিজের রবের প্রতি মনোযোগ দাও।’ (সূরা ইনশিরাহ : ৭-৮)
একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি-২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ-১৭৭৩৪)।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক পা পর্যন্ত নড়তে পারবে না। প্রশ্নগুলো হলো-তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কিনা?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬)।
সময়কে কাজে লাগানোর অন্যতম উপায় হলো লক্ষ্য স্থির করা। লক্ষ্যহীন মানুষ সময়ের অপচয় করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন কর ও তার সদ্ব্যবহার কর। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে, জীবনকে মৃত্যুর আগে।’ (বায়হাকি-১০২৪৮, মুসনাদে হাকিম-৭৮৪৬)।
উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজটি করতে না পারলে, অসময়ে শত চেষ্টার পরও তা করা সম্ভব হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে রাসূল) যদি তুমি দেখতে! অপরাধীরা যখন তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে মাথা নত করে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম এখন তুমি আমাদের পুনরায় (পৃথিবীতে) পাঠিয়ে দাও, আমরা সৎকাজ করব। নিশ্চয়ই আমরা (এখন) দৃঢ় বিশ্বাসী (সূরা আস সাজদাহ : ১২)।
এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় যতটুকু সময় পাওয়া যায় আল্লাহর পথে ব্যয় করা উচিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।’ (সূরা মুনাফিকুন : ১০-১১)।
ময়ের গুরুত্বারোপ অনেক সূরার প্রারম্ভে সময়ের কসম করা হয়েছে। রাত্রি ও দিনের কসম করে বলেন : ‘শপথ রাত্রির যখন তা আচ্ছন্ন করে। শপথ দিনের যখন তা উদ্ভাসিত করে।’(সূরা আল-লাইল : ১-২) এখানে রাত ও দিনের কসমে বান্দাদেরকে কল্যাণের চিন্তা ও গবেষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফজর ও দশ রাতের কসম করে বলেন : ‘শপথ ফজরের! শপথ দশ রাতের।’ (সূরা আল-ফাজর : ১-২) অন্য আয়াতে বলেন : ‘শপথ সকালও পূবাহেৃর! শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়।’(সূরা দ্বোহা :১-২) সময়ের কসম করে বলেন : ‘সময়ের শপথ! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমর্জিত।’ (সূরা আসর : ১-২)
ইসলাম প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ছাড়াও অধিকাংশ বিষয়সমূহ সময়ের মালায় গাঁথা। আল্লাহ বলেন : নিশ্চয় নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরজ করা হয়েছে। (সূরা নিসা : ১০৩)। এখানে নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট সালাত আদায়ের তাকিদ দিয়ে সময়ের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। তেমনিভাবে ইসলামের প্রতিটি কাজ সময় মতো পালন করতে হবে। অন্যথায় তা যথাযথভাবে আদায় হবে না।
সময়কে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন : ‘তিনিই রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদকে তোমাদের উপকারে নিয়োজিত করেছেন এবং তারকারাজিও তারই নির্দেশমতো কর্মে নিয়োজিত। নিশ্চয় তাতে জ্ঞানীদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।’(সুরা ইব্রাহিম : ৩৩-৩৪) অর্থাৎ রাতকে দিনে রূপান্তর করেছেন এবং দিনকে রাতে রূপান্তরিত করেন। যাতে একটি সময় নষ্ট হয়ে গেলে অন্য সময় এর প্রতিকার করা যায়।
এমনিভাবে হাসান বসরি রহ. বলেন : হে আদম সন্তান, নিশ্চয় তুমি অনেকগুলো দিন পেয়েছো আর প্রত্যেক দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়ে চলে গিয়েছে।’ সময় নিয়ে আপসোস বিষয়ে কুরআন দু’টি অবস্থানের কথা বর্ণনা করেছে। প্রথম অবস্থান : জীবনের অন্তিম মুহূর্ত। তখন সে আফসোস করবে, যদি তাকে একটুখানি সময় দেয়া হতো। যদি একটু সুযোগ দেয়া হতো তবে সে তার বিনষ্ট অবস্থা ঠিক করে নিত এবং ছুটে যাওয়া আমলগুলো সংশোধন করে নিতে পারত। এই বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে :‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাসিন না করে। যারা উদাসিন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে ; অন্যথায় সে বলবে, হে আমার রব্ব! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সাদাকাহ করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সূরা আল-মুনাফিকুন : ৯-১০)। অবশ্য এ আশা পরিবর্তনযোগ্য ও কর্তনকারী কেউ নেই।
দ্বিতীয় অবস্থান : আখিরাতের মুহূর্ত। আল্লাহ বলেন: ‘সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের রব্ব! আমাদেরকে নিষ্কৃৃতি দিন, আমরা সৎ কাজ করব, পূর্বে যা করতাম তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করিনি? যে, তখন কেহ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারতে? তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীরাও এসেছিল। সুতরাং শাস্তি আস্বাদন করো, জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সূরা আল-ফাতির : ৩৭)
মুসলমানের উচিত সময়ের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্ববান হওয়া। ওমর ইবন আবদুল আজিজ বলেছেন : রাত-দিন তোমরা কাজে ডুবে থাক অতএব সময়ও তোমাদের মাঝে ডুবে থাকবে! মূলত ঘৃণার আলামত হলো সময় নষ্ট করা। আর সময় হলো একটি তলোয়ার তুমি তাকে নষ্ট না করলে সেও তোমাকে নষ্ট করবে না। সর্বদায় এক ভালো অবস্থা থেকে আরো উন্নত অবস্থানের জন্য প্রাণান্তকর উন্নতির চেষ্টা করা মুমিনের উপর ওয়াজিব। (আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী, মুসলিম জীবনে সময়, পৃ.২০)।
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা:)বলেন : ‘সে দিন আমি অত্যন্ত লজ্জিত হয়েছি, যে দিনের সূর্য ডুবে গেছে। আমার আয়ু কিছুটা হলেও ফুরিয়ে গেছে, অথচ আমার আমলের কোনো উন্নতি হয়নি!’
আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “আমি জিন ও ইনসানকে কেবল আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত, আয়াত নং ৫৬) সুতরাং যে জীবন ও সময় আল্লাহর ইবাদতের জন্য এবং তার ইবাদতের সহায়ক দুনিয়াদারী করার জন্য সৃষ্ট, তা মুসলিম খেলায় ও হেলায় নষ্ট করতে পারে না।
যে দেহ ও তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সৃষ্টি এবং আমাদের নিকট যা আমানত, সে দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কাজে কিরূপে ব্যয় করতে সাহস করতে পারি? তিনি আমাদেরকে, আমাদের হায়াত ও মওতকে খেলার জন্য নয়, বরং কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহর ঘোষণা হল, “যিনি তোমাদেরকে এই পরীক্ষা করার জন্য জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন যে, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সবচেয়ে উত্তম।” (সূরা মুল্কঃ আয়াত নং ২)
মহানবী (সা.) বলেন, “মানুষ মারা গেলে তার (সকল) আমল বন্ধ হয়ে যায়।------।” (সহীহ্ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১) অর্থাৎ, মরণের পূর্ব পর্যন্ত তার কর্ম বন্ধ হয় না। অতএব যে জাতির কোন অবসর নেই, তার আবার অবসর-বিনোদন’ কি? মুসলিমের জীবনের মূল্য আছে, লক্ষ্য আছে। যাদের জীবনের কোন লক্ষ্য নেই, কেবল তাদের কাছেই সময়ের কোন কদর নেই। সুতরাং মুসলিম খেল-তামাশায় তার জীবন ও সময় অপচয় করতে পারে না।
খেলা এমন জিনিস, যা অনর্থক সময় নষ্ট করে। অথচ মুসলিম যুবকের উচিত, সময়ের যথােচিত কদর করা, সময়ের যথার্থ মূল্যায়ন করা। কারণ, সময়ই হল জীবন। অতএব যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে ভালোবাসে, সে ব্যক্তির উচিত, সময়ের অপচয় না করা। হাসান বসরী (রঃ) বলেন, 'হে আদম সন্তান! তুমি আসলে কতকগুলি দিনের সমষ্টি।
আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “আমি জিন ও ইনসানকে কেবল আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত, আয়াত নং ৫৬) সুতরাং যে জীবন ও সময় আল্লাহর ইবাদতের জন্য এবং তার ইবাদতের সহায়ক দুনিয়াদারী করার জন্য সৃষ্ট, তা মুসলিম খেলায় ও হেলায় নষ্ট করতে পারে না।
যে দেহ ও তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সৃষ্টি এবং আমাদের নিকট যা আমানত, সে দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কাজে কিরূপে ব্যয় করতে সাহস করতে পারি? তিনি আমাদেরকে, আমাদের হায়াত ও মওতকে খেলার জন্য নয়, বরং কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহর ঘোষণা হল, “যিনি তোমাদেরকে এই পরীক্ষা করার জন্য জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন যে, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সবচেয়ে উত্তম।” (সূরা মুল্কঃ আয়াত নং ২)
মহানবী (সা.) বলেন, “মানুষ মারা গেলে তার (সকল) আমল বন্ধ হয়ে যায়।------।” (সহীহ্ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১) অর্থাৎ, মরণের পূর্ব পর্যন্ত তার কর্ম বন্ধ হয় না। অতএব যে জাতির কোন অবসর নেই, তার আবার অবসর-বিনোদন’ কি? মুসলিমের জীবনের মূল্য আছে, লক্ষ্য আছে। যাদের জীবনের কোন লক্ষ্য নেই, কেবল তাদের কাছেই সময়ের কোন কদর নেই। সুতরাং মুসলিম খেল-তামাশায় তার জীবন ও সময় অপচয় করতে পারে না।
খেলা এমন জিনিস, যা অনর্থক সময় নষ্ট করে। অথচ মুসলিম যুবকের উচিত, সময়ের যথােচিত কদর করা, সময়ের যথার্থ মূল্যায়ন করা। কারণ, সময়ই হল জীবন। অতএব যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে ভালোবাসে, সে ব্যক্তির উচিত, সময়ের অপচয় না করা। হাসান বসরী (রঃ) বলেন, 'হে আদম সন্তান! তুমি আসলে কতকগুলি দিনের সমষ্টি।
Ref:
Daily Jugantor
Prothom Alo
Daily Noya Digonto