Entertainment & Discussions > Story, Article & Poetry

Rabindranath Tagore - Part-1

(1/1)

Sultan Mahmud Sujon:
1
চিত্ত পিপাসিত রে
গীতসুধার তরে ।।
তাপিত শুষ্কলতা বর্ষণ যাচে যথা
কাতর অন্তর মোর লুন্ঠিত ধূলি-’পরে
গীতসুধার তরে ।।
আজি বসন্তনিশা, আজি অনন্ত তৃষা,
আজি এ জাগ্রত প্রাণ তৃষিত চকোর-সমান
গীতসুধার তরে ।
চন্দ্র অতন্দ্র নভে জাগিছে সুপ্ত ভবে,
অন্তর বাহির আজি কাঁদে উদাস স্বরে
গীতসুধার তরে ।।



আমার মনের মাঝে যে গান বাজে শুনতে কি পাও গো
আমার চোখের ’পরে আভাস দিয়ে যখনি যাও গো ।।
রবির কিরণ নেয় যে টানি ফুলের বুকের শিশিরখানি,
আমার প্রাণের সে গান তুমি তেমনি কি নাও গো ।।
আমার উদাস হৃদয় যখন আসে বাহির-পানে
আপনাকে যে দেয় ধরা সে সকলখানে ।
কচি পাতা প্রথম প্রাতে কী কথা কয় আলোর সাখে,
আমার মনের আপন কথা বলে যে তাও গো ।।



কাহার গলায় পরাবি গানের রতনহার,
তাই কি বীণায় লাগালি যতনে নূতন তার ।।
কানন পরেছে শ্যামল দুকূল, আমের শাখাতে নূতন মুকুল,
নবীনের মায়া করিল আকুল হিয়া তোমার ।।
যে কথা তোমার কোনোদিন আর হয় নি বলা
নাহি জানি কারে তাই বলিবারে করে উতলা !
দখিনপবনে বিহ্বলা ধরা কাকলিকূজনে হয়েছে মুখরা,
আজি নিখিলের বাণীমন্দিরে খুলেছে দ্বার ।।



যে ছায়ারে ধরব বলে করেছিলেম পণ
আজ সে মেনে নিল আমার গানেরই বন্ধন ।।
আকাশে যার পরশ মিলায় শরতমেঘের ক্ষণিক লীলায়
আপন সুরে আজ শুনি তার নূপুরগুঞ্জন ।।
অলস দিনের হাওয়ায়
গন্ধখানি মেলে যেত গোপন আসা-যাওয়ায় ।
আজ শরতের ছায়ানটে মোর রাগিণীর মিলন ঘটে,
সেই মিলনের তালে তালে বাজায় সে কঙ্কণ ।।



গানগুলি মোর শৈবালেরই দল–
ওরা বন্যাধারায় পথ যে হারায়
উদ্দাম চঞ্চল ।।
ওরা কেনই আসে যায় বা চলে, অকারণের হাওয়ায় দোলে–
চিহ্ন কিছুই যায় না রেখে, পায় না কোনো ফল ।।
ওদের সাধন তো নাই, কিছু সাধন তো নাই,
ওদের বাঁধন তো নাই, কোনো বাঁধন তো নাই ।
উদাস ওরা উদাস করে গৃহহারা পথের স্বরে,
ভুলে-যাওয়ার স্রোতের ’পরে করে টলোমল ।।



তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া ।
বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক’
ওগো দুখজাগানিয়া ।।
এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,
তরী এল তীরে–
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো দুখজাগানিয়া ।।
আমার কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাধারার দোলা তুমি থামতে দিলে না যে ।
আমায় পরশ ক’রে প্রাণ সুধায় ভ’রে
তুমি যাও যে সরে–
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো দুখজাগানিয়া ।।



গানের ডালি ভরে দে গো ঊষার কোলে–
আয় গো তোরা, আয় গো তোরা, আয় গো চলে ।।
চাঁপার কলি চাঁপার গাছে সুরের আশায় চেয়ে আছে,
কান পেতেছে নতুন পাতা গাইবি ব’লে ।।
কমলবরণ গগন-মাঝে
কমলচরণ ওই বিরাজে ।
ওইখানে তোর সুর ভেসে যাক, নবীন প্রাণের ওই দেশে যাক,
ওই যেখানে সোনার আলোয় দুয়ার খোলে ।।



ওরে আমার হৃদয় আমার, কখন তোরে প্রভাতকালে
দীপের মতো গানের স্রোতে কে ভাসালে ।।
যেন রে তুই হঠাৎ বেঁকে শুকনো ডাঙায় যাস নে ঠেকে,
জড়াস নে শৈবালের জালে ।।
তীর যে হোথায় স্থির রয়েছে, ঘরের প্রদীপ সেই জ্বালালো–
অচল রহে তাহার আলো ।
গানের প্রদীপ তুই যে গানে চলবি ছুটে অকূল-পানে
চপল ঢেউয়ের আকুল তালে ।।



কাল রাতের বেলা গান এলো মোর মনে,
তখন তুমি ছিলে না মোর সনে ।।
যে কথাটি বলব তোমায় ব’লে কাটল জীবন নীরব চোখের জলে
সেই কথাটি সুরের হোমানলে উঠল জ্বলে একটি আঁধার ক্ষণে–
তখন তুমি ছিলেনা মোর সনে ।।
ভেবেছিলেম আজকে সকাল হলে
সেই কথাটি তোমায় যাব বলে ।
ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে, পাখির গানে আকাশ গেল পূরে,
সেই কথাটি লাগল না সেই সুরে যতই প্রয়াস করি পরানপণে–
যখন তুমি আছ আমার সনে ।।

১০

মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই ।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই ।।
চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি
তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই–
তাই অকারণে গান গাই ।।
ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে–
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে ।
ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,
যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই–
তাই অকারণে গান গাই ।।


Rabindranath Tagore - Part-2

Rabindranath Tagore - Part-3

Navigation

[0] Message Index

Go to full version