জমির পুরাতন দলিল হারিয়ে গেছে? জেনে নিন বের করার সহজ উপায়!
জমি সংক্রান্ত যেকোনো বিরোধ মেটাতে পুরোনো দলিলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু নানা কারণে ২০-৩০ বছর বা তারও বেশি পুরোনো গুরুত্বপূর্ণ দলিল অনেক সময় হারিয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায় বা নথিপত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে দলিল পুনরুদ্ধার করা যায়, সেই বিষয়ে আইনি পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমির হামজা লিমন।
সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় অ্যাডভোকেট হামজা জানান, দলিল হারিয়ে গেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করে রেকর্ড থেকে তা সহজেই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
আইনজীবী মো. আমির হামজা লিমন বলেন, দলিল খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করতে হবে।
দলিল নম্বর জানা থাকলে: আবেদন করার সময় দলিল নম্বর জানা থাকলে তল্লাশি অনেক সহজ হয়।
দলিল নম্বর জানা না থাকলে: নম্বর জানা না থাকলেও কিছু আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তল্লাশি চালানো সম্ভব। এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির খতিয়ান, ট্যাক্স রসিদ বা সংশ্লিষ্ট এলাকার নামজারির তথ্যাদি উপস্থাপন করতে হয়। পুরোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর মনে না থাকলে দলিলধারীর নাম, জমির ঠিকানা এবং আনুমানিক রেজিস্ট্রেশনের সাল দিয়েও খোঁজ চালানো যায়।
অ্যাডভোকেট হামজা বলেন, "দলিল হারানো মানেই সব শেষ নয়। সঠিক প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে পুরোনো দলিল পুনরুদ্ধার করা যায়।"
দলিল অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর বিধান অনুসরণ করা হয়:
পরিদর্শন ও নকল: আইনের ৫৭(১) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত ফি পরিশোধ সাপেক্ষে যেকোনো ব্যক্তি স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত রেজিস্টার বহি (১ নম্বর ও ২ নম্বর) এবং সংশ্লিষ্ট সূচিবহি পরিদর্শন করতে পারেন।
সার্টিফায়েড কপি: ৫৭(৬) এবং ৬২ ধারায় বলা হয়েছে, এই পরিদর্শনের ভিত্তিতেই দলিলের সার্টিফায়েড কপি বা নকল সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। উইল দলিলের ক্ষেত্রে ৩ ও ৪ নম্বর বহির তথ্য খোঁজা যায়।
দলিল খুঁজে পাওয়ার জন্য সূচিপত্র ও রেজিস্টার বহি তল্লাশির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হয়।
একটি নির্দিষ্ট বছরের জন্য তল্লাশি ফি: ২০ টাকা।
অতিরিক্ত বছরের জন্য প্রতি বছর: ১৫ টাকা।
রেজিস্টার বহির প্রতিটি পৃষ্ঠা পরিদর্শনের ফি: ১০ টাকা।
তবে একটি নির্দিষ্ট নাম বা সম্পত্তি সংক্রান্ত ভুক্তির ক্ষেত্রে ফি’র সর্বোচ্চ সীমা ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আইনজীবী হামজা জানান, যদি আপনার কাছে মূল দলিলের শেষ পাতার উল্টো পৃষ্ঠার দলিল নম্বর, সাল এবং কোন রেজিস্টার বইয়ের কোন পাতায় সংরক্ষিত আছে—এই বিস্তারিত তথ্য থাকে, তবে সরাসরি রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিলের নকল পাওয়া যায় এবং এই ক্ষেত্রে তল্লাশির প্রয়োজন পড়ে না।
অন্যদিকে, যদি কোনো তথ্য না থাকে, তবে তল্লাশি আবশ্যক। এই ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি অফিসে থাকা ‘সূচিবহি’ (ক্রেতা-বিক্রেতার নাম বা মৌজার নাম অনুযায়ী জমির বিবরণ) নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে নিজে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে তল্লাশি করে কাঙ্ক্ষিত দলিলটি চিহ্নিত করা সম্ভব।
এছাড়াও, দলিলের নকল চাওয়ার আবেদনের সঙ্গে নিবন্ধিত মূল দলিল বা তার সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল করলে কোনো তল্লাশি ফি দিতে হয় না।
অ্যাডভোকেট আমির হামজা লিমনের মতে, সঠিক নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশি করলেই আইন অনুসারে যেকোনো বৈধ ব্যক্তি প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে পুরোনো দলিলের নকল তুলতে পারবেন।
Source:
https://www.dailyjanakantha.com/law/news/867837