দেশের অন্যতম বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংকের টাওয়ার কিনছে একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় কুইপ্পো টেলিকম ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (কিউটিআইএল) সঙ্গে বাংলালিংকের ইতিমধ্যে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বাংলালিংকের ৫ হাজার ২০০ বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) কিনে নিতে কুইপ্পো ৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা (৩ হাজার কোটি ভারতীয় রুপি) দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
সূত্র জানায়, কুইপ্পো টেলিকম বাংলালিংকের বিটিএস কিনে তা অপারেটরদের কাছে ভাড়া দেবে। অপারেটরদের সূত্রগুলো জানান, পরিচালন ব্যয় হ্রাসের জন্য নেটওয়ার্ক টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা। বিশ্বের অন্য দেশগুলোয় এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটররা বিটিএস ভাড়া প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সেবা নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় কমার পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে ব্যয় কমাতেও এ ধরনের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে একই বিটিএস থেকে সেবা পেতে পারে একাধিক অপারেটর।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বলেন, বিটিআরসির অনুমতি না নিয়ে এই ধরনের উদ্যোগ কোন মোবাইল ফোন অপারেটর নিতে পারে না। নিলে ওই অপারেটরের লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে। বাংলালিংক এখনো তাদের কাছে বিটিএস বিক্রির অনুমতি চেয়ে কোন চিঠি দেয়নি। চিঠি পেলে বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি। কেউ আবেদন করলে বিটিআরসি কি সিদ্ধান্ত নেবে—এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়া আহমেদ বলেন, আবেদন করলেই তখন না সিদ্ধান্ত হবে। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চায় বিটিআরসি।
তবে বাংলালিংকের পরিচালক (গভর্নমেন্ট রিলেশন্স, রেগুলেটরি অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স) জাকিউল ইসলাম বলেন, ভারতীয় একটি পত্রিকায় এ ধরনের একটি রিপোর্ট তারা দেখেছেন। তাই আজ মঙ্গলবার বিটিআরসিতে একটি চিঠি দিয়ে বাংলালিংক নিজেদের অবস্থান জানাবে। তিনি বলেন, বাংলালিংক এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়নি। নিলে অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই করবে।
গত ১৫ জুন ভারতের ইকোনমিক টাইমসে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলালিংকের ৫ হাজার ২০০ বিটিএস কিনে নিতে কুইপ্পো ৩ হাজার কোটি ভারতীয় রুপি দেয়ার প্রস্তাব করেছে। ভারতের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো খাতের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান কুইপ্পো বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংকের টাওয়ার অধিগ্রহণ করে তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেবে ভিয়োম নেটওয়ার্কসকে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সে দেশের ১২২টি স্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটরের লাইসেন্স বাতিলের আদেশ দেন। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয় টাওয়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ভিয়োম নেটওয়ার্কস।
বিটিআরসি’র কাছে দেয়া হিসাব অনুযায়ী, গত এপ্রিল শেষে বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা আড়াই কোটির বেশি। সংখ্যার বিচারে এটি দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি—মার্চ) বাংলালিংকের গ্রাহক বেড়েছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। সিম ট্যাক্স কমানো, বন্ধ সিম চালুসহ আরও কিছু কর্মসূচির কারণে তাদের গ্রাহক বেড়েছে। এ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির আয় হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা।