এর্নেস্তো "চে" গুয়েভারা ছিলেন একজন আর্জেন্টিনীয় মার্ক্সবাদী, বিপ্লবী, চিকিত্সক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব।
তরুণ বয়সে ডাক্তারি ছাত্র হিসেবে চে সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। এই সময় এই সব অঞ্চলের সর্বব্যাপী দারিদ্র্য তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। এই ভ্রমণকালে তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই অঞ্চলে বদ্ধমূল অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বাভাবিক কারণ হল একচেটিয়া পুঁজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ; এবং এর একমাত্র সমাধান হল বিশ্ব বিপ্লব। এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে চে রাষ্ট্রপতি জাকোবো আরবেনজ গুজমানের নেতৃত্বাধীন গুয়াতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৪ সালে মার্কিন-মদতপুষ্ট কিউবান একনায়ক ফুলজেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করার জন্য গ্রানমায় চড়ে সমুদ্রপথে কিউবায় প্রবেশ করেন। অনতিবিলম্বেই চে বিপ্লবী সংঘের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। কিউবার বিপ্লবের পর চে নতুন সমাজতান্ত্রিক সরকারে একাধিক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বিশিষ্ট ডায়েরি-লেখক চে গেরিলা যুদ্ধের উপর একটি প্রভাবশালী ম্যানুয়েল রচনা করেন। তরুণ বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোটরসাইকেলে ভ্রমণের স্মৃতিকথাটিও তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় রচনা। বৃহত্তর বিপ্লবে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৬৫ সালে কিউবা ত্যাগ করেন। প্রথমে কঙ্গো-কিনসহাসায় তাঁর বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি বলিভিয়ায় বিপ্লবে অংশ নেন। এখানেই সিআইএ-মদতপুষ্ট বলিভিয়ান সেনার হাতে বন্দী ও নিহত হন চে। তারিখ হল ৯ অক্টোবর, ১৯৬৭।
যে তাঁকে হত্যা করতে এসেছিল, তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কি আমাকে হত্যা করতে এসেছ?’ হত্যাকারীর হ্যাঁ-সূচক জবাবের উত্তরে তিনি তাকে এ কথাটাই বলেছিলেন—‘আমাকে মারতে পারো তবে তাতে বিপ্লবের মৃত্যু নেই।’
চে গুয়েভারা একাধারে ইতিহাসের এক নন্দিত ও নিন্দিত চরিত্র। তার প্রক্রিয়া বিতর্কিত হতে পারে কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল মহান - বিশ্বের সব নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অবলীলায় ত্যাগ করেছিলেন চে। নিজের দর্শন ও বিপ্লব প্রচারের ব্যাপারে তিনি ছিলেন একশত ভাগ সফল।