তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। গত বৃহস্পতিবার প্রথমবার তাদের রমনা জোনে থ্রিজির মূল যন্ত্রপাতি সংযোজন করে অপারেটরটি। কিছু দিনের মধ্যে ঢাকা এবং গাজীপুরের মোট পাঁচটি সাইটে এই যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শেষ হবে।
রাজধানীর রমনার পর মগবাজার, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর এবং গাজীপুর সাইটের থ্রিজি নেটওয়ার্ক তৈরির যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ করা হবে। ইতিমধ্যে এসব সাইটের প্রযুক্তিগত জরিপ শেষ হয়েছে। প্রথম দফায় থ্রিজি সেবা চালু করার ক্ষেত্রে এই সাইটগুলো থেকেই আশপাশের সব বেস স্টেশনে সেবা দেওয়া যাবে। এই পাঁচটি সাইটের পর ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আরও কয়েকটি সাইট তৈরি করা হবে। সেক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে একাধিক সাইট হতে পারে।
থ্রিজির নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু হওয়া প্রসঙ্গে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান সমকালকে বলেন, যতদ্রুত সম্ভব গ্রাহকদের উন্নততর সেবা পেঁৗছে দিতে কাজ করছেন তারা। সেক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি গ্রাহকসেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে একটি জরিপ কাজ শুরু করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের চাহিদার বিষয়ে বিশেষ মনযোগ দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গ্রাহকদের চাহিদা জানতে অনলাইনে গ্রাহকদের মতামত নেওয়া হবে। টেলিটকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই এই মতামত চাওয়া হবে। তা ছাড়া যেসব গ্রাহকরা থ্রিজি সেবা নিতে আগ্রহী তাদের আগে থেকে নিবন্ধন করার মাধ্যমেও তাদের মতামত নেওয়া হবে। এর আগে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চায়না থেকে থ্রিজির যন্ত্রপাতি ঢাকায় আসছে। প্রতি ১৫ দিন পর পর একেক লট যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ঢাকায় আসবে বলে জানা গেছে।
মুজিবুর রহমান আরও বলেন, বছর কয়েক আগেও টেলিটকের অস্তিত্ব রক্ষাই ছিল চ্যালেঞ্জ। আর এখন গুণগত মানের দিকে তারা অনেক বেশি মনযোগ দিচ্ছেন। সে কারণে ঢাকায় বেস স্টেশনের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) নেটওয়ার্কের মানও আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
গত ২৬ মার্চ টেলিটকের থ্রিজি চালু করার ঘোষণা দেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। কিন্তু সে তারিখ ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। ব্যাংক ঋণ পেতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু করতেও বিলম্ব হয়েছে। আগস্টে থ্রিজির গ্রাহকসেবা চালু হতে পারে। তবে থ্রিজি চালুর ক্ষেত্রে এখনই সময়ের বাধ্যবাধকতায় যেতে চান না মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, অন্তত কয়েকটি সাইটের কাজ শেষ হলে পরীক্ষামূলক সেবা দেওয়া হবে সীমিত সংখ্যক গ্রাহককে। এরপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আসবে থ্রিজি।
এদিকে টেলিটক যখন তাদের প্রস্তুতি এতটাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তখন বেসরকারি অন্যান্য অপারেটরের জন্য থ্রিজির সেবা উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তাছাড়া কোনো কোনো অপারেটর থ্রিজির প্রতি অনাগ্রহও প্রকাশ করেছেন। এর আগে মার্চের শেষে থ্রিজির লাইসেন্স দিতে খসড়া নীতিমালা করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এই খসড়া নীতিমালা এখন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এই খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
টেলিটকের ব্যাংক হিসাব জব্দ : এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুরনো কিছু বকেয়া দেনা পরিশোধ না করায় টেলিটকের সব ব্যাংক হিসেব জব্দ করেছে। গত সপ্তাহে এই ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পর টেলিটক এনবিআরকে চিঠি দিয়ে খুব তাড়াতাড়িই হিসাবগুলো খুলে দেওয়া অনুরোধ জানিয়েছে। মুজিবুর রহমান আশা করেন, এই সপ্তাহেই হিসাবগুলো খুলে যাবে।