Religion & Belief (Alor Pothay) > Islam

বরকতের দশটি চাবি

(1/1)

Badshah Mamun:
বরকতের দশটি চাবি
সমস্ত প্রশংসা মহান মালিক রাব্বুল আ’লামীনের জন্য। দরুদ এবং সালাম নাযিল হোক তারই প্রেরিত রাসুল মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম। তার প্রতি এবং তার আলো আসহাব সকলের প্রতি। সম্মানিত ভাই বন্ধুগণ, আজ আমরা আলোচনা করব ইনশাল্লাহ বরকতের চাবি সমূহ বিষয়ে। বরকতের শব্দের অর্থ হল কল্যাণ বেশি হওয়া, যে কোন কিছুতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ যুক্ত হওয়া- এটা হল বরকত। দুনিয়ার যে কোন বস্তুতে যখন আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার পক্ষ থেকে কল্যাণ যুক্ত হয়, বিষয়টা যখন কল্যাণকর হয়ে যায়, উপকারী হয়ে যায়, তখন সেটা পরিমাণে অনেক অনেক অল্প হলেও, আমাদের জন্য সেটা অনেক বেশি উপকার বয়ে আনে। অনেকে অনেক দীর্ঘ হায়াত পাইছেন, কিন্তু দীর্ঘ হায়াতে তেমন কিছু করার সুযোগ পান নাই, তার মানে জীবনে বরকত হয় নাই। অনেকে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ কামাই করেছেন, কিন্তু সে সম্পদ থেকে কোন হিসাব খুজে পাচ্ছেন না যে কোথায় কি করলেন, বরকত নাই। অনেকে দেখা যাচ্ছে যে অনেক কাজ করেছেন কিন্তু ফলাফল দেখা যাচ্ছে খুব বেশি একটা দৃশ্যমান না। তার মানে বরকত নেই। এর বিপরীতে দেখা যায়, একজন অল্প কামাই করছে মাশাআল্লাহ এর ভেতরে অনেক কিছু করে ফেলেছে। কারণ হলো তারে কামাইতে কি ছিল? বরকত ছিল। এ কামাইতে আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার পক্ষ থেকে কল্যাণ ছিল। অতএব আমাদের জীবনে, আমাদের আমলে, আমাদের রুজিতে, আমাদের ইনকামে, আমাদের সন্তান-সন্ততিতে, আমাদের সবকিছুতেই আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার পক্ষ থেকে বরকত আসবে বেশ কিছু আমল আছে সে আমলগুলো করলে। এগুলোকে আমরা এক কথায় বলতে পারি বরকতের দশটি চাবি। এই চাবিগুলো যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে ইনশাআল্লাহ বিদনিল্লাহ আমাদের জীবন বরকতময় হয়ে যাবে।

তার ভিতরে এক নম্বরের চাবি হল বরকতের ঈমান এবং তাকওয়া। প্রিয় ভাইয়েরা যখন ঈমান এবং তাকওয়া কারো মধ্যে থাকে, তখন আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার পক্ষ থেকে বরকতের বারিধারা তার প্রতি বর্ষণ হতে থাকে। আল্লাহ কোরআনে কারীমের বলেছেন “যদি কোন জনপদের লোকেরা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে আমি আসমান থেকে এবং জমিন থেকে উপর থেকে নিচ থেকে উভয় দিক থেকে বরকতের সমস্ত দুয়ার খুলে দিবো”। সম্মানিত ভাইয়েরা, এজন্যই দেখা যায় সারা পৃথিবীতে অন্য ধর্মের মানুষেরা, অমুসলিমেরা কোন কোন দিক থেকে অনেক বেশি সুখে শান্তিতে আছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়, কিন্তু আসলে সুখে শান্তিতে খুব একটা নাই। বিভিন্ন জরিপ বলছে সুইসাইড বা আত্মহত্যার পরিমাণ তাদের মধ্যে বেশি। আত্মহত্যা মানুষ তখনই করে যখন সুখের চাইতে দুঃখের পরিমাণ বেড়ে যায়, কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে আত্মহত্যার পরিমাণ অনেক কম। মুসলমানরা বেশিরভাগই গরীব-অভাবী। তারপরেও তাদের মধ্যে আত্মহত্যার পরিমাণ কম। এটা একটা আলামত, যে তাদের জীবনে কি আছে বরকত আছে। কারণ ঈমান সামান্য হলেও আছে। আর যার জীবনে ঈমান নাই তাকে দেখবেন যে অনেক অট্টালিকাতে সে আছে, সুখে শান্তির অনেক উপকরণ তার কাছে, আছে কিন্তু আসলে সুখ শান্তিতে খুব একটা সে নাই। কারণ তার জীবনে কি নাই? বরকত নাই। এজন্য কেউ যদি ইমান আনে আর তাকওয়া অবলম্বন করে, এ দুটি জিনিস যদি কারো ভিতরে থাকে তাহলে আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার ওয়াদা হলো আসমান এবং জমিন থেকে বরকতের সমস্ত দুয়ারগুলো তার জন্য কি করে দেয়া হবে- খুলে দেয়া হবে। এজন্যে ভাই ঈমানকে খালেছ করতে হবে। শিরক থেকে, কুফুরি থেকে, নেফাকি থেকে, “শির্ক-কুফুর-নেফাক” এগুলো থেকে ঈমানকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে আর তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। তাকওয়া কি? তাকওয়া হলো আল্লাহর ভয়ে যেকোন হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর ভয়ে যদি আমি হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার মানসিকতা আমার ভিতরে থাকে, যার ভিতরে যত বেশি থাকবে, আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার তার জীবনকে তত বেশি বরকতময় করে দিবেন।

বরকতের দ্বিতীয় নম্বর চাবি হলো- যেকোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। যে কোন কাজ শুরুতে কি করা? নবী আলাইহিসসালাতু আসসালাম বলেছেন- তোমাদের মধ্যে কেউ যখন খায়, খানা শুরু করে এবং সে যদি বিসমিল্লাহ বলে তো শয়তান তার সাথে ওই খাবারে যোগ দিতে পারে না। ভাগ বসাতে পারে না, যেটুকু আছে শুধু তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, কল্যাণকর হয় খাবার। অনুরূপভাবে কেউ যদি বাসা বাড়িতে প্রবেশ করে বিসমিল্লাহ বলে ঢুকে তাহলে সেই ঢুকার সময় তার সাথে কি হতে পারে না? শয়তান যোগ দিতে পারে না। অনুরূপভাবে প্রত্যেকটা কাজে বান্দা যখন ভাল কাজে যখন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে তখন শয়তান সে কাজে আর অংশগ্রহণ করতে পারে না। আর শয়তান যখন ইন্টারফেয়ার করতে পারে না তাহলে আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার পক্ষ থেকে সেখানে বরকত আসা খুবই সহজ হয়ে যায়, এটাই স্বাভাবিক। অতএব বিসমিল্লাহর পরিমাণ বেশি পড়া।

তিন নম্বর বরকতের চাবি হল ভাই কোরআনে কারীমের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ানো। যে যত বেশি কোরআনের সাথে সম্পর্ক গড়বে, তার জীবনে তত বেশি বরকত নেমে আসবে। যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হবে, কোরআনের চর্চা হবে, কোরআনের শেখা হবে, কোরআন বুঝাবুঝি হবে, কোরআনের উপর আমল করার প্রবণতা থাকবে অভ্যাস থাকবে সেই ঘরে আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার বরকত তত বেশি আসবে। আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার কোরআনে কারীমের ভিতরে বলেছেন কুরআনে কারিমকে আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালা কোরআনের বহু জায়গায় বলেছেন যে, এটা কিতাবে মোবারাক। এই কোরআনটা হল কি বরকতময়। অতএবের সাথে যে যত বেশি সম্পৃক্ত হবে তত বেশি তার জীবন কি হবে বরকতময় হয়ে যাবে। নবী আলাইহিসসালাতু আসসালাম বলেছেন সহিহ মুসলিমের হাদিসে আল্লাহতা’য়ালা এই কিতার দিয়ে বহু মানুষকে উপরে উঠাবেন আবার বহু মানুষকে নিচে নামাবেন। অর্থাৎ এই কিতাব কোরআন এটাকে যারা ফলো করবে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদা বাড়াবেন, আর যারা ফলো করবে না তাদের মর্যাদা কমাবেন। বাহ্যিকভাবে মনে হবে সুখের সাগরে ভাসছে আসলে দুঃখের কোন অন্ত তাদের জীবনে থাকবে না। তাহলে বরকতের তিন নম্বর চাবি হলো কি কোরআনের সাথে সম্পর্ক বেশি বেশি করা। কোরআন তেলাওয়াত করা, কোরআন বুঝা, কোরআন অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করা, যত বেশি যে করবে আল্লাহ তা'আলা তার জীবনের প্রতিটা পদে পদে তত বেশি বেশি কি দিবেন? বরকত দান করবেন।

বরকতের চার নম্বর যে চাবি আছে সেটা হল ভাই সদকা করা, দান করা। কি করা? দান করা, সদকা করা। সদকা এবং দান করলে বহু হাদিস থেকে বুঝা যায় জানা যায়, যে বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়। আমাদের যেকোনো কাজ থেকে, যে কোন অর্থ-কড়ি থেকে, যেকোন উপার্জন থেকে আমাদের কল্যাণটা আসে না, এর একটা বড় কারণ হলো বিপদ এসে যায়। আমি এটা দোকান থেকে শুরু করলাম একটা বিপদ এসে গেল। তাহলে আমার সেখান থেকে কল্যাণটা আর আসলো না। তো বরকত যদি আপনি চান প্রত্যেকটা বস্তুতে, প্রত্যেকটা জিনিসের কল্যাণ আসুক, উপকার হোক, জিনিসটা আপনার জন্যে অল্প-ছোট চাকরি, অল্প আয়, ছোট ব্যবসা এর ভিতরেই আল্লাহতালা কল্যাণ দিয়ে দিক, আপনি যদি চান তাহলে আপনার কি করতে হবে? সাদকার অভ্যাস করতে হবে, দান দান। দান করলে মুসিবত এবং বিপদ দূর হয়। তো আপনার ওই অল্প আয় থেকে যখন বিপদ দূর হয়ে যাবে, বা বিপদ মুক্ত থাকবে, তখন ইনশাআল্লাহ বিদনিল্লাহ আপনার জন্যে কি হয়ে যাবে? কল্যাণকর এবং বরকতময় হয়ে যাবে। ওর ভিতরে আপনার জন্য বরকত থাকবে। অতএব সদকার অভ্যাস করা, সারা বছর অল্প-স্বল্প হলেও পরিমানে খুব অল্প হোক, এক হাদীসে আসছে নবী আলাইহিসসালাতু আসসালাম বলেছেন- খেজুরের অংশ ‍দিয়ে হলেও তবুও তুমি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করো। বিপদ থেকে রক্ষার জন্য আমরা সাধ্য অনুযায়ী সাদকা করব। অনেক বেশি করা কোন জরুরী না, প্রতিদিন সদকা করা একটা জটিল বিষয়। এমনকি প্রতিদিন আমি অভাবী লোক পাইও না। তাহলে একটা বাক্স রাখতে পারি বাসায়, যে প্রতিদিন আমি সেখানে একটা টাকা রাখবো, দুইটা টাকা রাখবো, যতটুকু সাধ্যে কুলায় ততটুকু রাখব। তাহলে নিয়মিত আমি দানের সওয়াবটা পেয়ে গেলাম। এই টাকাটা অভাবী লোকের। পরে কয়দিন পরপর খুলে আমি দিয়ে দিলাম মানুষকে। তাহলে প্রতিদিন সদকার আমলটা হয়ে গেল এবং সদকা নিয়মিত করলে কি হয়? বরকত প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে নেমে আসে।

নাম্বার পাঁচ, বরকতের পাঁচ নম্বর চাবিটা হলো ভাই, আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা। এটা বহুল পরিক্ষিত একটি আমল ভাই। আত্মীয় স্বজনের সাথে যে যত বেশি সম্পর্ক ভালো রাখে, মা-বা, ভাই-বোন, ফুফু, চাচা, কাছের লোকজন, রক্ত সম্পর্কীয় লোক, যারা বিশেষ করে তাদের সাথে যে যত বেশি সম্পর্ক ভালো রাখে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক কে নষ্ট করে না, তারা যদি দুর্ব্যবহার করে তো নিজের পক্ষ থেকে ভালো বার করার চেষ্টা করে। তো এই লোকের জীবনে আল্লাহ তাআলা বরকত দান করেন। এটা পরীক্ষিত বিষয়। অতএব এই চাবিটি বরকতের। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ নম্বর, অর্থাৎ আত্মীয় স্বজনের সাথে রক্ত সম্পর্কীয় লোকদের সাথে কি করতে হবে? সম্পর্ক সব সময় বিল্ড আপ করার চেষ্টা করতে হবে। তাদের খোঁজখবর নিতে হবে। সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাড়াতে হবে। যদি পাশে দাড়াইতে নাও পারেন অন্তত সম্পর্কটাকে কি করতে হবে? ভালো রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে।

নাম্বার ছয়, বরকতের ছয় নম্বর চাবি হলো ভাই, সকালবেলা ভোরে ভোরে কাজে যাওয়া। নবী আলাইহিসসালাতু আসসালাম দোয়া করেছেন আল্লাহ আমার উম্মতকে সকালবেলা আপনি বরকত দান করবেন। অন্য এক রেওয়ায়েতে আসছে তিনি বলেছেন আমার উম্মতের জন্য সকাল বেলা সময়টাতে বরকত দেওয়া হয়েছে। অতএব সকালের সময়টাতে যদি আপনে ঘুমায় থাকেন তাহলে বরকত কোত্থেকে আসবে। এই টাইমটাতে কাজ করতে হবে এবং কিছু কিছু কাজ আছে কিছু কিছু পেশা আছে যে সকাল বেলা করার মতো না। আপনার মার্কেটে দোকান আছে, সকালে ভোরে খোলার সিস্টেম নাই। তাহলে সেটাতো আপনি খুলবেন না কিন্তু অন্তত তার প্রস্তুতি প্রাকপ্রস্তুতি গুলো সকাল থেকে হয়ে যাওয়া উচিত। এবং সকালের টাইমটা আসলে ঘুমের কোন উপযুক্ত টাইম না। আপনি রাতে ভাল করে ঘুমান, বেশি করে ঘুমান, সকালে ঘুমাবেন না। দুপুরে ঘুমান কিন্তু সকালে ঘুম এটা কোন প্রশংসনীয় ঘুম নয়। স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়, ইসলামের দৃষ্টিতেও খুব বেশি প্রশংসনীয় নয়। এজন্য সকাল বেলা যদি কাজে বের হওয়া যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ জীবনে কি আসবে? বরকত আসবে। যে কাজই করেন আপনি সকালবেলা, সেই কাজে আল্লাহতায়া’লা কি দিবেন বরকত দান করবেন।

নাম্বার সাত, বরকতের সাত নম্বর চাবি হলো ভাই, নিজে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে এবং পরিবারের লোকদেরকে সালাতের নির্দেশ করতে হবে। বহু লোক নিজে নামাজ পড়ে কিন্তু বাচ্চা-কাচ্চা ফ্যামিলির লোকজন তারা নামাজ পড়ছে কিনা সেই বিষয়ে কোনো খবর রাখে না। আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালা কোরআনে কারিমের ভেতরে বলেছেন তুমি তোমার পরিবারকে নামাজের নির্দেশ করো। নিজে তো পড়তেই হবে পরিবারকেও নির্দেশ কর। এবং এটার উপর অটল থাকো। ধরে রাখো এটাকে, তাহলে কি হবে? আমি তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহ বলছেন আমি তোমাদের কাছ থেকে রিজিক চাই না বরং এ কাজ করলে, আমল করলে আমি তোমাদেরকে রিযিক দেব। বরকত চলে আসবে ইনশাআল্লাহ। নামাজ নিজে পড়তে হবে এবং পরিবারকে নামাজের নির্দেশ করতে হবে।

নাম্বার আট, বরকতের আট নম্বর চাবি হলো ভাই তাওয়াক্কুল করা আল্লাহর উপরে। আল্লাহর উপর ভরসা করা। মুমিন যত বেশি আল্লাহর উপর ভরসা করবে আল্লাহতায়া’লা তত বেশি তাকে সাহায্য করবে। আর আল্লাহর প্রতি ভরসা যত কমে যাবে, আস্থা যত কমে যাবে, নির্ভরতা যত কমে যাবে, দুনিয়ার কোন বস্তুর প্রতি যখন আস্থা বেশি হয়ে যাবে, আল্লাহতায়া’লা তাকে ঐ বস্তুর হাতেই বেইজ্জত করে ছাড়েন। এটাই আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার সুন্নাহ। যার কারণে আল্লাহর প্রতি যে যত বেশি তাওয়াক্কুল করে আল্লাহতালা তাকে তত বেশি উদ্ধার করেন এবং সাহায্য করেন। বরকতের জন্যে এটা একটা অন্যতম উপায়। যে যত বেশি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, বিশেষ করে রিজিকের ব্যাপারে, তত বেশি আল্লাহ সুবাহানাল্লাহুতায়ালার পক্ষ থেকে কি আসবে? বরকত আসবে। একটু কোন কারণে আমাদের ইনকামের উপরে চাপ আসলে প্রেসার আসলে আমরা অস্থির হয়ে যাই, হা-হতাশ হয়ে যাই, নিরাশ হয়ে যাযই, অনেকে তো আজেবাজে মন্তব্য করা শুরু করি। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল থাকে না। তো আসবে কোত্থেকে রিজিক, রিজিক আসবে তখন যদি আল্লাহর উপর ভরসাটা পূর্ণমাত্রায় থাকে। নবী আলাইহিসসালাতু আসসালাম বলেছেন “আল্লাহর প্রতি যে রকম ভরসা রাখা দরকার যে রকম আস্থা রাখা দরকার তোমরা যদি সেই মাপের আস্থা রাখতে পারো নির্ভরতা আল্লাহর উপরে তোমরা রাখতে পারো” তাহলে কি হবে আলাহতায়া’লা পাখিকে যেভাবে রিজিক দেন তোমাদেরকে সেভাবে রিজিক দিবেন। সারপ্রাইজ রিযিক, কল্পনাও করতে পারবেন যদি কোথায় আলাহ রিজিকু দিয়ে রাখছেন। এরকম বরকত জীবনে নেমে আসবে, যদি কি করা হয়? আল্লাহর উপরে পরিপূর্ণ এই তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা হয়।

বরকতের জন্য নয় নম্বর আমল হলো, বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। কি করা ভাই? ইস্তেগফার করা, ইস্তেগফার। উঠতে,চলতে,ফিরতে সব সময় ইস্তেগফার করা অথবা সাইয়িদ্যুল ইসতেগফার করা। কিছু না পারেন শুধু আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া। আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াতুবু ইলাইক এতটুকু পড়া। এবং যখন পড়বেন অর্থ বুঝে পড়বেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন আপনি, আর ক্ষমা চাইলে ক্ষমা চাওয়ার মুড থাকে আলাদা, একটা মানুষের কাছে যখন মাফ চান আপনি, তখন মাফ চাওয়ার মুড ভিন্ন থাকে না? আস্তাগফিরুল্লাহ যখন বলবো তখন নিজের অপরাধের কথা স্মরণ করে অথবা আমি যে বহু অপরাধ করি সে কথাটা মনে করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। যত বেশি ইস্তেগফার করব তত বেশি রিজিক আসবে, সূরা নুহ’ এর ভিতরে আল্লাহতায়া’লা আল্লাহর নবী নুহ(আঃ) সম্পর্কে বলেছেন-যে নুহ(আঃ) বলেছেন, তার জাতিকে “তিনি বলেন আমি আমার জাতিকে বলেছিলাম তোমরা তোমাদের রবের ইস্তেগফার করো তোমাদের রব ক্ষমাশীল”। তাহলে কি হবে ইস্তেগফার করলে? এক নম্বর তিনি ক্ষমা করবেন। তার পরে সম্পদ এবং সন্তান-পরিবার এই দুটি দিয়ে তোমাদের শক্তিশালী করবেন। রিচ করে দিবেন সমৃদ্ধ করে ‍দিবেন। তোমাদের জন্য বাগবাগিচা দিবেন এবং নহর প্রশমন দান করবেন অর্থাৎ রুজি রুটির বরকত দান করবেন। সম্মানিত ভাই বন্ধুগণ, তাহলে ইস্তেগফার করলে রুটি রুজির বরকত হয়, সম্পদে আপনার বরকত হয়, সন্তানের বরকত হয়, পরিবারে বরকত হয় অতএব ইস্তেগফার বেশি বেশি করতে থাকতে হবে। নবী আলাইহিসসালাতু আসসালাম বলেছেন “যে ব্যাক্তি ইস্তেগফারকে ধরে রাখবে সবসময় নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, “সকল কঠিন মুহূর্ত থেকে বের হওয়ার জন্য আল্লাহতায়া’লা তাকে পথ দেখিয়ে দিবেন”। “সকল পেরেশানি থেকে তাকে প্রশস্ততার পথ দেখিয়ে ‍দিবেন”। যদি সে ইস্তেগফার কে ধরে রাখে, এক দুইবার পড়া না নিয়মিত পড়তে থাকে, ধরে রাখে। অতএব বরকতের জন্য বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে হবে।

দশ নম্বর বরকতের চাবি হলো ভাই, পরিপূর্ণ সালামের ব্যাপক পরিমানে প্রচলন ঘটাতে হবে। দিতে হবে। সালামের পরিপূর্ণরূপ “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু”। এখানে আমরা সবাই জানি দোয়া করা হয়, আপনার জন্যে শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক আল্লাহর বরকত নাযিল হোক আপনার প্রতি। তাহলে আপনি যখন কারো প্রতি সালাম দিচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ সালাম “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” তার মানে আপনি কেমন যেন তার জন্য বরকাত দোয়া করছেন শান্তির দোয়া করছেন, আর হাদিসে আসছে কোনো মুসলিমের জন্যে যদি আপনি বরকতের দোয়া করেন বা যেকোনো দোয়া করেন, তো ফেরেস্তা আপনার জন্য দোয়া করে, যে আল্লাহ এই বান্দাকেও আপনি দান করেন। তাছাড়া যাকে সালাম দিবেন তিনিও জবাব দিবেন, আপনি যেহেতু ওয়া বারাকাতুহু পর্যন্ত পড়বেন তার জন্য উচিত হবে ওয়া বারাকাতুহু পর্যন্ত দেওয়া। সালাম যতটুকু দেয় হয়, পরিপূর্ণ কমপক্ষে অতটুকু ‍দিতে হয়। অতএব যত বেশি সালাম দেওয়া হবে, তত বেশি ফেরেস্তা আমার জন্য বরকতের দোয়া করবে। আর যাকে সালাম দিচ্ছি, তিনিও করবেন। তাহলে সালামের প্রচলন যদি ব্যাপক পরিমানে যদি করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবনে কি আসবে ভাই? বরকত নেমে আসবে, আর আগেই বলেছি বরকতের অল্প বেবরকতের বহু চাইতে উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বরকতের সম্পদ দান করুক। অধিক সম্পদ নয়, বরকতের সম্পদ। আল্লাহ আমাদের বরকতের সন্তান দান করুক, অধিক সন্তান নয় বরকতের সন্তান কল্যাণ। কল্যাণ যে  সন্তানে আছে সেখানে, অনেক বেশি হলো কিন্তু কল্যাণ তার ভিতরে নাই, উপকারটা নাই, তাহলে এই বেশির কোনো লাভ হলো না।

আমাদের গোটা জীবনকে আমাদের উপার্জনকে, আমাদের সম্পদকে, আমাদের নেক আমলকে, আমাদের সন্তান-সন্ততিকে, আমাদের পরিবারকে, পরিজনকে, আমাদের চিন্তা চেতনাকে, আমাদের সবকিছুকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বরকতম করে দিন। সবকিছুতে আল্লাহতালা কল্যাণ এবং উপকারিতা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি করে দিক। জাযাকাল্লাহ।

- শায়খ আহমাদুল্লাহর আলোচনা অবলম্বনে

ভিডিও লিংক:

Navigation

[0] Message Index

Go to full version