Religion & Belief (Alor Pothay) > Islam & Science

ইসলাম ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে ঘুমের সময়কাল

(1/1)

Imrul Hasan Tusher:
ইসলাম ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে ঘুমের সময়কাল

পরিশ্রম মানুষকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে। দিনের কাজের দৌড়ঝাঁপে শরীর ভেঙে পড়ে। ক্লান্তি, ব্যথা ও মানসিক চাপ তারই প্রমাণ। এই নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের পর মানুষকে আবার কর্মক্ষম হতে কিছু সময়ের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।

এ লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য ঘুমের মতো এক বড় নিয়ামত দান করেছেন। ঘুমের মাধ্যমে আমাদের শরীর জীবাণুমুক্ত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো মেরামত হয় এবং আমরা পরের দিন নতুন করে কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করি। যদি কেউ পর্যাপ্ত না ঘুমায়, কম ঘুমায় বা শান্তিময় ঘুমের অভাব থাকে, তাহলে সে দ্রুত মানসিক ও শারীরিক রোগের শিকার হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি কেউ ১৭ থেকে ১৯ ঘণ্টা ধরে জেগে থাকে, তাহলে তার চিন্তা-ভাবনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা মদ্যপ অবস্থার সমান।

ঘুমের সঠিক সময়

শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক সময়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শরীরে একটি জৈবিক ঘড়ি (Biological Clock) আছে, যা দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারের ভিত্তিতে আমাদের শরীরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আমাদের শরীরকে সঠিক সময়ে ঘুমাতে, জাগতে এবং কাজের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

যখন আমরা ভিন্ন সময় অঞ্চলে যাই, তখন এই জৈবিক ঘড়ি আমাদের শরীরকে স্থানীয় সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

এই প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা বিশেষ প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন রাতে কম সক্রিয় থাকে এবং দিনে বেশি। যেমন—সকালের নাশতার পর আমরা কর্মচঞ্চল হই এবং রাতের খাবারের পর ক্লান্তি অনুভব করি—এটি এই জৈবিক ঘড়ির ফল।
তবে যদি এই প্রোটিনে কোনো বিঘ্ন ঘটে, তাহলে জৈবিক ঘড়ির কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমানো, রাতভর জেগে থাকা কিংবা এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে দ্রুত ভ্রমণের কারণে এই ঘড়ির কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

এর ফলে মানুষের মানসিকতা, চিন্তাধারা, আচরণ ও মনস্তত্ত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

রাতের ঘুম ও স্বাস্থ্যের প্রভাব

রাতে দীর্ঘ সময় কাজ করা ব্যক্তিদের প্রায়ই মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ রাতের বেলায় শরীরের জৈবিক ঘড়ি ঘুমের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে এবং তখন কর্মক্ষমতা কমে যায়। যারা রাতে ডিউটি করে, তারা দিনের বেলা ঘুমানোর চেষ্টা করলেও বাইরের আলো শরীরকে জাগ্রত রাখার সংকেত দেয়। ফলে তাদের ঘুম ঠিকমতো হয় না।

গবেষণা বলছে, রাতের শিফটে কাজ করা ৯৭ শতাংশ কর্মী কয়েক বছর কাজ করার পরও তাদের কাজের রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

(Gates, Jeffrey. Getting Melatonin Naturally. 1-3. Archives. NewCenturyNutrition.com. 12/24/01) শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে কর্মক্ষমতা ও শক্তি ফিরে আসে, যা আমাদের চঞ্চল ও সক্রিয় করে তোলে। কিন্তু যখন রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে আসে, তখন শরীরে অলসতা, ক্লান্তি ও ঘুমের ভাব সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে আমরা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এলে আমাদের জৈবিক ঘড়ি শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে।

(Hattar, Saad. G. Jordanian Scientist Determines Single Cell Could Control Bodz’s Internal Clock. Jordanian) আল্লাহ তাআলা কোরআনে এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন : ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পার। আর দিনকে তোমাদের দেখার উপযোগী করে বানিয়েছেন। নিশ্চয়ই এতে সেই সব লোকের জন্য বহু নিদর্শন আছে, যারা লক্ষ করে শোনে।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬৭)

তাই নবীজি (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, এশার নামাজের পর অনর্থক জাগ্রত থাকার পরিবর্তে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত। এশার নামাজ দিনের শেষ ইবাদত, আর এ সময় দিনের কাজকর্ম শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়া শ্রেয়।

Source: https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2025/02/07/1477750


Navigation

[0] Message Index

Go to full version